মোবাইলের কথা শুনে বিজ্ঞাপন দেখায় ফেসবুক?

ফেসবুক কি আমাদের কথা শুনতে পায়? এ প্রশ্ন সবার। প্রতিকী ছবিঃ সংগৃহীত
ফেসবুক কি আমাদের কথা শুনতে পায়? এ প্রশ্ন সবার। প্রতিকী ছবিঃ সংগৃহীত

এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের সবারই। আপনি কোনো বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছেন কোনো পণ্য বা সেবা বিষয়ে, তারপর ফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে ঠিক সেসব পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দেখতে পেলেন ফেসবুকে।

আশ্চর্য হয়ে ভাবলেন, 'তবে কী ফোন আমার আলাপগুলো শুনছে? রেকর্ড করছে?' বিষয়টা তা নয়। তবে অদ্ভুতভাবে প্রাসঙ্গিক এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখতে পাওয়ার পেছনে কী রয়েছে—সেটাই মূলত আজকের লেখার উদ্দেশ। 

ফোন আপনার কথা না শুনলেও গতিবিধি অনুসরণ করছে

ফেসবুকের ট্র্যাকিং থেকে বাঁচা ঝামেলার হলেও অসম্ভব নয়। ছবি: সংগৃহীত
ফেসবুকের ট্র্যাকিং থেকে বাঁচা ঝামেলার হলেও অসম্ভব নয়। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়টি নিয়ে জনমনে আতঙ্ক রয়েছে। মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গ ও ইনস্টাগ্রামের প্রধান অ্যাডাম মোসেরির মতো প্রযুক্তি জগতের শীর্ষ নেতাদের অসংখ্যবার এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম আপনাদের স্মার্টফোন ও মাইক্রোফোনে বলা আপনাদের কথাবার্তা সক্রিয়ভাবে শুনছে না। এ ধরনের কার্যক্রম বেআইনি এবং লাখো ব্যবহারকারীর কলের রেকর্ড সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের পেছনে যে ধরনের সরঞ্জাম-উপকরণ ও খরচ রয়েছে, তা অযৌক্তিক।

তাহলে, কীভাবে এই মাধ্যমগুলো আপনাদের এমন বিজ্ঞাপন দেখায়, যাতে মনে হয় তারা আপনাদের মন পড়তে পারে? এর উত্তর হল, আপনি ফোনে কার সঙ্গে কী আলাপ করছেন, সেটা শুনছে না কেউ, তবে, অনলাইন ও অফলাইনে আপনার গতিবিধি অনুসরণ করছে ঠিকই—যাকে 'ট্র্যাকিং' বলা হয়।

অ্যালগরিদমের জাদু

মনে করুন, আপনি জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে আছেন এবং আপনার এক বান্ধবী উচ্ছ্বসিত হয়ে বলছে কীভাবে সে একবার জাপান গিয়েছিলো ও জাপানি খাবারের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো। কয়েক ঘণ্টা পর, আপনি আপনার ফেসবুক ফিডে দেখতে পেলেন আপনার শহরের কোথায় ভালো 'সুশি' (জাপানি খাবার) পাওয়া যায় তার বিজ্ঞাপন। এটি কোনো জাদুটোনার ব্যাপার নয়, বরং সূক্ষ্ম ট্র্যাকিং অ্যালগরিদমের ফল ৷

ফেসবুক লোকেশন ট্র্যাকিং, অনলাইনে আচরণ বিশ্লেষণ, এমনকি আপনার বন্ধুত্বকেও (আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড কারা) ব্যবহার করে তাদের নির্ধারিত বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য। আপনার বন্ধু যদি অনলাইনে কোনো জাপানী রেস্টুরেন্টের সঙ্গে আলাপ করেন (অর্ডার দেওয়া, রিভিউ লেখা বা প্রশ্ন করাও হতে পারে), আর সে সময় (বা অন্য কোনো সময়) আপনি আর আপনার সেই জাপানি খাবারপ্রেমী বান্ধবী যদি একই অবস্থানে থাকেন (অর্থাৎ, আপনি যদি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সেই বান্ধবীর দেখা পান), তাহলে ফেসবুকের অ্যালগরিদমের যুক্তি বলে, আপনিও জাপানি খাবারে আগ্রহী হতে পারেন। 

