সাকিবের ৩০ ঘণ্টার ঢাকা সফর ও বাংলাদেশ দলের আবহ
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ কি এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ? বদলে যাওয়া প্রেক্ষিত আর সামগ্রিক আবহ তো দিচ্ছে তেমনই ইঙ্গিত। বিশাল সব হারে বিশ্বকাপে বড় কিছু করার স্বপ্ন এরমধ্যেই গায়েব। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তাই অনেকটা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। জিতলে ভালো, তবে পা হড়কালে দেশের ক্রিকেটের ভিতই যেন নড়ে যাবে।
মহা গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে সব মনোযোগ নিজের দিকে সরিয়ে নেন সাকিব। বুধবার মুম্বাই থেকে দলের সঙ্গে কলকাতা না এসে সবার অগোচরে ঢাকায় চলে যান তিনি।
সাকিবের আচমকা ঢাকা সফর এতটাই আড়াল রাখা হয়, যে তার মিরপুর পর্যন্ত যাওয়ার আগে কেউ জানতেই পারেননি। বুধবার দুপুরে মুম্বাইর বিমানবন্দরমুখী টিম বাসে সাকিবকে দেখা যায়নি। তখন দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তিনি আলাদাভাবে পরে যোগ দেবেন দলে। কিন্তু তিনি যে দেশে ফিরে যাচ্ছেন, সেটা ছিল একদমই অজানা।
ফেরার কারণও বেশ চমকজাগানিয়া । সাকিব ঢাকায় ফিরেছেন ব্যাটিং অনুশীলন করতে! বিশ্বকাপে বল হাতে কিছুটা ভালো করলেও ব্যাটিংয়ে মলিন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১ রানে ক্যাচ দেওয়ার পর হতাশায় ব্যাট দিয়ে স্টাম্প ভাঙতে উদ্যত হয়েছিলেন, পরে সামলে নেন নিজেকে। রান ফিরে পেতে তাই ঢাকা সফর। কিন্তু জাতীয় দলের এতজন কোচিং স্টাফ থাকতে তার ঢাকায় ফিরে অনুশীলনে নামতে হচ্ছে কেন, এই প্রশ্ন হয়েছে জোরালো।
ঢাকায় ফিরে শৈশবের কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমের সঙ্গে দুটো অনুশীলন সেশন সারেন সাকিব। শুক্রবার আরেকটি সেশন থাকলেও তা না করেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা বেলায় ফিরে আসেন কলকাতায়। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টায় তাকে হোটেল তাজ বেঙ্গলে ঢুকতে দেখা যায়। এদিন মিরপুরের ইনডোরে অনুশীলন সেশন করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কিছু সমর্থকের রোষানলেও পড়েন সাকিব। একটি ভিডিওতে দেখা যায় দেশের শীর্ষ তারকাকে 'ভুয়া', 'ভুয়া' বলছেন তারা। সাকিবের তড়িৎ ফিরে আসার পেছনে এসব কারও থাকতে পারে।
বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ধরলে সাকিবের ঢাকায় অবস্থান আনুমানিক ৩০ ঘণ্টার। এই কয়েক ঘণ্টায় অনেকগুলো খবরের জন্ম হয়েছে। অনেক ধারণাও ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ বাংলাদেশ দল থেকে তার ঢাকা সফর নিয়ে কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
অধিনায়ক যখন ঢাকা থেকে কলকাতায় ফিরছেন, ইডেনে তখন অনুশীলনে বাংলাদেশ দল। পুরো অনুশীলনে দলের আবহ ছিল বেশ থমথমে। ক্রিকেটাররা নিজেদের আড়ষ্ট করে রেখেছেন। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও আছেন বেশ চাপে, তার চেহারায় ফুরফুরে আমেজের বদলে দেখা গেছে চিন্তার রেখা।
অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে লম্বা সময় আলাপ করতে দেখা যায় হাথুরুসিংহকে। ভারতের উইকেটগুলোতে বিশ্বকাপে বড় রান হলেও বাংলাদেশ দল হাঁটছে উল্টো পথে। ডাচদের বিপক্ষে নিশ্চয়ই ব্যাটিং নিয়েও ভাবতে হচ্ছে বেশি।
সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি বোধহয় হারের ভীতি। ডাচদের বিপক্ষে কোন কারণে হেরে গেলে কি হবে সেই চাপে হয়ত কাবু পুরো দল। এই অবস্থা থেকে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানো কিংবা ভেঙে পড়ে দুটোর যেকোনো একটি হতে পারে।
Comments