হল জীবনের এপিঠ-ওপিঠ

ছবি: অর্কিড চাকমা

অরুণ ও বরুণ বাংলাদেশের দুটি ভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন। শুধু তাই নয়, তাদের সামাজিক অবস্থানও ভিন্ন।

তাদের নিজ নিজ জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বাবা-মা তাদেরকে সেখানেই ভর্তি হতে বলেছেন বারবার। তবে, তারা চেয়েছেন আরও বড় কিছু। তাদের প্রত্যাশা ছিল 'বড় ৪টি'র—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়—মধ্যে যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড শুধু পড়াশোনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই একটি অভিজ্ঞতা।

অরুণ ও বরুণ তাদের স্বপ্ন পূরণে যথাযথ পরিশ্রম করেন এবং সার্থকতাও পান। ২ জনই একই বিভাগে ভর্তি হন 'বড় ৪' বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতে।

ক্লাসের প্রথম দিনেই অরুণ ও বরুণের বন্ধুত্ব হয়। ক্লাসের পর সব শিক্ষার্থী একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে ক্যাফেটেরিয়াতে যায়। তাদের বন্ধু হতে বেশি সময় লাগেনি। এই মানুষগুলোকেই পরস্পর কাটিয়ে দেবে পরবর্তী প্রায় অর্ধ দশক।

এখন সময় হলে যাওয়ার।

হলে গিয়েই ২ বন্ধু বুঝতে পারে, চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে পার্থক্য ঠিক কতটা থাকে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত আবাসিক হল ছিল, পর্যাপ্ত সিটও ছিল। কিন্তু একাধিক ব্যাচ শেষবর্ষের পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকাসহ নানাবিধ কারণে তারা সিট পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদেরও উঠতে হয়েছে গণরুমে।

এখানেই গল্পের শুরু।

অরুণের বাবা-মা ধনী এবং সামাজিকভাবে প্রভাবশালী। বরুণের বাবা-মা আর্থিকভাবে সচ্ছল নয়। বরুণ কোনো আর্থিক সংকটে পরলে তার পাশে দাঁড়ায় অরুণ। বরুণ অরুণকে গ্রামের জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু শিখিয়েছিল।

তারা দুজনে জীবনের নতুন এক যাত্রায় পথ চলেছে পাশাপাশি। এই যাত্রায় তারা পার করেছে জীবনে অনিশ্চয়তা, বন্ধুদের দুর্ঘটনায় পড়া, হঠাৎ করে কোনো বন্ধুর বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর, বাংলাদেশের কোনো এক প্রান্তে কোনো এক বন্ধু বা তার পরিবারের কারো বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এবং এমনই আরও অনেক কিছু।

তাদের পুরো ক্লাসটাই ছিল একটি পরিবারের মতো। সেখানে নানা রকমের, নানা চিন্তার, নানা চেতনার, নানা অভিজ্ঞতার মানুষে ভরপুর। তারা একে অপরের কাছে শিখেছে, পরস্পর মানিয়ে নিয়েছে।

অরুণ ও বরুণের হলের জীবন ছিল বাকি সবার মতোই। তারা সেখানে থাকতে শিখেছে, অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে শিখেছে, দায়িত্বশীল হতে শিখেছে, সহানুভূতি অর্জন করতে শিখেছে। পরবর্তী জীবনের জন্য তারা কঠোর ও কোমল উভয়ই হতে শিখে গেছে।

এই অভিজ্ঞতার ভিন্ন দিকও আছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা হল জীবনের চাপ সামলাতে পারেনি, তাদের ভুগতে হয়েছে। এই সম্ভাবনাময় মানুষগুলোর মধ্যে অনেকেই পিছনে পড়ে গেছে।

যখন আমরা হল জীবন সম্পর্কে কথা বলি, তখন সেখানে মিষ্টি গল্প যেমন থাকে, তেমনি থাকে তিক্ত গল্পও। হল জীবনটা একজন মানুষের নিজেকে গড়ে তোলার পর্যাপ্ত সম্ভাবনাময় জীবন। সামান্য কিছু ভুল বা চাপ নিতে না পারার কারণে জীবনের সব আশা হারানোর গল্পও এখানে কম নেই। আমরা কেবল প্রত্যাশা করতে পারি, এমন পরিস্থিতিতে যেন কোনো না কোনো বন্ধু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে পাশে থাকে। দুর্ভাগ্যবশতও যেন কোনো শিক্ষার্থীকে পিছিয়ে পড়তে না হয়।

অধ্যাপক আসরার চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]; [email protected]

Comments

The Daily Star  | English

'Shoot directly': Hasina’s order and deadly aftermath

Months-long investigation by The Daily Star indicates state forces increased deployment of lethal weapons after the ousted PM authorised their use

12h ago