এত লুকোছাপা করে লাভটা কি হচ্ছে?
তথ্য যত আড়াল করবেন, আরও অনেক তথ্য-তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য। তথ্য বিকৃতির সুযোগও তাই বেড়ে যায়। ঠিক সময়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহ করলেই কেবল বিভ্রান্তি আটকানো সম্ভব। এই নীতি অনুসরণে অবশ্য আগ্রহ নেই বাংলাদেশ দলের এবং অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। বরং তথ্য যত আড়াল করা যায়, সেই চেষ্টাই চলে প্রাণপণ। এবার বিশ্বকাপেও দেখা যাচ্ছে একের পর এক তথ্য লুকানোর চেষ্টা।
গতকাল বুধবার মুম্বাই থেকে কলকাতা এসেছে বাংলাদেশ দল। দলের সঙ্গেই আসার কথা ছিল সাকিব আল হাসানেরও। অথচ দুপুরে মুম্বাইতে টিম হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দরগামী বাসে নেই অধিনায়ক সাকিব!
তিনি কোথায়? তখন জানা যায়, আলাদা করে যাচ্ছেন, পরে যোগ দেবেন দলের সঙ্গে। ঘণ্টা তিনেক পর সাকিবকে আবিষ্কার করা হয় ঢাকার মিরপুরে। সেখানে শৈশবের কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমের সঙ্গে অনুশীলন করতে গিয়েছেন তিনি। জাতীয় দলের সঙ্গে এত কোচ থাকতেও তাকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হলো কেন, এই প্রশ্ন করছেন কেউ কেউ। ক্রিকেটাররা নিজেদের স্বস্তির জায়গা থেকে শৈশবে কোচের কাছে যেতেই পারেন। তাতে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়নি বটে। সাকিবও এই প্রয়োজন মনে করে অনিয়ম করেননি।
কিন্তু বিশ্বকাপ চলাকালীন যেকোনো প্রয়োজনে অধিনায়ক দেশে ফিরে যাচ্ছেন, এই তথ্য জানালে কি সমস্যা হতো বোর্ডের? সাকিব বাংলাদেশে ফিরে ঢাকায় গিয়ে মিরপুরে অনুশীলন করলে সেটা কি লুকিয়ে রাখা আদৌ সম্ভব?
আড়ালে থাকেওনি। বিশ্বকাপে চার ম্যাচ খেলে যথাক্রমে ১৪, ১, ৪০ ও ১ রান করা সাকিব ব্যাটিংয়ের ছন্দহীনতা নিয়েই যে চিন্তিত তা বোঝা গেছে ফাহিমের কথায়। বিস্তারিত না জানালেও দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, সাকিবের ব্যাটিং নিয়ে কাজ চলছে, 'আমি গভীরে যাব না। কিন্তু আমরা তার ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছি। সে নিজ থেকে চাইছে কাজ করতে। আমরা তার ব্যাটিংয়ের কিছু জায়গা নিয়ে কথা বলছি।'
বরং এই লুকোছাপাতে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি, হচ্ছে তথ্য বিকৃতি। এর আগে বড় টুর্নামেন্টের মাঝেও সাকিবের দল ছেড়ে ক্রিকেটের বাইরের অন্য কাজে যাওয়ার নজির আছে। এশিয়া কাপ চলাকালীনও তিনি দেশে ফিরেছিলেন। তখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, ছড়িয়েছিল নানাবিধ বিভ্রান্তি। এবারও ব্যতিক্রম নয়। দলের ভেতর থেকেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেউ কেউ সাকিবের আচমকা দেশে ফেরা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন। বোঝা যাচ্ছে, কোথায় কী হচ্ছে তা নিয়ে থেকে যাচ্ছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা।
শুধু সাকিবের আচমকা দেশে ফেরা নিয়ে কেন, চোট নিয়েও এতই গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে যেন এসব করলে বাংলাদেশের মাঠের খেলায় পড়বে ইতিবাচক প্রভাব! চেন্নাইতে সাকিব পেশিতে টান পাওয়ার পর দুই দফা তার এমআরআই করা হলেও রিপোর্টে কী আছে তা জানানো হচ্ছিল না। ভারতের বিপক্ষে রহস্য রেখেই পরে খেলেননি সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফিরলেও ম্যাচের আগে ছিল দোলাচল। পেসার তাসকিন আহমেদের চোট নিয়েও একই অস্পষ্টতা চলমান। তিনি কতটা ফিট, তার সমস্যার মাত্রা কোন পর্যায়ে তা এখনো রেখে দেওয়া হয়েছে ধোঁয়াশায়।
অথচ অন্য সবগুলো দলকেই দেখা যায়, এসব তথ্য স্পষ্টভাবে এবং জরুরি ক্ষেত্রে অনেক বেশি করে জানাতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের দিন গোড়ালিতে চোট পান হার্দিক পান্ডিয়া। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে শুরুতেই ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় হার্দিকের সর্বশেষ অবস্থা। এরপর হার্দিকের বেঙ্গালুরুতে পুনর্বাসনে যাওয়া, তার শারীরিক অবস্থার খবর জানানো হয়েছে একাধিকবার। কোনো রকমের তথ্য ঘাটতি যেন না হয়, সেই চেষ্টা ছিল দলটির।
একইভাবে, কেইন উইলিয়সমনের বেলাতে নিউজিল্যান্ড যাবতীয় তথ্য নিয়মিত দিয়েছে গণমাধ্যমে। বেন স্টোকসকে নিয়েও পরিষ্কার চিন্তায় এগিয়েছে ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট।
বিশ্বকাপে মাঠের পারফরম্যান্সে তলানির দিকে বাংলাদেশ দল। প্রশ্ন হচ্ছে, মাঠের বাইরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে তথ্য আড়ালের সংস্কৃতি কি বাংলাদেশকে এই সংকট থেকে উত্তরণে কোনো সুফল দিচ্ছে? তথ্য লুকিয়ে কি দলের আবহ ঠিক রাখা, খেলার ঝাঁজ ফিরিয়ে আনার কোনো উপায় আছে?
কলকাতা এসে প্রথম দিন স্বাভাবিকভাবে বিশ্রামে ছিল বাংলাদেশ দল। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইডেন গার্ডেনসে অনুশীলনে নামবেন ক্রিকেটাররা। তখন সাকিব এককভাবে নেটে সময় পার করবেন ঢাকায়। নেদারল্যান্ডস ম্যাচের আগে প্রবল চাপে থাকা বাংলাদেশ গণমাধ্যমের নাগাল থেকে নিজেদের আরও গুটিয়ে নেয় কিনা সেটাও দেখার বিষয়।
Comments