ফেসবুকের অ্যালগোরিদম আপনার ব্যাপারে আপনার চেয়ে বেশি জানে। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত
ফেসবুকের অ্যালগোরিদম আপনার ব্যাপারে আপনার চেয়ে বেশি জানে। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুকের অ্যালগরিদম সামান্যই লোকেশন ট্র্যাকিং করে। তারা আপনার বন্ধুর সঙ্গে আপনার আগ্রহের বিষয়, বিচরণস্থান ও অনলাইন কার্যক্রম মিলিয়ে দেখে। যদি আপনাদের প্রোফাইলে মিল থাকে আর আপনার বন্ধু কোনো পণ্যের প্রতি আগ্রহী হয়, ফেসবুক আপনাকেও সেই বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে নেয়। কখনো কখনো এমন মনে হতে পারে, আপনি কী ভাবছেন তা ফেসবুক জানে। কিন্তু এটি কোনো 'সাইকিক পাওয়ার' নয়; বরং, পুরো ব্যাপারটিই উপাত্ত বিশ্লেষণের কলাকৌশল৷

প্রতিটি ক্লিক, লাইক ও শেয়ার থেকে ফেসবুক আপনার আগ্রহের জায়গা বুঝে নেয়। যার ফলে খুব সহজেই আপনার পছন্দের সঙ্গে মিলে যায়, এমন প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন দেখানোও সহজ হয়।

আপনার অনলাইন কার্যক্রম থেকে ফেসবুক বিপুল পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ করে। এই তথ্যের উৎস ফেসবুক বা এর  বাইরে থেকেও হতে পারে। এসব তথ্য ব্যবহার করে থেকে বিজ্ঞাপনদাতারা সুনির্দিষ্টভাবে, সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে তাদের পণ্যের প্রচারণা চালাতে পারেন। একে গোপনীয়তার লঙ্ঘন বলে মনে হলেও এটি মূলত সূক্ষ্ম ডেটা বিশ্লেষণের কারসাজি।

ট্র‍্যাকড হওয়া থেকে বাঁচার উপায়

তর্কের খাতিরে বলা যায়, ফেসবুককে আপনি যেসব তথ্য দেখার, ব্যবহারের ও বিশ্লেষণের অনুমতি দিয়েছেন, সেগুলো কিছুটা রদবদল করে ফেসবুকের ট্র্যাকিং সক্ষমতায় লাগাম টেনে ধরা সম্ভব। তবে যতদিন আপনি এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করছেন, আপনাকে লক্ষ্য করে প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য যথেষ্ট ডেটা সংগ্রহের কাজ চলতে থাকবে।

'এই গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অত্যাচার' থেকে দূরে থাকার জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় একটিই—মাধ্যমটির ব্যবহার পুরোপুরি বাদ দেওয়া।

সবচেয়ে সহজ সমাধান ফেসবুক মুছে ফেলা। ছবি: সংগৃহীত
সবচেয়ে সহজ সমাধান ফেসবুক মুছে ফেলা। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক সারাক্ষণ আমাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে—অনেকেই এমনটা ভেবে থাকেন। রোমাঞ্চিত বা আতঙ্কিতও হন অনেকে। প্রায়ই ফেসবুকে মানুষকে এমন পোস্ট দিতে দেখা যায়, 'আমি ফেসবুককে আমার তথ্য ব্যবহারের অনুমতি দেই নি, ইত্যাদি ইত্যাদি'। 

তবে বাস্তব সত্য হল, আমরা এই প্ল্যাটফর্মকে যে ডেটাগুলো দিচ্ছি, সেটা ব্যবহার করে ফেসবুক আমাদের আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে প্রায় নিখুঁত অনুমান করতে পারছে—যা অনেক সময় সুবিধাজনকও বটে।

বিষয়টি খানিকটা অস্বস্তিকর হলেও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের যে সুবিধা ও সংযুক্ত থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে, তার বিনিময়ে এই সামান্য মূল্য না চুকালেই যেন নয়!

প্রযুক্তিগত  উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে, ডিজিটাল গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন আরো জোরালো হয়ে উঠছে। তবে ফেসবুক, তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের 'আড়ি পাতা'র অভিযোগ এখন পর্যন্ত ভিত্তিহীন বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

কাজেই আগামীতে আবার যখন অদ্ভুতভাবে খাপে খাপ মিলে যাওয়া কোনো বিজ্ঞাপন আপনার ফেসবুক ফিডে আসবে, মনে রাখবেন, এটি কোনো জাদু নয়, এটি শুধুই ডেটা বিশ্লেষণের খেলা।

ইংরেজি থেকে ভাবানুবাদ করেছেন মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago