ফ্রিল্যান্সিংয়ে যে ৭ দক্ষতা কাজে লাগবে

প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাস মহামারির পরবর্তী সময়ে বাসায় বসে কাজ করার চর্চা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই এখন গৎবাঁধা নয়টা-পাঁচটার অফিসের পরিবর্তে নিজের মতো সময়ে যেকোনো জায়গায় বসে কাজ করতে পছন্দ করেন। তাই দিনদিন ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

আজকের লেখায় এমন ৭টি দক্ষতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা কিনা ফ্রিল্যান্সিং জগতে জায়গা করে নিতে বিশেষ সহায়তা করবে।

১. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট

আইটি প্রফেশনাল হন বা নিজস্ব ফার্মের মালিক, ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ আপনার সবক্ষেত্রেই কাজে লাগবে। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট পাঠ্যসূচির মধ্যে আছে জাভাস্ক্রিপ্ট, এইচটিএমএল, সিএসস ইত্যাদি

ফ্রেমওয়ার্ক। এসব বিষয়ে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স পাওয়া যায়, এগুলো থেকে সহজেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে মৌলিক বিষয়গুলো শিখে নেওয়া যাবে। জাতীয় ও বৈশ্বিক- সব পরিসরে ই-কমার্স যেভাবে সবটা জায়গা জুড়ে রয়েছে, নিজের ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের অনলাইন উপস্থিতিতে জোরদার করে তুলতে হলেও ওয়েব ডেভেলপিং সম্পর্কিত জ্ঞান থাকা জরুরি। এর মধ্যে সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা, অনলাইনে পণ্য বিক্রয় ইত্যাদি সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত।

২. গ্রাফিক ডিজাইন

প্রতিটি ব্র্যান্ডেরই কিছু ভিজ্যুয়াল উপকরণ প্রয়োজন হয়, তাদের পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন লোগো, ছবি, পোস্টার ইত্যাদি। গ্রাফিক ডিজাইনাররা এসব ডিজাইন করে

থাকেন। এমনকি তারা ওয়েবসাইটের চেহারা কেমন হবে, ওয়েব ডেভেলপারের সঙ্গে যোগসাজশ করে সে কাজও করেন তারা। মার্কেটিংয়ের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কাজে গ্রাফিক ডিজাইনিং দক্ষতা প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং ডিজাইনার নিয়োগ দিয়ে থাকেন অনেকেই। নিজস্ব সৃজনশীলতা, আঁকাআঁকির আগ্রহ আর ফরমায়েশমতো কাজ করবার মানসিকতা থাকলে গ্রাফিক ডিজাইনিং হতে পারে সম্ভাবনাময় একটি কাজ।

৩. ভিডিও তৈরি

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে যেসব ভিজ্যুয়াল উপকরণ অত্যন্ত কার্যকর, তার মধ্যে ভিডিও কনটেন্ট অন্যতম। তাই ভিডিও শ্যুট বা শুধু সম্পাদনার দক্ষতা থাকলেও বেশ কাজের সুযোগ রয়েছে। অনেকেই দীর্ঘমেয়াদী ভিডিও

নির্মাতার খোঁজ করেন, তবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদের কাজও পাওয়া সম্ভব। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নিজের তৈরি কিছু ভিডিও পোস্ট করে এমন নিয়োগদাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে। এছাড়া নিজের কাজের একটি পোর্টফোলিও থাকলে ভালো।

৪. কনটেন্ট রাইটিং

সব ধরনের ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটেই ভালো মানের লেখা প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য পোস্ট, বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য লেখালেখি। তাই রিভিউ, আর্টিকেল, প্যামফ্লেট, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি– এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ঘরানার লেখালেখিতে আগ্রহ থেকে থাকলে কনটেন্ট রাইটিং হতে পারে উপযোগী একটি পেশা। আধুনিক ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম মাধ্যম এই কনটেন্ট রাইটিং। সঠিক কিওয়ার্ড এবং এসইও অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ পাঠক তথা খরিদ্দারের মনোযোগ কেড়ে নেওয়াই হচ্ছে এর উদ্দেশ্য। কেননা একটি পণ্য বা সেবা তখনই বিক্রয় করা যাবে, যখন মানুষ সে বিষয়ে আগ্রহী হবে। অনলাইন জগতে কনটেন্ট রাইটিং মানুষকে আগ্রহী করে তোলার একটি বিশেষ হাতিয়ার।

