আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

শামির ৭ উইকেটে ফাইনালে ভারত

শামির ৫৭ রানে ৭ উইকেটের অসাধারণ বোলিং ফিগারে চড়েই ভারত পেয়েছে ৭০ রানের জয়।

শামির ৭ উইকেটে ফাইনালে ভারত

শামির ৭ উইকেটে ফাইনালে ভারত
ছবি: রয়টার্স

মোহাম্মদ শামির সবকিছু স্বপ্নের মতোই লাগতে পারে! তার হাত থেকে ছোঁড়া প্রত্যেক বলেই যেন উইকেটের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শুরতেই ২ উইকেট নিয়ে ভারতকে এগিয়ে দিলেন তিনি। এরপর ড্যারিল মিচেলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ড যখন ঘুরে দাঁড়াল, তখন আবার ডানহাতি পেসার শামি হাজির এক ওভারে ২ উইকেট নিয়ে। শেষদিকে আরও ৩ উইকেট তুলে একাই ৭ উইকেট শিকার করে ফেললেন!

বুধবার মুম্বাইয়ে শামির ৫৭ রানে ৭ উইকেটের অসাধারণ বোলিং ফিগারে চড়েই ভারত পেয়েছে ৭০ রানের জয়। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এবারের আসরের প্রথম সেমিতে স্বাগতিকদের ৪ উইকেটে ৩৯৭ রানের জবাবে কিউইরা ৪৮.৫ ওভারে অলআউট হয়েছে ৩২৭ রানে।

এক যুগ পর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ভারত। ঘরের মাঠে ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আবারও সেই হাতছানি রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দলের সামনে। সব মিলিয়ে চতুর্থবার শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে জায়গা করে নিল ভারত। আগামী রোববার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে শিরোপার লড়াইয়ে নামবে তারা। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালের বিজয়ী দল।

মুম্বাইয়ে ব্যাটাররা সবচেয়ে কঠিন সময় পার করেছেন দ্বিতীয় ইনিংসের পাওয়ারপ্লেতে। জাসপ্রিত বুমরাহ যদিও শুরুতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ভুগেছেন। পরে নিখুঁত বোলিংয়ে ঠিকই ৫ ওভারের স্পেলে ২৩ রানের বেশি দেননি। তবে আঘাত হানার কাজটা করেছেন মোহাম্মদ শামি। ষষ্ট ওভারে প্রথম বল করতে এসেই উইকেট পেয়ে যান তিনি। কিপারে ক্যাচ দিয়ে ১৩ রান করে ডেভন কনওয়ে ফিরলে ৩০ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড। পরের ওভারে আবার শিকার করেন শামি। রাচিন রবিন্দ্রকেও ১৩ রানে ফিরিয়ে দিলে ৩৯ রানে দুই ওপেনার ফিরে যান সাজঘরে।

কেন উইলিয়ামসন নিরাপদে শুরু করেন। কিন্তু ড্যারিল মিচেলের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করে কিউইরা। পেসে দুর্দান্তভাবে ইনফিল্ডের উপর দিয়ে তুলে মেরে বাউন্ডারি বের করেন মিচেল। স্পিনে প্যাডল সুইপে নিয়মিত সিঙ্গেল বের করতে থাকেন দুই ব্যাটার। ১৭তম ওভারে একশ পেরিয়ে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে নিউজিল্যান্ড। ৮৭ বলে তাদের জুটিও শতরান স্পর্শ করে। ৪৯ বলে মিচেলের ফিফটির পর উইলিয়ামসন তার ফিফটি পেয়ে যান ৫৮ বলে। ২৯তম ওভারে বুমরাহকে রোহিত শর্মা ফেরাতেই উইকেটের সুযোগ চলে আসে। কিন্তু মিডঅনে শামির হাত থেকে সহজ ক্যাচ ফসকে যায়।

মিচেল-উইলিয়ামসন জুটিতে ভারত দলের চোখেমুখে দুশ্চিন্তা ফুটে উঠে। ৫২ রানে উইলিয়ামসনকে জীবন দেওয়া শামিই পরে এসে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন। ৮ চার ও ১ ছয়ে ৬৯ রানের ইনিংস খেলে উইলিয়ামসন আউট হয়ে যান স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে। টম ল্যাথামকে এক বল পরই এলবিডাব্লিউ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন শামি। দুই ওভারের স্পেলে দুই উইকেট দিয়ে শামি দেন মাত্র ৪ রান। তার ডাবল উইকেটের ৩৩তম ওভারের পরই নিউজিল্যান্ডের উপর চেপে বসে ভারত। ৩২তম ওভার থেকে ৩৭তম ওভার- ছয় ওভারে মাত্র ২৩ রান দেন ভারতীয় বোলাররা।

