ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করায় ‘সুদিন’ ফিরেছে বুয়েট ক্যাম্পাসে

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার পর সেখানকার সার্বিক পরিবেশ, আবাসিক হলের সুযোগ-সুবিধা ও খাবারের মানে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

একইসঙ্গে এই নিষেধাজ্ঞার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে হেনস্তা ও র‌্যাগিং সংস্কৃতিও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। এরপর ১১ অক্টোবর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিচালিত 'ইউরিপোর্টার' নামের একটি ওয়েবপেজের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বুয়েটে অন্তত ১৬৬টি র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।

ওয়েবপেজের তথ্য বলছে, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুয়েটে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের হয়রানি, হেনস্তা, র‌্যাগিং বা ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে জোরপূর্বক অংশ নেওয়ানোর মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বুয়েটের চূড়ান্ত বর্ষের ১ শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হলের গেস্টরুমে ফ্রেশারদের ওপর নিয়মিত নির্যাতন চালানো হতো। অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের আচরণ বা কাজে ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতা বা কর্মীরা 'সন্তুষ্ট' ছিলেন না, তাদেরকেও এই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।'

ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য কীভাবে জোর দেওয়া হতো, তার বর্ণনা দিয়ে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'তাদের কথা মেনে চলা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না। কখনো কখনো দুপুরে ক্লাস থেকে ফিরে আসার পরপরই আমাদের তাদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে হতো। এমনকি যদি ১ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের কোনো ল্যাব পরীক্ষা থাকত, তাও যেতে হতো। অনেক সময় আমরা দুপুরের খাবার খেতে ও পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত নিতে পারতাম না।'

তবে, বর্তমানে র‌্যাগিংয়ের বিষয়ে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উভয়েই কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের এক সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী বলেন, 'হলগুলোতে এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। সিনিয়ররা আমাদের প্রতি বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করছে।'

শিক্ষার্থী ও হলের ডাইনিং সংশ্লিষ্টরা জানান, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার আগে ছাত্রলীগ নেতারা রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে হলের ম্যানেজার হয়ে উঠতেন। এই প্রক্রিয়ায় তারা অর্থের অপব্যবহার করত। যার ফলে খাবার ছিল নিম্নমানের।

তাদের দাবি, ওই সব ম্যানেজারদের কোনো ধরনের জবাবদিহি করতে হতো না। নির্যাতনের ভয়ে তখন কেউ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাননি।

হলের কয়েকজন কর্মী ও ক্যানটিন ম্যানেজার জানান, আগে তাদের উপার্জনের ১টি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ছাত্রলীগ কর্মীদের দিতে হতো। দিতে না চাইলে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো।

'ফলে এখান থেকে আমরা কোনো লাভ করতে পারিনি। যে কারণে খাবারের মান নিম্ন হয়ে গিয়েছিল', যোগ করেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্যানটিন ম্যানেজার বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা টাকা না দিয়েই ক্যানটিনে খাবার খেতেন।

'অনেক সময় অনেকে সিগারেট কিনতে ক্যানটিনের ক্যাশ থেকে টাকা নিতেন। সব মিলিয়ে আমরা অকল্পনীয় নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। এখন অবশেষে আমরা শান্তিতে আছি', বলেন আরেকটি ক্যানটিনের ম্যানেজার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও বলেছেন, ছাত্ররাজনীতির নিষিদ্ধ হওয়ার পর ক্যাম্পাসের অনেক অগ্রগতি হয়েছে, সামগ্রিক পরিবেশে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।

তারা বলেন, 'বুয়েটের অ্যাকাডেমিক ও সার্বিক পরিবেশ এখন অনেক ভালো। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাই এর অন্যতম প্রধান কারণ।'

এ বিষয়ে বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা স্পষ্ট যে সম্প্রতি ক্যাম্পাসে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন সম্প্রীতি বিরাজ করছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

6h ago