বিদেশে পড়তে গেলে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়

বিদেশ পড়তে গেলে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়
ছবি: সংগৃহীত

কথায় আছে, 'নো পেইন, নো গেইন।' অর্থাৎ, কিছু পেতে গেলে, কিছু ছাড় দিতে হয়। ঠিক যেমন বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন পূরণে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। জীবনে বড় হতে গেলে এসব সমস্যার সমাধান বের করতে হবে নিজেকেই। 

আপনার বিদেশে অধ্যয়নের যাত্রা সহজ করতে ঠিক এমনই ৬টি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় থাকছে আজকের আয়োজনে। 

ভাষা না জানা 

বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই নিজস্ব ভাষা আছে। দেশের নাগরিকরা সাধারণত ইংরেজির চেয়ে নিজেদের ভাষায় কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাই যে দেশে পড়তে যাবেন সেখানকার আঞ্চলিক ভাষা না জানলে যোগাযোগ করতে প্রথম দিকে বেগ পেতে হবে। তবে সবচেয়ে ভালো দিক হলো পড়াশোনার সব কার্যক্রম ইংরেজি ভাষাতেই হয়ে থাকে। তাই এ ক্ষেত্রে তেমন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে না। কিন্তু স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে শব্দের অর্থ ভিন্ন হতে পারে বিষয়টি মনে রাখতে হবে। সময়ের সঙ্গে আপনিও অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। 

এ ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে এবং স্পষ্টভাবে কথা বলতে হবে। সমবয়সীদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে হবে। ভাষার মৌলিক বিষয়গুলো শেখার চেষ্টা করতে হবে। ভিডিও বা সিনেমা হল বিনোদনের পাশাপাশি হতে পারে নতুন ভাষা শেখার উপায়। আঞ্চলিক ভাষার পডকাস্ট শুনলেও কাজে আসবে। 

পরিবার থেকে দূরে থাকা 

বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পরিবার থেকে দূরে থাকা। প্রথম দিকে নতুন দেশের অভিজ্ঞতা পাওয়ার আনন্দে খুব একটা কষ্ট হয় না। তবে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের ছেড়ে অন্য দেশে থাকতে গিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিষণ্ণতায় ভুগে দিনের পর দিন। এতে পড়াশোনার ক্ষতি হয় বেশি। 

তাই নতুন পরিবেশে নিজেকে অভ্যস্ত করতে হবে। দেশে থাকলে কী কী সুবিধা পাওয়া সম্ভব হতো না তা নিয়ে ভাবলে বিষন্নতা দূর হতে পারে।
ব্যস্ত থাকতে হবে পড়াশোনা নিয়ে এবং কীভাবে নতুন নতুন জিনিসের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় সে সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে।

প্রতিকূল আবহাওয়া

আপনি যে দেশে পড়তে যাচ্ছেন সেখানকার আবহাওয়া কেমন তা নিশ্চয়ই জানা আছে। বেশিরভাগ দেশেই অত্যধিক শীত থাকে সারাবছর। সে ক্ষেত্রে নাতিশীতোষ্ণ দেশ থেকে প্রথমবার বাইরে গেলে অস্বস্তি হওয়া স্বাভাবিক। কখনো কখনো ঝড়, ভারী তুষারপাতের মতো প্রতিকূল আবহাওয়াও দেখা দিতে পারে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, জাপান, মেক্সিকো এবং কানাডার মতো অনেক দেশ আর্কটিক ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য কিছুটা মানসিক চাপ দেখা দিতে পারে। 

এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পোশাক দেশ থেকে নিয়ে যেতে পারেন কিংবা বিদেশে গিয়েও কিনে নিতে পারেন। শারীরিক সুস্থতার জন্য খাপ খাইয়ে নেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। বিদেশে যাওয়ার পর আবহাওয়া সংক্রান্ত পূর্বাভাসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিরূপ অবস্থা সৃষ্টি হলে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরতে হবে।  