৫. কাস্টমার সার্ভিস

অনলাইন হোক বা অফলাইন, কাস্টমারদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সুসম্পর্ক বজায় রাখা সবসময়ই একটি ভালো চর্চা। পুরনো কাস্টমারদের ধরে রাখা এবং নতুন কাস্টমার তৈরি করা– সফল কাস্টমার সার্ভিসের এটিই থাকে

উদ্দেশ্য। তাই কাস্টমার পরিষেবা এবং সর্বোপরি যোগাযোগের ক্ষমতা যদি ভালো হয়, তবে কাস্টমার সার্ভিসের কাজে যোগ দেওয়া যায়। ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানে নিজেরাই এ কাজ করে থাকলেও মাঝারি এবং প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডে এসব কাজের জন্য আলাদা নিয়োগ দেওয়া হয়। অনলাইনে কাস্টমার সার্ভিস প্রদানের জন্য যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাকে বেশিরভাগ সময় অফিসে যেতে হয় না। নিজস্ব অনলাইন উপস্থিতি আর যোগাযোগের ওপর ভরসা থাকলে কাস্টমার সার্ভিস বেশ উপযোগী একটি খণ্ডকালীন কাজ হতে পারে।

৬. ডেটা এন্ট্রি

সাধারণত এন্ট্রি লেভেল কাজ মনে করা হলেও, ডেটা এন্ট্রিতে দক্ষ হলে অনেকসময় ফ্রিল্যান্সিং জগতে স্থায়ী কাজও পাওয়া যায়। এ কাজে সেভাবে নির্দিষ্ট দক্ষতার প্রয়োজন আছে বলে মনে না হলেও এতে প্রয়োজন ধৈর্য আর মনোযোগ। একই কাজ অনেকক্ষণ ধরে বারবার করে যাওয়া খুব একটা সহজ নয়। ডেটা এন্ট্রির কাজে মূলত অনেক বড় পরিমাণে তথ্য হুবহু স্থানান্তর করতে হবে। এতে শতভাগ নির্ভুলতা থাকা জরুরি। তাই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকলে ডেটা এন্ট্রির কাজ দিয়েই ফ্রিল্যান্সিং জগতে যাত্রা শুরুর পাশাপাশি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা এসইও'র মতো অন্যান্য দক্ষতাও আহরণ করা যায়।

৭. এসইও

অনলাইন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে দিন দিন প্রতিযোগিতা বেড়ে চলছে। এই পরিবেশে একটি ব্যবসাকে এগিয়ে রাখতে পারে সঠিক উপায়ে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা সংক্ষেপে এসইও। সঠিক কিওয়ার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পণ্য, সেবা বা প্রতিষ্ঠান যাতে মানুষের সার্চ লিস্টে সবচেয়ে ওপরে থাকে– সেজন্য কাজ করে থাকেন এসইও বিশেষজ্ঞরা। তাদের সহায়তায় অনলাইনে নিজের উপস্থিতি আরও প্রবলভাবে জানান দিতে পারেন ব্যবসায়ীরা। ওয়েবসাইটে আরও বেশি ক্লিক, আরও বেশি ভিজিটই হচ্ছে এসইও'র উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন অনলাইন কোর্স রয়েছে। এসইও বিষয়ক জ্ঞান থেকে থাকলে ফ্রিল্যান্সিং এসইও বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজস্ব কাজের সময় আর সম্মানী নির্ধারণ করে যে কেউ এ কাজ শুরু করতে পারেন, তবে তার জন্য প্রয়োজন দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

Comments

The Daily Star  | English

Penalty less than illegal gains fuels stock manipulation

While fines are intended to deter future offences, questions remain over their effectiveness if the amount is lower than the illegal gain.

12h ago