দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের এক ছাতার নিচে আনতে কাজ করছে ‘খেলাহবে’

বাংলাদেশে ক্রিকেট-ফুটবল জনপ্রিয়তার শিখরে থাকলেও কাবাডি, ব্যাডমিন্টনের মতো খেলাগুলোর জনপ্রিয়তা কম নয়। শহর কিংবা গ্রামে, খেলা পছন্দ করা মানুষের অভাব নেই। কিন্তু ক্রীড়া খাতে প্রাতিষ্ঠানিকতা ও সাংগঠনকি দক্ষতার অভাব আছে। সেই অভাব দূর করে সমমনা আরও খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, খেলাধুলা ও দেশের তরুণ প্রজন্মকে আরও দক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে তৈরি করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে 'খেলাহবে'।

খেলাহবে একটি স্পোর্টস-কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম যা দৈনন্দিন জীবনে আপনাকে খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত রাখতে সহায়তা করে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আপনি আপনার পছন্দের খেলার সতীর্থ অনুসন্ধান, বাছাই, প্রতিপক্ষ নির্বাচন, খেলার পরিকল্পনা, খেলার স্থান, অনুশীলনের স্থান ও সময় ইত্যাদি বেছে নিতে পারবেন।

২০২১ সালে খেলাহবে প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়। সে বছরের অক্টোবরে আইসিটি ডিভিশনের 'আইডিয়া' প্রকল্পে পোর্টফোলিও স্টার্টআপ হিসেবে নির্বাচিত হয় 'খেলাহবে'। 

খেলাধুলার প্রতি নিজেদের ভালোবাসা থেকে সৈয়দ মনজুরুল হাসান ও সৈয়দ নুরুল হাসান এই প্ল্যাটফর্মটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশের ক্রীড়া সম্প্রদায়কে এক ছাদের নিচে আনার লক্ষ্যে তারা এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মনজুরুল হাসানের প্রথম বিভাগে ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। নিজের অভিজ্ঞতায় তিনি দেখেছেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক খোলায়াড় অবসরের পর ক্যারিয়ারে অন্য কিছু করার সুযোগ খুব একটা পায় না। ফলে অবসরের পর তাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়। এজন্য তারা 'খেলাহবে' প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করেছেন; যাতে প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেটাররা অবসরের পর ভবিষ্যত ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।

মনজুরুল বলেন, 'খেলাহবে' মূলত দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যারা খেলাধূলা সম্পর্কে আগ্রহী, তাদের নিয়েই কাজ করে। সম্প্রতি ক্রিকেট ও ফুটবলের জন্য ডিজিটাল স্কোরবোর্ড ফিচার উন্মুক্ত করা হয়েছে। জুন মাস থেকে ব্যাডমিন্টন ও বাস্কেটবলের মতো অন্যান্য খেলারও ডিজিটাল স্কোরবোর্ড চালু করা হবে।

আগে খেলার সময় লাইভ স্কোরিং হাতে কলমে হিসেব রাখা হতো। কিন্তু খেলাহবে অ্যাপের মাধ্যমে এখন স্কোরিংয়ের ডিজিটাল রেকর্ড রাখা সম্ভব। এই রেকর্ড স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকবে। ফলে আপনার স্কোর অন্য ব্যবহারকারীরাও দেখতে পারবে। যেমন- আপনি খেলাহবে প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে একটি মাঠ ও সময় বাছাই করে ক্রিকেট খেলতে গেলেন। ম্যাচে আপনি ৩০ বলে ৫৫ রান করলেন। আপনার এই স্কোরিং 'খেলাহবে' অ্যাপে ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হবে। ভবিষ্যতে যদি কেউ তার দলের জন্য হার্ড হিটার খোঁজ করেন, তাহলে আপনার স্কোর দেখে তিনি আপনাকে সতীর্থ হিসেবে বাঁছাই করতে পারবেন। এভাবে সব খেলোয়াড়ের স্কোর ডিজিটালি সংরক্ষণ করার মাধ্যমে একটি ডিজিটালি লিডারবোর্ড তৈরি হবে যেখানে সেরা স্কোরারদের সহজেই দেখা যাবে।  

অ্যাপভিত্তিক সেবার বাইরেও বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্যও খেলার আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকার কয়েকটি খেলার মাঠ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে খেলার এই আয়োজনগুলো করা হয়। মোট কথা, উদীয়মান ক্রীড়া সম্প্রদায়ের বিকাশকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ক্রীড়ামোদীদের সেবা প্রদান করছে এই প্ল্যাটফর্মটি।

বর্তমানে খেলাহবে প্ল্যাটফর্মের গ্রাহক সংখ্যা ১০ হাজার, যাদের মধ্যে ৪ হাজার গ্রাহক একাধিকবার সেবা নিয়েছেন। তাদের ৮টি করপোরেট পার্টনার আছে এবং তাদের জন্য টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করেছে 'খেলাহবে'। 

প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীদেরকে আশেপাশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন টুর্নামেন্ট সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে এবং যে কেউ একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে ম্যাচগুলোতে অংশ নিতে পারে।

মনজুরুল বলেন, 'আমাদের কার্যক্রম এখনো অনেকটাই ঢাকা কেন্দ্রিক। তবে খেলাধুলার একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করার জন্য আমরা চট্টগ্রাম ও সিলেটেও নিয়মিত অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমাদের সেবার অনেক চাহিদা থাকা সত্বেও ভবিষ্যতে এটিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা আরও ভালোভাবে সবকিছু যাচাই-বাছাই করছি। আমাদের দেশে খেলাধুলার বাজার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং তরুণদের মাঠে এসে খেলার সুযোগ বজায় রাখতে প্রাসঙ্গিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করা দরকার।'

তিনি আরও বলেন, 'পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যেখানে সবাই ক্রীড়া সম্প্রদায়ের অংশ হবে। আমাদের অ্যাপের মাধ্যমে আমরা একটি প্রতিযোগিতা ও সম্পৃক্ততামূলক ক্রীড়া সম্প্রদায় তৈরি করতে চাই, যেখানে খেলোয়াড়রা তাদের সমকক্ষদের বিরুদ্ধে লিডারবোর্ডে তাদের অবস্থানের জন্য প্রতিযোগিতা করবে। যখন একটি সমৃদ্ধ সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণরা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই, যা স্থানীয় ক্রীড়া নৈপুণ্যকারীদের পেশাদার ক্রীড়াবিদ হতে সহায়তা করবে। এই ধারণাটি আমরা ভবিষ্যতে এগিয়ে নিতে চাই।'

অনুবাদ: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

1h ago