নিজেকে বহিরাগত মনে হওয়া

নতুন জায়গায় গেলে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করাটা অনেক সময় সহজ নাও হতে পারে। কারও সঙ্গে পরিচিত হতে গেলে সে কী ভাববে, কথা বলতে ইচ্ছুক হবে কি না ইত্যাদি মনে হতে পারে। পরিবার থেকে দূরে থাকায় এবং নতুন কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে দ্বিধা করলে আরও একা লাগে, নিজেকে বহিরাগত মনে হয়। 

বহিরাগত যাতে মনে না হয় এজন্য যে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক গড়ে তোলা যাবে না। নিজেকে সময় দিতে হবে মানুষ বোঝার জন্য। সহপাঠীদের সঙ্গে তাদের সংস্কৃতির বিষয়ে জানতে হবে। ক্যাম্পাসের ক্লাবে যুক্ত হলে ভালো হয়। আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখতে হবে। এসব করতে গিয়ে ভালো বন্ধুর সন্ধান পেতেও পারেন। 

ব্যক্তিগত কাজ সামলানো

বিদেশে পড়তে গেলে পড়াশোনা থেকে শুরু করে নিজের যাবতীয় কাজ নিজেকেই করতে হয়। দিনের শুরুতে রান্না করা, ঘর গোছানো, কাপড় ধোয়া থেকে ক্লাস করা, পার্ট টাইম কাজে যাওয়া, অ্যাসাইনমেন্টসহ সব সামলাতে হয়। মাঝেমাঝে নিজেকে বেশ এলোমেলো লাগতে পারে। সত্যি বলতে, বিদেশে পড়াশোনা করা তখন সবচেয়ে কঠিন মনে হবে। 

এ জন্য প্রতিদিনের কাজের একটা রুটিন করতে হবে। একসঙ্গে সব কাজ জমিয়ে না রেখে সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে করে ফেলতে হবে। 
যেসব কাজ পরের দিন করতেই হবে তা স্টিকি নোটে লিখে রাখতে পারেন।  

ভিন্ন পদ্ধতিতে পড়াশোনা

বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা কেবল ক্লাসরুমে সীমাবদ্ধ থাকে না। ক্লাসের পাশাপাশি গবেষণা, লাইভ প্রজেক্ট, রেফারেন্স খোঁজার জন্য লাইব্রেরিতে দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়। আবার অন-দ্য-গ্রাউন্ড প্রজেক্ট, ইন্টার্নশিপও করতে হয়। 

এ কারণে প্রথম থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে। পড়া না বুঝলে সহপাঠী বা শিক্ষকের কাছে পরামর্শ নিতে দ্বিধা হলে চলবে না। নির্দিষ্ট টপিকে ইন্টারনেট, লাইব্রেরি, পাঠ্যপুস্তকে কী আছে এবং নতুন বিষয় জানার জন্য সময় দিতে হবে। 

অর্থ সাশ্রয় 

ছোট থেকে পকেট মানি পাওয়া, বেশি খরচ করার অভ্যাস থাকলে বিদেশে এসে বিপাকে পড়তে হয়। একে তো চাইলেই অর্থ খরচ করা সম্ভব হয় না আবার নিজের খরচের জোগান নিজেকেই করতে হয়। তবে বেশিরভাগ দেশই খণ্ডকালীন কাজের জন্য সাপ্তাহিক ঘণ্টা অনুযায়ী সময় নির্দিষ্ট করে দেয়। তাই বেশি কাজ করে আয় করব এবং মন চাইলেই খরচ করব এমন ভাবলে চলবে না। 

প্রতি মাসের শুরুতে কোথায় কী পরিমাণ অর্থ লাগবে তার বাজেট করতে হবে। কোথায় থাকলে খরচ বাঁচবে এবং কীভাবে চললে অর্থ সঞ্চয় হবে তা জানতে হবে। কেনাকাটা, ঘুরতে যাওয়া, যাতায়াত, বিনোদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট ডিসকাউন্টের সুবিধা নিতে হবে। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Police grapple with surge in crime

Data from the Police Headquarters presents a grim picture of violent crimes, including murder, mugging, robbery, extortion, and mob violence, in the first six months of 2025.

16h ago