ভিপিএন ব্যবহারে শাস্তি হয় যেসব দেশে

ভিপিএন ব্যবহারে শাস্তি হয় যেসব দেশে
ছবি: সংগৃহীত

ভিপিএনের এত জনপ্রিয়তার কারণে মনে হতে পারে, এগুলো হয়তো বিশ্বজুড়ে অবাধে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু না, বেশকিছু দেশ আছে যেখানে ভিপিএন ব্যবহারকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়। 

অনেক দেশ সম্পূর্ণভাবেই ভিপিএন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, অনেকে আবার ব্যবহার সীমিত করেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক এই দেশগুলো সম্পর্কে।

চীন

যদিও চীনে ভিপিএন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ নয়, তবে দেশটির বাসিন্দারা শুধু সরকার অনুমোদিত ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। সরকার চাইলে এই ধরনের ভিপিএন-এ যেকোনো সময় হস্তক্ষেপ করতে পারবে। যা ভিপিএন ব্যবহারের উদ্দেশ্যকেই সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে। আর আপনি যদি চীনে একটি অননুমোদিত ভিপিএন ব্যবহার করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তাহলে আপনাকে জরিমানা বা কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে। চীনে একটি অননুমোদিত ভিপিএন ব্যবহারের শাস্তি ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

তুর্কমেনিস্তান

ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে তুর্কমেনিস্তান বেশ কঠোর। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ভিপিএনের উপরও তাদের কঠোরনীতি আরোপ হবে। ২০১৯ সালে তুর্কমেনিস্তান ভিপিএন প্রদানকারীদের ব্লক করা শুরু করে। তারপর ২০২১ সালে সরকার কর্তৃক নির্দেশ দেওয়া হয় যে, ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার আগে ব্যবহারকারীদের কোরানে শপথ নিতে হবে যে তারা কখনো ভিপিএন ব্যবহার করবে না। কেউ তুর্কমেনিস্তানে ভিপিএন ব্যবহার করে ধরা পড়লে তাকে জরিমানা এবং গ্রেপ্তার করা হতে পারে। 

বেলারুশ

২০১৫ সালে বেলারুশিয়ান সরকার ভিপিএন, প্রক্সি এবং টর ব্রাউজার-এর মতো সব ধরনের অনলাইন কারচুপির সরঞ্জামগুলো ব্যবহারের ওপর সম্পূর্ণরূপে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সংক্ষেপে বলা যায়, দেশটির কোনো বাসিন্দা কোনোভাবে বেনামে ওয়েব সার্ফ করতে পারবেন না। 

তুরস্ক

২০১৬ সালে তুর্কি সরকার ১০টি ভিপিএন প্রদানকারীর পাশাপাশি টর ব্রাউজার নিষিদ্ধ করে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানানো হয়। তবে ভিপিএন তুরস্কে সম্পূর্ণরূপে অবৈধ নয়। নর্ডভিপিএন এবং এক্সপ্রেসভিপিএনের মতো বেশ কয়েকটি বড় বড় ভিপিএন এখনো দেশের মধ্যে বৈধভাবে ব্যবহার করা যায়।

উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়ার প্রযুক্তিগত আইনগুলো সবার তুলনায় বেশি কঠোর। তাই এটি আশ্চর্যজনক নয় যে, সেখানে ভিপিএন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তবে দাবি করা হয়, উত্তর কোরিয়ায় অনুমোদন ছাড়া ভিপিএন ব্যবহারের ফলে কারাদণ্ড হতে পারে। তবে অল্প সময়ের জন্য সেখানে ভ্রমণ করতে যাওয়া ব্যাক্তিরা, দেশটিতে কোনো আইনি সমস্যা ছাড়াই ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে উত্তর কোরিয়ানদের ইন্টারনেটেই নিয়মিত প্রবেশাধিকার নেই।  

উগান্ডা

উগান্ডায় সব ধরনের ভিপিএন ট্র্যাফিক সরকার থেকে ব্লক করা। এর কারণ, উগান্ডা সরকার ২০১৮ সালে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ওপর কর চালু আরোপ করে। তখন এর বাসিন্দারা কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য ভিপিএন ব্যবহার শুরু করে। তবে ২০২১ সালে উগান্ডা সরকার এই আইন উঠিয়ে নেয়। কিন্তু দেশটির বাসিন্দারা এখনো অবরুদ্ধ ওয়েবসাইটগুলো প্রবেশ করতে, ব্যক্তিগত যোগাযোগ করতে এবং তাদের অনলাইন পরিচয় গোপন রাখতে ভিপিএন ব্যবহার করে। তবে উগান্ডা সরকার ভিপিএন ব্যবহারকারীদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছে। 

রাশিয়া

২০১৭ সালে সারা বিশ্বে ভিপিএনের ব্যবহার আকাশচুম্বী হতে শুরু করে। তখন রাশিয়ান সরকার একের পর এক ভিপিএন প্রদানকারীদের নিষিদ্ধ করা শুরু করে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর রাশিয়ান সরকারের অবস্থান শক্ত। তারা এখন পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি ভিপিএন প্রদানকারীকে নিষিদ্ধ করেছে এবং আরও করবে বলে জানা যায়। দেশটি ভিপিএন এবং প্রক্সির ব্যবহার কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করেছে। এ ছাড়া টর ব্রাউজার ব্যবহারও দেশটি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে।

যদিও করপোরেট ভিপিএনগুলো এখনো রাশিয়ায় বৈধ। তবে রাষ্ট্রপতি পুতিন বলেছেন, অন্যান্য ভিপিএন প্রদানকারীরা যেন ব্যবহারকারীদের সরকার কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত সাইটগুলোতে প্রবেশের অনুমতি না দেয়। 

সংযুক্ত আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৬ সালে সাইবার অপরাধ আইন সংশোধনের পর ভিপিএন ব্যবহার অবৈধ করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার এনক্রিপশনকে খুব ভালো চোখে দেখে না এবং ভিপিএন যেভাবে কাজ করে তা এখন সে দেশে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিপিএন ব্যবহার করে ধরা পড়লে জরিমানা কিংবা এমনকি জেলের সাজাও হতে পারে। আর সেই জরিমানার পরিমাণ অনেক বৃহৎ। ক্ষেত্রবিশেষে এটি ১ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি হতে পারে। তবে সরকারের মতে, ভিপিএন একটি বৈধ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু এই 'বৈধ' বিষয়টি নিয়ে বেশ অস্পষ্টতা রয়েছে। 

ভিপিএন এখনো কিছু কিছু জায়গায় অত্যন্ত বিতর্কিত। যদিও ভিপিএন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবুও এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ এখনো এগুলোয় বৈধ প্রবেশাধিকার পায় না। 

তথ্যসূত্র: এমইউও 
গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি

 

Comments

The Daily Star  | English

Uncovering the silent deaths of migrant women

In the shadows of booming remittance flows and the quiet resilience of Bangladesh’s labour diaspora, a disturbing reality persists: numerous Bangladeshi female migrant workers, particularly those employed as domestic help in Gulf countries, are returning home in coffins.

18h ago