৪ বছর পর তফসিল ঘোষণা করেও হলো না পাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন

পাবিপ্রবি

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) তফসিল ঘোষণার পরও শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সবশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর গত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে কোনো নির্বাচন করতে পারেনি শিক্ষক সমিতি।

গত ৪ সেপ্টেম্বর একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করার পর ১০ সেপ্টেম্বর তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, আজ রোববার নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল।

কিন্তু, তফসিল ঘোষণার দুই দিনের মাথায় ১২ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার আশরাফুল ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে 'অনিবার্য কারণ' দেখিয়ে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন।

তফসিল ঘোষণার পর হঠাৎ করেই নির্বাচন স্থগিত করা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

শিক্ষকদের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইঙ্গিতেই শিক্ষক সমিতির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

এতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং নির্বাচিত কমিটি না থাকায় বিভিন্ন সংকটে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোসহ মতামত প্রদান বাধাগ্রস্ত হবে বলেও মনে করছেন তারা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচনের আগে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আয়োজন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনাগ্রহের কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

গত ৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষক সমিতির এক সভায় নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলামকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে ৩ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।

নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে ১০ সেপ্টেম্বর তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। তফসিল অনুযায়ী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ, ২০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং ২৪ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের দুই তৃতীয়াংশের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় পাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক গণিত বিভাগের শিক্ষক ড. ফজলুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষক সমিতির নেতা নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'

তিনি বলেন, '২০১৯ সালে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এক বছর মেয়াদী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন গঠন করলেও সে সময় মহামারির কারণে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আর নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিটি না থাকায় শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সংবিধান অনুযায়ী একটি তলবি সভা আহ্বান করা হয়।'

তিনি জানান, তলবি সভায় অর্ধেকের বেশি শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষক সমিতি নির্বাচন ২০২৩ আয়োজন করতে ড. আশরাফুল ইসলামকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নির্বাচিত করে ৩ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী কমিশন ২৮ দিনের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবেন। তা না হলে নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, 'বিভিন্ন সংকটে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানো এবং বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকদের মতামত দেওয়ার জন্য নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছে।'

শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক আওয়াল কবির জয় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবেশের দোহাই দিয়ে নির্বাচন স্থগিত কাম্য নয়।'

যোগাযোগ করা হলে নির্বাচন কমিশনের প্রধান ড. আশরাফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিক্ষকদের মধ্যে নানা মতামত রয়েছে। সবাই একমত না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। উদ্ভূত পরিস্থিতে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত মনে না হওয়ায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ড. আশরাফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া কখনোই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।'

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে প্রক্টর ড. কামাল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিক্ষকদের নির্বাচন শিক্ষকদের ব্যাপার। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাধা দেয়ার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন কমিশন যখন উপযুক্ত সময় মনে করবে তখনই নির্বাচনের আয়জন করতে পারে।' 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করবে,' যোগ করেন তিনি।

নির্বাচন না হওয়ার বিষয়ে মন্তব্য জানতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হাফিজা খাতুনকে ফোন করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ দপ্তরে খোঁজ নিতে হবে।'

আজ রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপপরিচালক ফারুক হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিক্ষক সমিতির নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যাপার নয়। তাই এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।'

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands disclosure of power sector contracts

Disclose AL govt’s power, energy deals

The BNP yesterday demanded public disclosure of all the power and energy sector agreements made by the ousted Awami League government.

3h ago