শাবিপ্রবির উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শপথ পড়ানো নিয়ে বিতর্ক, যা জানা গেল

স্টার ফাইল ফটো

গত বৃহস্পতিবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের শপথ পাঠ করানোর ঘটনায় দেশব্যাপি বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পৃথক বিবৃতিতে দাবি করেছে যে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের সময় শপথ পাঠ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন দায়িত্বে যোগদান করেন।

ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী নতুন উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। রাতে ওই বৈঠকের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যাতে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী পলাশ বখতিয়ার উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন।

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো. আবদুল কাদির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল-গালিবসহ অন্যান্যরা।

শপথবাক্যে বলা হয়, 'মহান সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া যে আমরা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি লাভ করেছি। আজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে যোগদানের মুহূর্তে ২৪ এর জুলাইয়ের সব শহীদদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। মহান জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে আমরা শপথ করছি যে, বিপ্লবী সরকার কর্তৃক যে দিকনির্দেশনা আমরা পেয়েছি এবং জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা এবং গবেষণা উন্নয়নে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সচেষ্ট থাকব। দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য আপসহীনভাবে নিয়োজিত থাকব। আমাদের বিদ্যা, গবেষণা সৎকাজের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাবিপ্রবি দেশের জনগণ এবং বিশ্ববাসীকে আলোর পথ দেখাতে যেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করব।'

শপথবাক্যের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে কীভাবে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের শপথ পাঠ করতে বাধ্য করতে পারেন, এ বিষয়টি নিয়ে।

বিতর্কের জের ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে একটি নোট শেয়ার করেছে, যাতে বলা হয়েছে যে শপথ অনুষ্ঠানটি শিক্ষকদের অসম্মান করার জন্য নয়।

আন্দোলনের যুগ্ম-সমন্বয়ক পলাশ বখতিয়ার নোটে বলেছেন, 'গতকাল নব-নিযুক্ত উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার স্যারের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জুলাই বিপ্লবের কথা স্মরণ করে আমরা অনেকে বক্তব্য দিই এবং তারই ফলশ্রুতিতে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটকে ধরে রাখতে স্যারদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে অনুরোধ করি। শিক্ষকরা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র, শিক্ষকদের অসম্মান হোক এটা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা স্যারদের কাছে এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও স্যারদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।'

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, 'এ পরিস্থিতির কারণে আমরা বিব্রত। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রেস নোট প্রকাশ করেছি।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো. আবদুল কাদিরের সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ যোগদান করার পর বিকেল ৩টায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে আনুমানিক ৪টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখা করতে আসলে তারা তাদের সঙ্গে  কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ পরিবেশটি হয়ে পরে শোকাবহ। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় হতাশা, দেশের চলমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তাদের উচ্চাশা ও নতুন প্রশাসন আসায় অতিমাত্রায় আবেগে আপ্লুত হয়ে জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে শাবি তথা দেশের জন্য কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ বাক্যগুলো সবার মুখে উচ্চারিত হয়েছে।

এটি কোনো শপথ অনুষ্ঠান ছিল না। ঘটনাটি যেভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে প্রকৃতপক্ষে এমনটি হয়নি। উল্লেখ্য, উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি স্যারদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছে এবং একই বিষয়ে ইতোমধ্যে তারা দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করে বিবৃতি দিয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Public Service Act: Ordinance out amid Secretariat protests

The government last night issued an ordinance allowing dismissal of public servants for administrative disruptions within 14 days and without departmental proceedings.

7h ago