আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

আফগানিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুই ওপেনার আগেভাগে ফিরলেও সুর-তাল ধরে রাখল টাইগাররা।

আফগানিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান
ছবি: এএফপি

স্পিনাররা দিলেন নেতৃত্ব। সম্মিলিতভাবে বোলাররা গড়ে দিলেন জয়ের মঞ্চ। এরপর ছোট লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুই ওপেনার আগেভাগে ফিরলেও সুর-তাল ধরে রাখল বাংলাদেশ। দারুণ জুটি গড়ে জোড়া হাফসেঞ্চুরি করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। মিরাজ বিদায় নিলেও শান্ত দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন।

শনিবার ভারতের ধর্মশালায় ২০২৩ আইসিসি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। একপেশে লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে তারা। ৯২ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে জিতেছে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন দল।

টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ রানে অলআউট হয় আফগানরা। জবাবে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান তুলে জয়ের উল্লাসে মাতে টাইগাররা। নাভিন উল হকের বলে টানা দুই চার মেরে ম্যাচ শেষ করে দেন শান্ত।

মাঠের ভেতরে নাজুক পারফরম্যান্স ও বাইরে নানা রকমের বিতর্ক সঙ্গী করে ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে বাংলাদেশ। সেসব ঝেড়ে ফেলতে শুরুটা ভালো হওয়ার দরকার ছিল। প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন না হলেও কয়েক মাস আগে দুই দলের মধ্যকার সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল আফগানরা। তাই শঙ্কা ছিলই। তবে বাংলাদেশের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সামনে উড়ে যায় সমস্ত বাধা।

দলের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান মিরাজের। ব্যাটে-বলে সমান তালে ভূমিকা রাখেন তিনি। অফ স্পিনে ৯ ওভারে ২৫ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ৭৩ বলে খেলেন ৫৭ রানের ইনিংস। ব্যাটিং অর্ডারে প্রোমোশন পেয়ে তিনে নেমে দেন তার ওপর রাখা আস্থার প্রতিদান। তিনি মারেন পাঁচটি চার। শান্ত অপরাজিত থাকেন ৮৩ বলে ৫৯ রানে। তার ব্যাট থেকে আসে তিনটি চার ও একটি ছক্কা।

অধিনায়ক হিসেবে সাকিবও ছিলেন প্রাণবন্ত। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ব্যাটিংয়ে কাঙ্ক্ষিত ফল করতে না পারলেও বোলিংয়ে তার হাত দিয়েই শুরু হয়েছিল আফগানিস্তানের উইকেট পতন। ৮ ওভারে ৩ উইকেট নিতে তার খরচা ৩০ রান।

লক্ষ্য তাড়ায় পেসার ফজলহক ফারুকির করা প্রথম ওভারেই দারুণ এক ফ্লিকে বাউন্ডারি আদায় করে নেন তানজিদ হাসান তামিম। বেশ সাবলীলই দেখাচ্ছিল তাকে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদায় ঘটে তার। ফারুকির করা পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে পয়েন্টে বল ঠেলেছিলেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। রান নিতে চেয়েছিলেন তানজিদ। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে যান। লিটন আগ্রহী না হলে ফিরতে গিয়েও পারেননি তানজিদ। নাজিবুল্লাহ জাদরানের দারুণ থ্রোতে স্টাম্প ভাঙলে ব্যক্তিগত ৫ রানে সাজঘরে ফেরেন তানজিদ।

এরপর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটনও। ফারুকির বল দ্বিধা নিয়ে খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ১৮ বলে দুটি চারের সাহায্যে ১৩ রান করেন তিনি। এরপর মিরাজের সঙ্গে দলের হাল ধরেন শান্ত। তৃতীয় উইকেটে ১২৯ বলে ৯৭ রানের জুটিতে কোনো চাপ জেঁকে বসতে দেননি তারা।

জুটিতে মিরাজ খেলছিলেন চালিয়ে। অসাধারণ ছন্দে থাকা শান্ত কিছুটা ধীরেসুস্থে ব্যাট করছিলেন। মিরাজ ৫৮ বলে হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছানোর পর নাভিনের বলে বিদায় নেন রহমত শাহর অসাধারণ ক্যাচে। এর আগে অবশ্য দুই দফা ক্যাচ তুলেও জীবন পান তিনি। ব্যক্তিগত ১৬ ও ২৩ রানে। আরেকবার তিনি বেঁচে যান এলবিডব্লিউ আউটের সিদ্ধান্তের বিপরীতে রিভিউ নিয়ে।

