কোথায় যাচ্ছেন, রেকর্ড রাখছে আইফোন

কোথায় যাচ্ছেন, তথ্য সংরক্ষণ করছে আইফোন
নিয়মিত কোথায় যাচ্ছেন সেসব তথ্য সংরক্ষণ করছে আইফোন। ছবি: সংগৃহীত

নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন সব জায়গার একটি গোপন তালিকা রাখে আপনার আইফোন। অর্থাৎ, ঘনঘন যাওয়া সমস্ত অবস্থান যেমন, আপনার কাজের ক্ষেত্র, প্রিয় রেস্টুরেন্ট কিংবা নিয়মিত আড্ডাস্থলের গোপন তালিকা আছে আপনার আইফোনের কাছে। 

আইফোনের এই ফিচারটিকে বলা হয় 'সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস'। যদিও কিছু আইফোন ব্যবহারকারী মনে করেন এটি বেশ কাজের। আবার অনেকে মনে করেন এটি ব্যাক্তিগত নিরাপত্তার জন্যে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। 

চলুন জেনে নেওয়া যাক, সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস ফিচারটি সম্পর্কে; এটি কীভাবে কাজ করে এবং এটি নিয়ে চিন্তার কিছু আছে কি না।

আইওএস-এর সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস ফিচার আসলে কী?

সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস নামটি থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এটি আপনার গুরুত্বপূর্ণ সব অবস্থানগুলো খোঁজ রাখে। অর্থাৎ, এই ফিচারটি আপনার প্রায়শই যাওয়া হয় এমন সমস্ত স্থানের একটি তালিকা রাখে। যাতে করে আপনি কোন কোন জায়গায় যেতে পছন্দ করেন, তার ওপর ভিত্তি করে আইফোন আপনাকে প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং পরামর্শ প্রদান করতে পারে।

আপনি একটি নির্দিষ্ট দিনে কোথায় যাবেন তা অ্যাপল সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস ফিচারের মাধ্যমে অনুমান করার চেষ্টা করে। আপনি যদি প্রতি শনিবার কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে যান, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন সেই অবস্থানটি ওই দিনের জন্য আপনার অ্যাপল ম্যাপের সাজেশনসের শীর্ষে রয়েছে। পাশাপাশি আপনি সেই অবস্থানের ট্র্যাফিক এবং আবহাওয়া সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিও পেতে পারেন৷

যেভাবে কাজ করে

সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস আপনার আইফোনে জিপিএস ব্যবহার করে কাজ করে। এই জিপিএসের সাহায্যে এটি আপনার কর্মস্থলের মতো ঘন ঘন অবস্থান করা জায়গাগুলোকে ট্র্যাক করতে পারে। 

এটি এমন জায়গাগুলোও খুঁজে বের করতে পারে যেগুলোয় আপনি ঘন ঘন যেতে চাইবেন, যেমন ধরুন আপনার প্রিয় রেস্তোরাঁ বা আত্মীয়ের বাড়ি। আপনি কোনো একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে কতবার যাচ্ছেন এবং কত সময়ের জন্য থাকছেন তার ওপর ভিত্তি করে অ্যালগরিদমটি এটি নির্ধারণ করে। 

এটি করার জন্যে আপনাকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে না এবং এটিও আপনাকে কোনো প্রকার বিজ্ঞপ্তি দেবে না। যা হওয়ার সব ব্যাকগ্রাউন্ডে সয়ংক্রিয়ভাবে হবে। 

যেভাবে সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস দেখবেন এবং বন্ধ করবেন

আপনার আইফোনের সেটিংস অপশনে এটি পাবেন। আপনি যদি আপনার অবস্থানগুলোর তালিকা দেখতে চান এবং এটি বন্ধ করতে চান তাহলে, সেটিংস > প্রাইভেসি > লোকেশন সার্ভিসেস > সিস্টেম সেটিংস > সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস-এ যান৷

সেখানে আপনি আপনার সাম্প্রতিক রেকর্ডগুলো দেখতে পারবেন। আপনি একটি নির্দিষ্ট স্থানে কতক্ষণ ছিলেন এবং সেই অবস্থানটির নাম আপনার ম্যাপস অ্যাপে আছে কি না তা আপনি দেখতে পারবেন। মোট কতগুলো রেকর্ড আছে তাও আপনি দেখতে পারবেন।

পৃষ্ঠার নীচে ক্লিয়ার হিস্ট্রিতে ট্যাপ করে আপনি চাইলে আপনার সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনগুলো মুছে ফেলে আবার নতুন করে শুরু করতে পারবেন। আর আপনি যদি এটি বন্ধ করতে চান, তাহলে একবারে ওপরের সবুজ বোতামটি টগল করুন।

সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস কী নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ?

অ্যাপলের তথ্য অনুসারে, সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস তথ্যগুলো ব্যক্তিগত রাখতে উন্নত এনক্রিপশন ব্যবহার করে। তাদের মতে, এমনকি অ্যাপলও আপনার অবস্থান দেখতে পারে না। অ্যাপল দাবি করে, আপনার কাছে কোন অবস্থানগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা জানার জন্য আইফোন এটি করে।

এ ছাড়া অবস্থানগুলো শুধু আপনার ডিভাইসে সংরক্ষিত করা হয়। আই ক্লাউডে করা হয় না। আর আপনি যদি মনে করেন যে, এটি আপনার গোপনীয়তার লঙ্ঘন করছে। তাহলে আপনি চাইলে যেকোনো সময়ই সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস ফিচারটি বন্ধ করে দিতে পারবেন।

তবে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আপনি চাইলে তো অ্যাপল ম্যাপসে আপনার বাসা, অফিসের ঠিকানার পাশাপাশি আপনার প্রিয় জায়গাগুলোর ঠিকানাও যুক্ত করতে পারেন। তাহলে আলাদা করে এটির প্রয়োজন কী?

এর উত্তরে বলা হচ্ছে যে, এর মাধ্যমে আইফোন আপনাকে আরও প্রাসঙ্গিক তথ্য দেখাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার প্রতিদিনের যাতায়াতের রাস্তা জানার মাধ্যমে, অ্যাপল আপনাকে ট্র্যাফিক বিষয়ক আরও প্রাসঙ্গিক তথ্য দিতে পারে।

যদিও এটি কারও কারও জন্য বেশ সহায়ক। আবার অনেকে মনে করেন এ সব তথ্য ট্র্যাকিং ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে আপনি যদি এটি নিয়ে শঙ্কায় ভুগেন, তাহলে আপনি চাইলে এটি বন্ধ করে রাখতে পারেন। 

এটি কি বন্ধ করে রাখা উচিত?

এখন পর্যন্ত সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনসকে নিরাপদ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এতে এযাবৎ কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি পাওয়া যায়নি। তবে আপনার আইফোনে যদি কারও এক্সেস থাকে কিংবা কেউ যদি আপনার অজান্তে আপনার আইফোনে প্রবেশ করে, সে ক্ষেত্রে তারা আপনার প্রায়শই অবস্থান করা জায়গাগুলো দেখে ফেলতে পারে। যা একটি গোপনীয়তা এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। 

তবে আপনি যদি এটি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন, তাহলে যেকোনো সময় সিগনিফিক্যান্ট লোকেশনস বন্ধ করে দিতে পারেন। তাই এটি নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। 

তথ্যসূত্র: এমইউও

গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

3h ago