এই খারাপ সময়ে কেউ না থাকলেও আমরা আছি: পাপন
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিব্রতকর হারের পর ক্রিকেটারদের কয়েকজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নাজমুল হাসান পাপন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির মতে, সাকিব আল হাসানদের নিয়ে যে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে, সেটা স্বাভাবিক। বেহাল পারফরম্যান্সের কারণে খেলোয়াড়রা নিজেরাও হতাশায় পুড়ছেন বলে জানান তিনি। তবে এই দুঃসময় থেকে উত্তরণে তাদের পাশে থাকার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সাধারণত বড় কোনো টুর্নামেন্ট হলে শুরু থেকেই দলের সঙ্গে থাকেন পাপন। কিন্তু ভারতের মাটিতে এবারের বিশ্বকাপে দেখা যায় ব্যতিক্রম। ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন শুক্রবার কলকাতায় পৌঁছান তিনি। এরপর এক দফা আলোচনায় বসেন ক্রিকেটারদের সবার সঙ্গে। তাতে অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টায়নি। বরং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণ করে হতাশা আরও গাঢ় করেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব যেটাকে অভিহিত করেছেন 'এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না' বলে।
রোববারের বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সামনে হাজির হন বোর্ড প্রধান। তবে কোনো প্রশ্ন নেননি তিনি। নিজের মতো করে একটানা কথা বলে যান। বেশ কয়েক মিনিট।
সংকটপূর্ণ পরিবেশে ক্রিকেটারদের সমর্থন দিয়ে যাওয়ার কথা বলেন পাপন, 'কথা বলে মনে হয়েছে, ওরা এখন অনেক বেশি সিরিয়াস। এই ব্যাপারটা চিন্তা করছে। কীভাবে আরো ভালো করা যায় এবং আশা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি ওদের একটা কথা বলেছি, খারাপ সময়ে মানুষজন খারাপ বলবেই। এটাই স্বাভাবিক। কারণ ভালো সময়ে তো মানুষ মাথায় নিয়ে নাচে। তাহলে খারাপ সময়ে বলবে না কেন? এটা তাদের অধিনায়ক। কিন্তু এই খারাপ সময়ে কেউ না থাকলেও আমরা আছি। কীসের জন্য আছি? সামনে ওরা যেন ভালো খেলে সেজন্য। এই বিশ্বাসটুকু ওদের ওপর আমার আছে। আমাদের যে শক্তি-সামর্থ্য আছে, সেটা দিয়েই আমাদের লড়তে হবে।'
আপাতত কোনো পরিবর্তন আনার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি দলের মনোবল চাঙা করার দিকেই মনোযোগী, 'আমার কাছে একটা সময় মনে হয়েছে, ওরা হয়তো মানসিকভাবে অনেক তলানিতে। এখানটায় খুব একটা কিছু বলার বা করার আমাদের নেই। যেহেতু একটা বিশ্বকাপ চলছে, এখানে এসে আমরা ইচ্ছা করলেও... কোনো পরিবর্তন আনতে চাইলেও পারব না। এটা হয়তো আপনারা সবাই বোঝেন। তাই আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের সামনে তিনটা ম্যাচ আছে। এই তিনটা ম্যাচ কীভাবে আমরা ভালো খেলতে পারি, এটা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই এবং এটা করতে গেলে দুটা জিনিস লাগবে... ওদেরকে সাহস ফিরিয়ে দেওয়া, ওদের মধ্যে সাহসটা জাগানো। ওদের মধ্যে বিশ্বাসটা জাগানো যে ওরা পারবে এবং ওরা পারে।'
'আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যেহেতু টুর্নামেন্ট চলছে, আমরা যে (বাকি) তিনটা ম্যাচে আহামরি কিছু করে ফেলব, সেটাও জোর দিয়ে বলতে পারছি না। এটা বাস্তবতা। এটা বুঝতে হবে। তবে আমরা সক্ষম। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এখনও সম্ভব তাদের পক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলা। হার-জিত বড় কথা না, ভালো ক্রিকেট খেলা। আমাদের ব্যাটিং ভালো হচ্ছে না। ওদের এটা বলছি, "তোমাদের পাল্টা লড়াই করা উচিত।" ওরা কী চায় বলুক। যখন যা লাগে, আমরা আছি। ওদের যেটা প্রয়োজন, আমরা করতে রাজি আছি। ওদের কোনো প্রস্তাব থাকলে আমরা নিতে রাজি আছি। ওরা কথা দিয়েছে, ওরা বসবে। ওরা বলেছে, তেমন কিছু চাওয়া বা পাওয়ার কিছু নেই, কেবলমাত্র পারফর্ম করা ছাড়া। এখন পারফর্ম মানে তো ওদের নিজেদের মধ্যে সেই সাহসটা আসতে হবে। ওদের নিজেদেরই খেলতে হবে।'
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের নিদারুণ ব্যর্থতাই প্রকট হয়ে উঠছে এবারের বিশ্বকাপে। একইসঙ্গে তিন বিভাগের পারফরম্যান্স নিয়েই যে প্রবল সমালোচনা চলছে, সেখানে আপত্তির কিছু দেখেন না পাপন, 'ওরা সকলে মিলে বলছে, ওরা সকলে একত্রিত আছে। তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। রান পাচ্ছে না, ওরা নিজেরাও অবাক... আমাদের সারাদেশের মানুষ ক্রিকেটকে এতো ভালোবাসে, ক্রিকেটের প্রতি তাদের যে আবেগ, তারা যে কতটা কষ্ট পেয়েছে, এটা চিন্তা করে ওদের (খেলোয়াড়দের) আরও বেশি খারাপ লাগছে। কারণ ওরাই তো সুপারস্টার ছিল সব সময়। একদিন-দুইদিনের না, এত বছরের ক্যারিয়ার ওদের। ওরা রান পাচ্ছে না, ওরা নিজেরাও তা মেনে নিতে পারছে না।'
'এটাই ওদের বললাম। মানুষ এখন খারাপ বলবে। না বলার কোনো কারণই নেই। মানুষ ক্রিকেটকে ভালোবাসে বলেই তো এ ধরনের খেলা খেললে বা হারলে খারাপ বলবেই। মানুষজন বোর্ডকে বলবে, কোচিং স্টাফদের বলবে, খেলোয়াড়দের বলবে। এটা স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আমরা একমত। এটা আমাদের এখানে বলার সুযোগ নেই যে, বলা (সমালোচনা করা) ঠিক হয়নি বা বলা ঠিক না।'
Comments