‘গুম ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন’

'গুম ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ‘গুম ও সাদা পোশাকে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ ও ছাত্র জনতার সমাবেশ’ শীর্ষক ওই সমাবেশের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। ছবি: স্টার

বিগত দিনে যারা গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন তাদের অবিলম্বে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় 'গুম ও সাদা পোশাকে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ ও ছাত্র জনতার সমাবেশ' শীর্ষক ওই সমাবেশের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতা সালেহ উদ্দিন সিফাতের সঞ্চালনা ও আখতার হুসাইনের সভাপতিত্বে ওই সমাবেশ থেকে ৩ দফা দাবি জানানো হয়।  দাবিগুলো হলো- গুমের শিকার নাগরিকদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে, সব রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে, জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে গুমের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। 

সমাবেশে বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ হওয়া কয়েকজন ছাত্রনেতা তাদের ওপর হওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দেন। সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতনের কয়েকদিন পর তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় বলেও জানান তারা। 

সমাবেশে মিনা আল আমিন নামে  এক ভুক্তভোগী নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, 'সম্প্রতি আপনারা যা জানছেন অনেক কম জানছেন। বাস্তবে চিত্র আরও ভয়াবহ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমিসহ আমার কয়েকজন বন্ধুকে তুলে নিয়ে গুম করা হয়। সেখানে কী হয় সেটা যাদেরকে ওখানে নেওয়া হয় তারা ছাড়া কেউ জানে না।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাকে একটা আবদ্ধ রুমে চোখ বন্ধ করে পেছনে দু'হাত বেঁধে রেখেছিল। খেতে দিত না। কিছুক্ষণ পর পর অমানবিক টর্চার চালাতো। কিছুক্ষণ টর্চার, কিছুক্ষণ রেস্ট। এভাবেই গেল পুরো সময়টা। রাতে চোখ বেঁধে গাড়িতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হতো। প্রায় ৩ দিন পর আমাকে মতিঝিল থানায় নিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।'

'গুম ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ‘গুম ও সাদা পোশাকে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ ও ছাত্র জনতার সমাবেশ’ শীর্ষক সমাবেশের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। ছবি: স্টার

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, 'এখানে গুমের যে কাহিনীগুলো শুনলাম, তাতে বোঝা যায় পুলিশী নির্যাতন থেকে তাদের শরীরের কোনো জায়গা রেহাই পায় নাই। আজকে সকল বিরোধী দলকে ঘোষণা দিতে হবে, আপনারা যদি এটা বন্ধ না করেন আপনাদের প্রত্যেকটা পুলিশের বিচার হবে। যারা গুমের শিকার হয়েছেন, যারা অত্যাচারিত হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।' 

সরকারের দূর্নীতির চিত্র তুলে ধরে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, 'আজকে গণপরিবহনে ভাড়াও বাড়তো না, দ্রব্যের মূল্যও বাড়তো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এয়ারকন্ডিশন না চালাতে বলেছেন কিন্তু ওনার বাসায় কয়টা এয়ারকন্ডিশন চলে সেই তথ্য তিনি দেন নাই।'

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে জাফরুল্লাহ বলেন, 'সপ্তাহে ১ দিন প্রাইভেট গাড়ি বন্ধ রাখেন, জ্বালানি সঙ্কট কমে আসবে। কৃষককে ভর্তুকি দেন, দ্রব্যমূল্য কমে আসবে।'

সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। 

ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার সভাপতি আখতার হোসাইন বলেন, 'আজকের এই কর্মসূচি ঘোষণা করার পর গতকাল আমার বাড়িতে পুলিশ গিয়ে হয়রানি করেছে‍। কয়েকবার আমার বাড়িতে পুলিশ গিয়ে আমার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিচ্ছে। কিন্তু আমরা দমে যাই নি‍।'

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন 'রাষ্ট্রচিন্তা'র সংগঠক দিদারুল আলম ভূঁইয়া ও ছাত্র ফেডারেশন নেতা আরমানুল হক‍। 

এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক এএসএম নাসিরুদ্দিন এলান, সু্প্রিমকোর্টের আইনজীবী কাজী মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সারা হোসেনসহ  বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এতে সংহতি জানান।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

BNP struggles to rein in the rogues

Over the past 11 months, 349 incidents of political violence took place across the country, BNP and its affiliated organisations were linked to 323 of these

9h ago