শান্ত ফিফটি স্পর্শ করেন ৮০ বলে। ওয়ানডেতে সবশেষ চার ম্যাচে এটি তার তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি। অন্য ইনিংসে পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। তবে গত ২০১৯ বিশ্বকাপে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং উপহার দেওয়া সাকিব টিকতে পারেননি। আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের বল পুল করে বাউন্ডারি মারার চেষ্টায় থামে তার ১৯ বলে ১৪ রানের ইনিংস। সীমানার কাছে ক্যাচ নেন ফারুকি। জয় তখন ছিল বাংলাদেশের হাতের নাগালে। সেই আনুষ্ঠানিকতা অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে সারেন শান্ত।

আফগানদের হয়ে একটি করে উইকেট নেন ফারুকি, নাভিন ও ওমরজাই। তবে যে দুজনকে ঘিরে প্রত্যাশা বেশি ছিল, তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। অফ স্পিনার মুজিব উর রহমান ৭ ওভারে ৩০ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। তারকা লেগ স্পিনার রশিদ খানও থাকেন উইকেটশূন্য। তিনি ৯ ওভারে দেন ৪৮ রান।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই করে আফগানিস্তান। ৪৭ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। পেসারদের স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলেছিলেন তারা। তবে স্পিনাররা আক্রমণে যাওয়ার পরই নামে অস্বস্তি। বাংলাদেশের সাফল্যও আসে দ্রুত। নিজেদের দ্বিতীয় ওভারেই এই জুটি ভাঙেন বাঁহাতি সাকিব। অফ স্টাম্পের বাইরে রাখা বলে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইব্রাহিম। ২৫ বলে ১টি ছক্কা ও ৩টি চারে ২২ রান করেন তিনি।

ইব্রাহিমের বিদায়ের পর রহমতকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন গুরবাজ। ৩৬ রানের জুটিও গড়েন তারা। এই জুটিও ভাঙেন সাকিব। তাকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে হেরফের করে সিলি মিড অফে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রহমত। ২৫ বলে ১৮ রান করেন তিনি। এরপর অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শহিদিকে কিছুটা মন্থর গতিতে আগাতে থাকেন গুরবাজ। ৫৭ বলে ২৯ রানের জুটি গড়েন তারা। জুটি ভাঙেন মিরাজ। তাকে স্লগ করতে গিয়ে আকাশে তুলে তাওহিদ হৃদয়ের তালুবন্দি হন হাশমতুল্লাহ। তার ব্যাট থেকেও আসে ১৮ রান।

এক প্রান্ত আগলে রেখে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন গুরবাজ। শেষ ১১ ইনিংসের যে দুটিতে ত্রিশ পার করেছিলেন, সেই দুবারই সেঞ্চুরি আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই ভীতি ছড়াচ্ছিলেন। এদিন ওয়ানডে ক্রিকেটে এক হাজার রানও পূর্ণ করেন তিনি। যা আফগানিস্তানের হয়ে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ড। তবে বড় ক্ষতি করার আগে তাকে ছাঁটাই করেন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। ডিপ কাভার থেকে ছুটে এসে ভালো ক্যাচ নেন তানজিদ। ৬২ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৭ রান করেন গুরবাজ।

পাঁচ বলের মধ্যে হাতশমতুল্লাহ ও গুরবাজ সাজঘরে ফেরার পর খেই হারায় আফগানিস্তান। ২ উইকেটে ১১২ রান নিয়ে এক পর্যায়ে ভালো অবস্থানে ছিল তারা। এরপর বাংলাদেশের বোলারদের তোপে ৪৪ রানে বাকি ৮ উইকেট হারায় দলটি।

নাজিবুল্লাহ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। তাকে ছাঁটাই করে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন সাকিব। মোহাম্মদ নবিও দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হন। বাকিরাও প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। ওমরজাই কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন। ৪টি বাউন্ডারির সাহায্যে ২০ বলে দ্রুত ২২ রান করেন তিনি। বড় ক্ষতি করার আগেই তাকে বোল্ড করে দেন শরিফুল ইসলাম। এর আগে-পরে রশিদ ও মুজিবকে তুলে নেন অফ স্পিনার মিরাজ।

নাভিনকে ক্যাচ বানিয়ে আফগানদের অল্পতেই থামা নিশ্চিত করেন শরিফুল। এটি ছিল তার দ্বিতীয় শিকার। কোনো রান যোগ না করেই আফগানিস্তান হারায় শেষ ৩ উইকেট।

Comments

The Daily Star  | English

Devotees gather for final prayer at Ijtema ground

The final prayer will be led by Maulana Zubair, the top cleric of Shuray-e-Nezam of Bangladesh.

30m ago