বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি: আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা চায় ইউজিসি

বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি: আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা চায় ইউজিসি

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

কমিশন জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ইউজিসি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে থাকে। তবে, কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, ইউজিসির সুপারিশ অনেকাংশে বাস্তবায়ন করা হয় না। 

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ইউজিসি আরও জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, সনদ বাণিজ্য, আর্থিক অনিয়ম এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা কমিশনের থাকা অতি জরুরি। 

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহম্মদ আলমগীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়।'

প্রতিবেদনে ১৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। 

মুহম্মদ আলমগীর বলেন, 'সবাই চায় তদন্ত প্রতিবেদনের ফলাফলের ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত না হলে তদন্ত পরিচালনা করে লাভ কী? পরিস্থিতি না বদলালে, ইউজিসি কর্মকর্তারা তদন্তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। আবার, মানুষ বলবে, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না হলেও শুধু লোক দেখানোর জন্য তদন্ত করা হয়।'

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে একাধিক তদন্ত পরিচালনা করে কমিশন সে সব অভিযোগের সত্যতা পায় এবং সংশ্লিষ্ট উপাচার্যসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু সুপারিশগুলো শিক্ষা মন্ত্রণলয়ে কার্যত অবহেলায় পড়ে আছে। তার কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো পর্যন্ত এসব উপাচার্যদের বেশিরভাগকে শাস্তির আওতায় আনেনি। 

গত ২ বছরে কমিশন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়য়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অন্তত ৭টি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ইউজিসি।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুধু গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করেছিলেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, তদন্তে অসঙ্গতি পাওয়ার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একমাত্র পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগ বন্ধ করেছে। 

ইউজিসির একজন সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভিসিদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নিষ্ক্রিয়তা হতাশাজনক। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছায় এবং এটি এক ধরনের দায়মুক্তি।'

কমিশনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবু ইউসুফ মিয়া ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন না দেখে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে তিনি বলেন, 'আমি বলতে পারি, অভিযোগটি গত ৬ মাসের জন্য সত্য নয়। কারণ আমি ৬ মাস আগে আমার বর্তমান পদে যোগদান করেছি।'

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৫৩টি সরকারি (২০২১ সালে ছিল ৫০টি) ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৪৪ লাখ ৪১ হাজারের বেশি। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ) অধীন শিক্ষার্থী ৪১ লাখ ৩১ হাজারের মতো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক–কর্মকর্তা–কর্মচারী ৫২ হাজারের কিছু বেশি। এর মধ্যে শিক্ষক প্রায় ১৫ হাজার।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

8h ago