এরপরের তিন ওভারে ত্রিশ রান এনে শেষ দশ ওভারে ১৩২ রানের প্রয়োজনে চলে আসে নিউজিল্যান্ড। সিরাজের এক ওভারে তিন বাউন্ডারি মেরে গ্লেন ফিলিপস এনে ফেলেন ২০ রান। বিধ্বংসী ফিলিপস ৩৩ বলে ৪টি চার ও ২ ছয় মেরে ৪১ রান করে আউট হন বুমরাহর বলে। আর কুলদপের বলে মার্ক চ্যাপমান ২ রানে ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে। তখনই নিউজিল্যান্ডের আশার বেলুন চুপসে যায় অনেকটুকুই। ২৯৮ রানে ষষ্ঠ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মিচেলও ৩০৬ রানে চলে যান। ১১৯ বলে ৯ চার ও ৭টি ছক্কায় ১৩৭ রানের ইনিংস খেলে ৪৬তম ওভারে মিচেল ফিরে যান। শেষ তিন উইকেট ২১ রানেই খুইয়ে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয়ে যায় ৭ বল বাকি থাকতে।

টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে প্রথম ওভারেই সব চাপ ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন রোহিত। ট্রেন্ট বোল্টের ওভারে দুটি চার মেরেই ভারতের বার্তা দেওয়া শুরু। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলা রোহিত এদিন আরও আক্রমণাত্মক রূপে দেখা দেন। রোহিতের ব্যাটে একের পর এক বাউন্ডারি ৫.২ ওভারে পঞ্চাশ রান এনে উড়ন্ত শুরু পেয়ে যায় ভারত। প্রথম পাঁচ ওভারে তিন ছক্কা মেরে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড, এক আসরে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড নিজের করে নেন। কিন্তু রোহিতের ঝড় থেমে যায় কিছুক্ষণ পর। টিম সাউদির স্লোয়ারে তুলে মারতে গিয়ে ৪৭ রানে আউট হয়ে যান। ২৯ বলের ইনিংসে মারেন ৪টি করে ছক্কা ও চার।

একপাশে দর্শক বনে যাওয়া শুবমান গিল পরে তার ঝলক দেখান। ৭১ রানে রোহিতকে হারানো ভারত পাওয়ারপ্লেতেই এনে ফেলে ৮৪ রান। একশ পূর্ণ করতে ভারত নেয় মাত্র ৭৪ বল। ৪১ বলে ফিফটি পেয়ে যাওয়ার পর আরও আক্রমণাত্মক হন গিল। ততক্ষণে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের সকল অস্ত্রই মাঠে নামানো সারা। কিউই কোন বোলারই ভারতের সামনে যেন কোন ধরনের হুমকিই ছুড়ে দিতে পারেননি। আত্মবিশ্বাসের সাথে কোহলি তার মত দেখেশুনে খেলে যাচ্ছিলেন। গিল বাদে ভারতের প্রথম পাঁচ ব্যাটারের সবাই সেঞ্চুরি পেয়েছেন চলতি বিশ্বকাপে। প্রথম সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছিলেন গিল, কিন্তু ৬৫ বলে ৭৯ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে নেমে যেতে হয় তাকে। পায়ে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়ার আগে তার ইনিংসে ৮ চারের সাথে মারেন ৩ ছক্কা।

শ্রেয়াস আইয়ার এসে ভারতের ইনিংসের ছন্দে ছেদ পড়তে দেননি একটুও। ৫৯ বলে কোহলি ফিফটি পেয়ে যান। ২৮.১ ওভারেই দুইশ পূর্ণ করে ফেলে ভারত। ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে হিটিংয়ে অবিশ্বাস্য দক্ষতা দেখান আইয়ার। ছক্কার মারে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন তার ইনিংস। ৩৫ বলে ফিফটি যখন পেয়ে গেছেন, ততক্ষণে ৪টি ছক্কার মার সারা তার। একপাশ আগলে রেখে খেলে যাওয়া কোহলি এগিয়ে যান সেঞ্চুরির পথে। শেষ দশ ওভারে ভারত প্রবেশ করে ২৮৭ রানে থেকে। কোহলি ঐতিহাসিক ৫০তম সেঞ্চুরি পেয়ে যান ১০৬ বলে। ১০৭ রানে পরে জীবন পেয়ে গেলেও কোহলি শেষমেশ মুম্বাইয়ের দর্শকদের মাতিয়ে চলে যান ১১৭ রানে।

১১৩ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কা মেরে আউট হয়ে ফিরছেন যখন, ভারতের ৪৪ ওভারে রান ৩২৭। এরপর আলোড়ন তুলেছেন আইয়ার। ফিফটির পর আরও ৪টি ছক্কা মারেন আইয়ার। ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরিটা করে ফেলেন মাত্র ৬৭ বলে। ৮ ছক্কা ও ৩ চারে ৭০ বলে ১০৫ রানে অসাধারণ ইনিংস খেলে ফিরে যান ৪৯তম ওভারে। সূর্যকুমার এসে প্রথম বলে আউট হয়ে যান। কিন্তু পাঁচে নামা রাহুলের ২০ বলে ৩৯ রানের ক্যামিওতে ভারত থামেনি ৩৯৭ রানের কমে। ১০ ওভারে ১০০ রান দিয়ে ফেলা সাউদির কপালে জুটে ৩টি উইকেট।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago