আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের চার ওপেনারের চমকপ্রদ যত রেকর্ড!

ওয়ার্নার দুবার আর শফিক ও ইমাম একবার করে— চার ওপেনারের তিনজনই জীবন পান। একজন বাকি যিনি, তিনিই কোনো জীবন উপহার পাননি। অথচ তারই ছিল জন্মদিন!

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের চার ওপেনারের চমকপ্রদ যত রেকর্ড!

ছবি: এএফপি

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে গতকাল শুক্রবার রান হয় ৬৭২। তাতে দুই দলের ওপেনারদের অবদান ৪১৮ রান। অর্থাৎ ম্যাচের প্রায় ৬২ শতাংশ রানই আসে ওপেনারদের উইলো থেকে। শুধু অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে তো আরও বেশি— ৩৬৭ রানের ৭৭ ভাগই তো ওপেনারদের! দিনটা ছিল ওপেনিংয়ে নামা ব্যাটারদের, অনায়াসে বলা যেতে পারে। ওপেনাররা মজার মজার সব রেকর্ডও গড়েন এদিন।

ছক্কা দিয়েই শুরু করা যাক। ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ ছক্কা মারেন ৯টি করে। তার মানে, মোট ১৮টি ছক্কা আসে অজি ওপেনারদের থেকে। বিশ্বকাপে কোনো দলের দুই ওপেনার মিলে এত বেশি ছক্কা মারতে পারেননি এর আগে। বিশ্বকাপে কেন! ওয়ানডে ইতিহাসেই কোনো ম্যাচে একটি দলের ওপেনাররা মিলে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকান এদিন। এর আগে বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনো দলের দুই ওপেনার মিলে সর্বোচ্চ ১৬ ছক্কা মেরেছিলেন। ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনাররা তা করেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এখানে আসলে দুই ওপেনার বললে ভুল হয়ে যায়। ১৬ ছক্কাই যে সীমানা পাড়ি দিয়েছিল একজনের ব্যাটের আঘাতে— তিনি ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ক্রিস গেইল!

এই দুই ম্যাচের বাইরে কোনো দলের দুই ওপেনার মিলে বিশ্বকাপের এক ম্যাচে ১৫টি ছক্কাও মারতে পারেননি। অজি দুই ওপেনারের সঙ্গে পাকিস্তানি দুজন— আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম উল হককেও জড়িয়ে দিলে ছক্কার আরও একটি রেকর্ডে ভাগ বসানো যায়। চার ওপেনার মিলে মোট ২০টি ছক্কা মারেন এই ম্যাচে। বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে ২০টির বেশি ছক্কা দুই দলের ওপেনাররা মিলে মারতে পারেননি কখনোই। সমান ২০টির নজির আছে অবশ্য। নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনাররা মিলে তা করেছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপে।

ছবি: এএফপি

ছক্কা গেল, এবারে রানে আসতে হয়। চার ওপেনারই রান করেন পঞ্চাশের বেশি করে। আর হ্যাঁ, এখানেও রেকর্ড! ওপেনিংয়ে চারজনেরই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস এদিনই বিশ্বকাপ দেখে প্রথমবার। তাদের মধ্যে দুজনের রান সেঞ্চুরি পেরিয়ে তবেই থেমেছে। সেটা আবার একই দেশের দুজনের হওয়ায় এখানেও রেকর্ডের দেখা মিলে যায়! বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার একই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি এর আগে কখনোই। সব মিলিয়ে যদিও আরও ছয়টি ওয়ানডেতে এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে অজিরা।

বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনো দলের দুই ওপেনারের শতকের ঘটনা অবশ্য আছে আরও তিন ম্যাচে। ২০১১ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার উপুল থারাঙ্গা ও তিলকরত্নে দিলশান— দুই ওপেনারই সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। লঙ্কানরাই আবার ওই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও একইভাবে দুই ওপেনারের থেকে সেঞ্চুরি পেয়েছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে শতরান হাঁকানো দুজনও ছিলেন থারাঙ্গা ও দিলশান। আরেকটি এমন ঘটনায় অবশ্য উল্টো পিঠে ছিল লঙ্কানরা। ২০১৯ বিশ্বকাপে তাদের বিপক্ষে ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল সেঞ্চুরি হাঁকান।

এবার আসা যাক স্রেফ রানের হিসাবে! অজি দুই ওপেনারের প্রসঙ্গেই প্রথমে নজর রাখা যায়। ওয়ার্নারের ১৬৩ ও মার্শের ১২১ মিলে হয় ২৮৪। দুই ওপেনারের কাছ থেকেই এত রান বিশ্বকাপে পায়নি কোনো দল! এর আগে কোনো দলের দুই ওপেনার মিলে সর্বোচ্চ ২৭৭ রান করেছিলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১১ বিশ্বকাপে থারাঙ্গার ১৩১ রানের ইনিংসের সঙ্গে দিলশান খেলেছিলেন ১৪৪ রানের ইনিংস। দলের ওপেনাররা বিশ্বকাপের মঞ্চে এত এগিয়ে দিচ্ছেন, এমনটা বিরলই। অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা— এই দুই দলের বাইরে আর কোনো দলই তো বলতে পারবে না যে, তাদের দুই ওপেনার মিলে বিশ্বকাপের ম্যাচে ২৫০ রানের বেশি দিয়েছেন। 

