ঢাবি ও ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ: যা ঘটেছিল উপউপাচার্যের কার্যালয়ে

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে 'অসৌজন্যমূলক' আচরণ করেছেন—এমন অভিযোগ তুলে রাস্তা অবরোধ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

গত ৫ জানুয়ারি সাত কলেজের বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপউপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। দাবির অগ্রগতি জানতে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী তার কার্যালয়ে যান। শিক্ষার্থীদের দাবি, উপউপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে 'অসৌজন্যমূলক' আচরণ করেন।

তবে অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি। তিনি তাদের বিশৃঙ্খলা ও ভিড় না করার কথা বলেছেন।'

উপপাচার্যের কার্যালয়ে আসলে কী ঘটেছিল, তা জানতে একটি ভিডিওর সাহায্য নেয় ডেইলি স্টার। ভিডিওটি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কেউ একজন ধারণ করেছিলেন। পরে ওয়াহিদুজ্জামান নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপে শেয়ার করা হয়।

দেড় মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যায়, উপউপাচার্য শিক্ষার্থীদেরকে বলেন তোমরা এখানে 'মব' তৈরি করতে পার না। (কিপ দিস ইন মাইন্ড। ইউ ক্যাননট ডু মবিং।) আমি তোমাদের বলেছি, আমার সঙ্গে দুজন প্রতিনিধি কথা বলতে আসতে। বলেছি? কেন বলেছি? কারণ আমি তোমাদের কথা শুনতে চাই। তোমাদের সমস্যা কী? তোমরা দলবল নিয়ে আমার রুমে ঢুকেছো। এবং আমাকে বলছ, আমি তোমাদের নাকি অস্বীকার করছি।'

তখন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা উপউপাচার্যকে বলেন, 'স্যার, আমরা এখানে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এসেছি। মাত্র দুজন প্রতিনিধি কথা বলতে পারি না।'

অধ্যাপক মামুন তখন শিক্ষার্থীদের থামিয়ে দিয়ে বলেন, 'প্লিজ! তোমাদের বক্তব্য আমাকে রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে বলবে। ওকে?'

তখন শিক্ষার্থীরা বলেন, 'অন্য কলেজগুলোতে মানবে না স্যার।'

এর জবাবে মামুন আহমেদ উত্তেজিত স্বরে বলেন, 'কোনো কলেজ যদি না মানে, দ্যাটস নট মাই বিজনেস। ওকে?'

তখন একজন নারী শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা কোনো মবিং করতে আসিনি। কিন্তু আপনি অ্যাগ্রেসিভ হয়ে যাচ্ছেন।'

তখন অধ্যাপক মামুন বলেন, 'অ্যাগ্রেসিভ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেন তোমরা বলছো যে, আমরা অস্বীকার করছি। প্লিজ কথা বলবে না। এর মানে কী?'

এর জবাবে ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, 'স্যার, হয়তো আমরা আপনাকে সঠিকভাবে বোঝাতে পারিনি। এটা ভুল বোঝাবুঝি। কিন্তু স্যার, আপনি যেভাবে অ্যাগ্রেসিভ হয়ে গেলেন, এই আচরণটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।'

তখন মামুন আহমেদ বলেন, 'অবশ্যই এটি গ্রহণযোগ্য আচরণ।'

এরপর শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়ে চলে আসেন। তারা উপউপাচার্যের পদত্যাগ ও ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন। সন্ধ্যা থেকে সায়েন্সল্যাব অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। এ সময়ের মধ্যে আন্দোলনকারী সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা উপউপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার আল্টিমেটাম দেন। কিন্তু ক্ষমা না চাওয়ায় তারা রাত সাড়ে ১০টার পর ঢাকা সায়েন্সল্যাব থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে এসে উপউপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে আসেন।

এ খবর জানার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ নীলক্ষেত মোড়ের কাছে স্যার এ এফ রহমান হল ও ভিসি চত্বরে অবস্থান নেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ দুই পক্ষের মাঝখানে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেয়। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের কাছে চলে এলে তাদের লাঠিসোঠা নিয়ে ধাওয়া দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ধাওয়া খেয়ে পিছু হটে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর লাঠি, ক্রিকেট স্টাম্পসহ আবার নীলক্ষেতের দিকে আসেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ অতিক্রম করে ক্যাম্পাসে ভেতরে প্রবেশ করলে পিছু হটে ভিসি চত্বর এলাকায় অবস্থান নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পাল্টা ধাওয়া দিয়ে নীলক্ষেত মোড় থেকে সরিয়ে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এভাবে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। পুলিশ পরিস্থিতি বুঝে দুই পক্ষের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে ছাত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এই উত্তেজনা চলে রাত ৩টা পর্যন্ত।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh RMG sector

RMG sector on edge as tariff talks make no headway

The diverging outcomes threaten to create a multi-tiered tariff landscape in Asia, placing nations like Bangladesh at a serious disadvantage in the US market.

11h ago