যেভাবে কাজ করে ফিফার লাইভ বল-ট্র্যাকিং প্রযুক্তি
বেশকিছু নতুন এবং চমকপ্রদ প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যাচ্ছে চলমান ফিফা বিশ্বকাপ-২০২২-এ। মুহূর্তেই যেগুলো মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে খেলার ফলাফলে। এসব প্রযুক্তির মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে ভিএআর বা ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির নাম। যার বদৌলতে বেশ কয়েকটি গোল পড়েছে অফসাইডের খাতায়।
এ ছাড়া প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে লাইভ বল-ট্র্যাকিং প্রযুক্তির ব্যবহার। অফিসিয়াল ম্যাচ বল 'আল রিহলার' মধ্যে থাকা এ বিশেষ ট্র্যাকিং প্রযুক্তির আদ্যোপান্ত থাকছে আজকের আয়োজনে।
লাইভ বল-ট্র্যাকিং কীভাবে কাজ করে?
জার্মানির এআই সমাধান প্রদানকারী কিনেক্সনের ডিজাইন করা এ বছরের ফিফা বিশ্বকাপে ব্যবহৃত বলগুলোর ভেতরে রয়েছে একটি করে লাইটওয়েট সেন্সর। ইন্টারশিয়াল মেজারমেন্ট ইউনিট (আইএমইউ) দ্বারা তৈরি এ সেন্সরগুলো আল্ট্রা-ওয়াইডব্যান্ড (ইউডব্লিউবি) রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারের পাশাপাশি রিয়েল-টাইম স্থানিক অবস্থান এবং স্থান পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে।
কিনেক্সনের নিজস্ব লোকাল পজিশনিং সিস্টেম (এলপিএস) বলের গতি ট্র্যাক করার কাজটি সম্ভব করেছে। এটি ম্যাচগুলোর পিচের চারপাশে ইনস্টল করা হয়েছে৷ যার মাধ্যমে রেফারি এবং কর্মকর্তারা কোথায় বল যাচ্ছে, খেলোয়াড়রা কোথায় অবস্থান করছে, এক স্থান থেকে কোথায় গতিপথ পরিবর্তন করছে, মাঠের চারপাশে কী ঘটছে- এসব বিষয়ে সর্বদা অবগত থাকতে পারে।
কিনেক্সনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, বলের ভেতরে থাকা সেন্সরটি ২ এবং ত্রিমাত্রিক উভয় গতিবিধি শনাক্ত করতে পারে, রিয়েল টাইমে আউটপুট দিতে পারে এবং ২০ মাইক্রোসেকেন্ডের কম সময়ে সেন্টিমিটার পরিমাণ সঠিক গণনা প্রদান করতে পারে। যার কারণে সরাসরি খেলাকে প্রভাবিত করে এমন অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।
এ ছাড়া অ্যাডিডাসের ডিজাইন করা বিশেষ সাসপেনশন প্রযুক্তির জন্য বলের ভেতরের সেন্সরটি সঠিক স্থানে অবস্থান করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাসপেনশন নিশ্চিত করে সেন্সরটি যেন বলের ভেতরে কেন্দ্রে থাকে এবং খেলা চলাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত বা সরে না যায়।
বল-ট্র্যাকিং যেভাবে সাহায্য করে
কিনেক্সনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, লাইভ বল ট্র্যাকিংয়ের স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির সাহায্যে নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়। এ ছাড়া গোল, পেনাল্টি এবং অফসাইডের মতো জটিল পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা আপ-টু-ডেট, রিয়েল-টাইম তথ্য ব্যবহার করে প্রতিটি খেলোয়াড় কীভাবে পারফর্ম করেছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে।
সেন্সর থেকে পাওয়া তথ্য এককথায় একটি ডেটা প্যাকেজ হিসেবে কাজ করে। যার মধ্যে রয়েছে বলের আবৃত দূরত্ব, বলের ত্বরণ এবং গতি, আক্রমণ ও রক্ষণের সময় খেলোয়াড়রা কতদূর দৌড়েছে, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ড্রিবলিং গতি কত ছিল, গোলের সময় বল শট করার গতি, দলের পাসিং এর নির্ভুলতা সম্পর্কিত তথ্য।
কিনেক্সনের ট্র্যাকিং সেন্সরগুলো সরাসরি ম্যাচ চলাকালীন ভালো উপস্থাপনার জন্য রিয়েল-টাইম তথ্য দৃশ্যায়ন করতে সাহায্য করে। যেহেতু সেন্সরগুলো সঠিকভাবে শট এবং পাস সংক্রান্ত পরিমাপ নির্দেশ করতে পারে, তাই দর্শকদের খেলা দেখার অভিজ্ঞতাকে পরিপূর্ণ করতে ম্যাচের পরিসংখ্যান রিয়েল টাইমে আপডেট দিতে পারে।
কিনেক্সনের মতে, তাদের নিজস্ব বল ট্র্যাকিং সমাধানের প্রযুক্তি গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফিফা ইপিটিএস পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে। ২০২২ বিশ্বকাপের ফরোয়ার্ড থেকে কিনেক্সনের লাইভ প্লেয়ার এবং বল ট্র্যাকিং ছিল ফিফার পছন্দের তালিকার শীর্ষে।
এ ছাড়া হক-আই নামে পরিচিত অপটিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমের অংশ হিসেবে এ বছরের বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামের ছাদের নিচে ১২টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা রাখার পাশাপাশি মাঠে প্রতিটি খেলোয়াড়ের সঠিক অবস্থান ট্র্যাক করতে ২৯টি ডেটা পয়েন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
'আধা-স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রোগ্রাম' নামকরণে বল ট্র্যাকার এবং ভিএআর প্রযুক্তির সংমিশ্রণ যেকোনো সময়ে খেলার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকে সহজ করে তুলেছে।
অনুবাদ করেছেন আসরিফা সুলতানা রিয়া
Comments