শুধু কী দুই সেঞ্চুরিয়ানের কীর্তিগাঁথা গাইলে হবে! ম্যাচের আরও যে রেকর্ড হয়েছে, তাতে তো অবদান আছে বাকি দুই ওপেনারেরও। অজি দুই ওপেনারের ২৬৪ রানের সঙ্গে পাকিস্তানি দুই ওপেনারের রান যোগ করলে পাবেন রেকর্ডের দিশা। অজিদের ২৮৪ রানের সঙ্গে পাকিস্তানিদের ১৩৪ রান— মিলিয়ে হয় ৪১৮ রান। 

চার ওপেনার মিলেই তো চারশর বেশি রান করে ফেললেন! বিশ্বকাপে এক ম্যাচে চার ওপেনার মিলে চারশ রানের বেশি করতে পারেননি এর আগে কখনোই। ২০১১ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ের ম্যাচে চার ওপেনার মিলে ৩৯২ রান করেছিলেন, যা সর্বোচ্চ ছিল এতদিন।

বিশ্বকাপের গণ্ডি বাদ দিয়ে সব ওয়ানডের পরিসংখ্যানে গেলে দেখা যায়, বেঙ্গালুরুতে ওপেনারদের মিলিত রানটা হচ্ছে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২০০৯ সালে ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে চার ওপেনার মিলে ৪৪২ রান এনেছিলেন। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ইংল্যান্ডের ম্যাচে ওপেনারদের মিলিত রান ছিল ৪২৩। আর ২০০৯ সালেই এদিনের মতো ওপেনারদের থেকে ৪১৮ রান এসেছিল ভারত-অস্ট্রেলিয়ার এক ম্যাচে।

ওপেনার, ওপেনার বলা হচ্ছে বারবার, তাদের জুটির কথাও তো বলতে হয়! মার্শ-ওয়ার্নারের ২৫৯ রানের জুটি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে যেকোনো উইকেটেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ওসব রেকর্ড তো থাকছেই, মজার রেকর্ড তো অন্য একটি!

অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান দুই দলই ওপেনিংয়ে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ পায়। বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচে দুই দলেরই উদ্বোধনী জুটি সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে গেছে, এমনটা হয় কেবল তৃতীয়বারের মতো। অস্ট্রেলিয়ার ২৫৯ রানের পর ওপেনিং জুটিতে পাকিস্তানে আনে ১৩৪ রান। মানে দাঁড়ায়, ম্যাচে উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে মোট ৩৯৩ রান। বিশ্বকাপে দুই দলের ওপেনিং জুটিতে ৩৯৩ রানের চেয়ে বেশি এসেছে আর মাত্র একবার। শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ের ওই ২০১১ বিশ্বকাপের ম্যাচেই। এই দুই ম্যাচের বাইরে ওপেনিং জুটি থেকে তিনশর বেশি রান কখনোই আসেনি বিশ্বকাপের মঞ্চে।

'আজ ঘুম থেকে উঠে কার মুখ দেখেছ?' ভাগ্যের কথা বোঝাতে এই প্রশ্নটা আপনিও ব্যবহার করেছেন নিশ্চয়ই! সুযোগ পেলে তা অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান ম্যাচের ওপেনারদেরকে করা যেত! ওয়ার্নার দুবার আর শফিক ও ইমাম একবার করে— চার ওপেনারের তিনজনই জীবন পান। একজন বাকি যিনি, তিনিই কোনো জীবন উপহার পাননি। অথচ তারই ছিল জন্মদিন! নিখুঁত ইনিংসে মার্শ অবশ্য ফিল্ডারদের ওই সুযোগই-বা দেন কোথায়!

ওয়ার্নার-মার্শ জুটিকে ফেলা যায় মূলত শক্তিনির্ভর স্টাইলের আদলে, আর শফিক-ইমাম জুটি শৈল্পিক ঘরানার। দুই জুটি দুই ধরনের কৌশলের। তবে ভিন্নতা থাকলেও উপভোগ্য জুটিদ্বয় ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্য তো ফুটিয়ে তুললই, মজাদার সব রেকর্ডেরও জন্ম দিল!

Comments

The Daily Star  | English

Public admin reforms: Cluster system may be proposed for ministries

The Public Administration Reform Commission is likely to recommend reducing the number of ministries and divisions to 30 from 55 to improve coordination and slash the government’s operational cost.

8h ago