সিক্সটিন সাইকি

‘স্বর্ণের খনি’ গ্রহাণুতে অভিযান চালাবে নাসা-ইলন মাস্ক

‘স্বর্ণের খনি’ গ্রহাণুতে অভিযান চালাবে নাসা-ইলন মাস্ক
সিক্সটিন সাইকি। ছবি: নাসা

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ২০২০ সালে অনন্য এক গ্রহাণুতে (অ্যাস্টেরয়েড) বিশেষ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেয়। বিজ্ঞানীরা 'সিক্সটিন সাইকি' নামের এই গ্রহাণুটিকে 'সোনার খনি' হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। 

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এই গ্রহাণুটি পর্যবেক্ষণে একটি মিশন পাঠানোর কথা ছিল নাসার। কিন্তু সফটওয়্যার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে শেষ মুহূর্তে ওই মিশনটি বাতিল করতে হয়। 

চলতি বছরের ১০ অক্টোবর আবারও মিশনটি শুরু প্ররিকল্পনা আছে নাসার। নাসা ও স্পেসএক্স যৌথভাবে এই মিশনটি নিয়ে কাজ করছে। 

এই গ্রহাণুটি আসলে কী?

মহাবিশ্বে বিজ্ঞানীরা প্রায়ই বিভিন্ন গ্রহাণুর সন্ধান পান। তবে সিক্সটিন সাইকি অন্য গ্রহাণুর চেয়ে আলাদা। বেশিরভাগ গ্রহাণু পাথুরে হলেও এটি সোনা, লোহা ও নিকেলে ভর্তি। এই গ্রহাণুটিতে এত পরিমাণ মূল্যবান ধাতু আছে যে বিজ্ঞানীদের ধারণা সেসবের মোট মূল্য বিশ্ব অর্থনীতির চেয়েও অনেক বেশি হবে। এখন পর্যন্ত যত 'এম ক্লাস' গ্রহাণু (উচ্চ মেটাল বা ধাতব পদার্থযুক্ত) পাওয়া গেছে, সিক্সটিন সাইকি সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। 

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে মঙ্গল আর বৃহস্পতির কক্ষপথের মধ্যে যে গ্রহাণুমণ্ডল বা অ্যাস্টেরয়েড বেল্ট, সেখানে সিক্সটিন সাইকির সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতি ৫ বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এটি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে গ্রহাণুটির ২০ শতাংশ বা তারও বেশিই ধাতব। 

কী আছে এতে?

নাসা ও স্পেসএক্স এর এই যৌথ মিশনের মূল উদ্দেশ্য হবে বিশালাকার এই ধাতব গ্রহাণুটিকে আরও কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা। বিজ্ঞানীরা সাধারণত এটিকে 'সোনার খনি' নামে ডাকেন, কারণ এই গ্রহাণুটিতে যেসব ধাতব পদার্থ আছে, সেগুলো দাম অনেক। বিজ্ঞানীরা এই গ্রহাণুটিতে বিশাল সোনার সন্ধান পেয়েছেন। এর বাইরেও প্লাটিনাম, লোহা ও নিকেলের মতো ধাতুও প্রচুর পরিমাণে আছে এই গ্রহাণুতে। 

ধারণা করা হয় গ্রহাণুটিতে থাকা সব ধাতব পদার্থের মূল্য হতে পারে ১৫.৮ কোয়াড্রিলিয়ন ডলার (১৫.৮ এর পরে ১৭টি শূন্য)। কেউ কেউ বলছেন গ্রহাণুটি থেকে যদি এসব মূল্যবান সম্পদ আহরণ করা সম্ভব হয়, তাহলে সেই অর্থ দিয়ে পৃথিবীর সবাইকে হাজার কোটি টাকার মালিক করা সম্ভব।  

কিন্তু নাসার পরিকল্পিত স্পেসশিপটি যদি সিক্সটিন সাইকিতে পৌঁছেও, তাতেও সেখান থেকে আপাতত খনিজ আহরণের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ সেই প্রযুক্তিও কারও হাতে নেই এখনো এবং কী প্রক্রিয়ায় গ্রহাণু থেকে আহরিত খনিজ পৃথিবীতে নিয়ে আসা সম্ভব, সেটি এখনো কারও জানা নেই। 

পাথুরে ও বরফাচ্ছাদিত ছাড়া এই প্রথম নাসা বর্হির্বিশ্বের একটি গ্রহ বা গ্রহাণু অনুসন্ধান করতে যাচ্ছে। 

তবে শুধু যে নাসা ও স্পেস এক্সই গ্রহাণুতে সম্ভাব্য খনিজ আহরণের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে, তা নয়। পৃথিবীর বাইরে মাইনিংয়ের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করেছে। তার মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান হারিয়েও গেছে। 

অ্যাস্টেরয়েড মাইনিং করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৮৬ডিএ নামের একটি গ্রহাণুকে মাইনিং করতে চাইছে। ধারণা করা হচ্ছে এতে ১৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ থাকতে পারে। যদিও গ্রহাণুতে এমন মাইনিং পরিচালনা করতেও হাজার কোটি টাকা করচ করতে হবে এবং সেটি কোনো সহজ কাজও হবে না। 

গ্রহাণুতে কীভাবে মাইনিং করা হবে?

এই প্রশ্নের শতভাগ নিশ্চিত উত্তর এখনো কারও জানা নেই। তবে কাজটি কীভাবে করা হতে পারে, তার সম্ভাব্য কিছু কার্যপ্রনালী অনেকেই তৈরি করেছেন।

'হাও স্টাফ ওয়ার্কস' নামের একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গ্রহাণুতে মনুষ্যবাহী রকেটের সঙ্গে মাইনিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত রোবট নেওয়া যেতে পারে এবং সেই রোবটের সাহায্যে মাইনিং করা যেতে পারে। পৃথিবীতে মাইনিংয়ের জন্য যেসব প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, একই রকম প্রযুক্তি এ ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেগুলোর ওজন হতে হবে আরও হালকা। মাইনিংয়ের সময় যাতে ছোট ছোট টুকরা মহাকাশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য চারপাশে জাল বা শামিয়ানাও ব্যবহার কার যেতে পারে। 

গ্রহাণুতে যহেতু কোনো অভিকর্ষ বল কাজ করে না, তাই কর্মীদের যন্ত্র ব্যবহারে মনোযোগী ও কৌশলী হতে হবে। না হলে সেগুলো মহাশূন্যে ভেসে যেতে পারে। 

তবে প্রক্রিয়া যা-ই হোক না কেন, সেটি যে কোনো সহজ কিছু হবে না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। 

পৃথিবীবাসী নিশ্চিয়ই চাইবে এমন কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয় যাতে সিক্সটিন সাইকোর মতো গ্রহাণুগুলোতে মাইনিং করা যায় এবং সবাই হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাক!

তথ্যসূত্র: দ্য রেকর্ড, বিবিসি, নিউ ইয়র্ক পোস্ট 

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshis worry amid US immigration crackdown

The United States has deported at least 31 Bangladeshis after President Donald Trump took a tough immigration policy.

5h ago