ব্রিটিশ দম্পতির গল্প

দুনিয়া ঘুরে ক্রিকেট খেলা দেখাই যাদের জীবন উপভোগের মন্ত্র

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের কাছে ১ রানে ইংল্যান্ডের রোমাঞ্চকর হারের দিন গ্যালারিতে ছিলেন নাইজেল-হেলেন। পরদিনই বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের প্রথম ওয়ানডে থাকায় তা দেখার সুযোগ হয়নি। হারের যন্ত্রণা সয়ে বিমান ধরে মিরপুরে এসে ৩ মার্চ দেখেছেন বাংলাদেশ -ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ওয়ানডে। এতে একই সময়ে দুনিয়ার দুই প্রান্তে খেলতে থাকা তাদের দুটি দলের খেলাই মাঠে বসে দেখে ফেললেন তারা।
Nigel Swinbank & Helen Swinbank
ছবি: একুশ তাপাদার/স্টার

নাইজেল সুইনব্যাঙ্ক ও হেলেন সুইঞ্জব্যাঙ্কের যুগল  জীবন শুরু হয়েছিল সেই ১৯৯৭ সালে। এরপর তাদের জীবনের পথচলায় জড়িয়ে পড়ে ক্রিকেট। এতটাই যে অন্য কোন স্বজনের চেয়েও বেশি আপন হয়ে গেছে খেলাটা। গত ২৬ বছর ধরে দুনিয়ার নানা প্রান্তে ২২ দেশ ঘুরে ক্রিকেট খেলা দেখছেন তারা। প্রথমবার এসেছেন বাংলাদেশে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটারদের যেমন ঠাসা সূচির ধকল,  তাদেরও কম না। আজ এখানে, তো কাল ওখানে।

এই ব্রিটিশ দম্পতি বাংলাদেশের পা রাখার ঠিক আগে ছিলেন নিউজিল্যান্ডে। সূচির জটের কারণেই ইংল্যান্ডের দুটি দল একই সময়ে ব্যস্ত ছিল পৃথিবীর দুই প্রান্তে। বেন স্টোকসের দল কদিন আগেই টেস্ট সিরিজ শেষ করেছে নিউজিল্যান্ডে। ওই সিরিজ চলার সময়েই বাংলাদেশে এসেছে জস বাটলারের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ডের সীমিত ওভারের দল।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের কাছে ১ রানে ইংল্যান্ডের রোমাঞ্চকর হারের দিন গ্যালারিতে ছিলেন নাইজেল-হেলেন। পরদিনই বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের প্রথম ওয়ানডে থাকায় তা দেখার সুযোগ হয়নি। হারের যন্ত্রণা সয়ে বিমান ধরে মিরপুরে এসে ৩ মার্চ দেখেছেন বাংলাদেশ -ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ওয়ানডে। এতে একই সময়ে দুনিয়ার দুই প্রান্তে খেলতে থাকা তাদের দুটি দলের খেলাই মাঠে বসে দেখে ফেললেন তারা।

৪ মার্চ এই দম্পত্তিকে পাওয়া গেল ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে। সকালের বিরতিহীন সোনারবাংলা ট্রেনের টিকেট কেটে নিয়েছেন অনলাইন থেকে। বাংলায় লেখা ট্রেনের বগির নাম বুঝতে পারছিলেন না বলে সাহায্য চাইতেই আলাপ। তারপর জানা গেল তাদের ক্রিকেটজীবনের গল্প।

ওয়েলিংটন টেস্ট দেখে আসছেন শুনেই টানটান উত্তাপে ভরা ম্যাচের প্রসঙ্গ উঠে গেল। আগের রাতে মিরপুরে জেসন রয়-জস বাটলারদের দাপটু জয়ও স্টোকস-অ্যান্ডারসনদের হারের কষ্ট তাদের ভুলাতে পারছে না। নাইজেল তো আম্পায়ারিং নিয়েই তুললেন প্রশ্ন,  'অ্যান্ডারসন আউট হওয়ার আগে একটা ওয়াইড ছিল। অনেক উপরে ছিল বল। পরিষ্কার ওয়াইড। ওই ওয়াইডটা দিলে আমরা অন্তত ম্যাচ হারি না। অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার রড টাকার ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।' তারা যে কট্টর সমর্থক তখন হাবভাবই বলে দিচ্ছিল। তাই অবধারিত প্রশ্ন,  আপনারা কি সেই বিখ্যাত বার্মি আর্মির দলের? নাইজেল জানালেন,  'হ্যাঁ, বলতে পারেন। ইংল্যান্ডের সমর্থক মানেই তো বার্মি আর্মি।'

২০১১ বিশ্বকাপ ও ২০১৬ সালের ইংল্যান্ডের সফরের সময় বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করেছিলেন দুজন। তখন কাজের চাপে সম্ভব হয়ে উঠেনি। এবার আসতে পেরেছেন, তবে  খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। ওয়ানডে সিরিজটা শেষ করেই ফিরতে হবে দেশে। টি-টোয়ন্টি সিরিজটা তাই আর দেখা হবে না। তবে আরেকটি টেস্ট খেলুড়ে দেশে খেলা দেখার আমেজটা পাওয়া হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ দিয়ে সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশে ক্রিকেট দেখার চক্র পূরণ হলো। অবশ্য আফগানিস্তানের নামটা সঙ্গত কারণেই বাদ দিতে হচ্ছে। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হলেও সেখানে কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই হয়নি।

তারা গিয়েছেন এমনকি পাকিস্তানেও,  নাইজেল শুনালেন সেসব গল্প, '২০০৫ সালে আমরা পাকিস্তানে গিয়েছিলাম। গত বছরও যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। পাকিস্তানের ভিসার প্রক্রিয়া খুবই জটিল। তাই এবার আর যাওয়া হয়নি। ১৯৯৭ সালে হেলেনের সঙ্গে আমার পরিচয়। এরপর দুজনে মিলে খেলা দেখা শুরু করি। সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশেই খেলা দেখেছি। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অনেকগুলো দেশে গিয়ে খেলা দেখেছি আমরা। এছাড়া সহযোগী সদস্য দেশগুলোর মধ্যে স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডে তো যাওয়া হয়েছেই।  এই বছরে ভারতে আবার যাব ওয়ানডে বিশ্বকাপ দেখতে। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রেও যাব টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখতে।'

হেলেন যোগ করলেন, বাংলাদেশে ওয়ানডে দেখতে এলেও মূলত টেস্ট ক্রিকেটের পাড় ভক্ত দুজন, 'আমরা টেস্ট বেশি পছন্দ করি। টেস্ট আসলে জীবনের সঙ্গে মিলে। টেস্টে উত্থান-পতন প্রবল, আনন্দ-বিষাদ, ঘুরে দাঁড়ানো অন্যরকম লাগে। একেকটা দেশে গেলে সেদেশের সংস্কৃতিও দেখা যায়। অনেক উপভোগ্য অভিজ্ঞতা হয়।'

প্রশ্ন উঠতে পারে, এত এত দেশ ঘুরে শুধু ক্রিকেট দেখার সময় ও অর্থ পান কোথায়। দুজনের সেই রহস্যমাখা জবাব, 'তীব্রভাবে কোন কিছু চাইলে ঠিকই উপায় বের হয়ে আসে।' নাইজেল বললেন, 'আমাদের জীবনের দর্শন কি জানেন? বিশ্বজুড়ে লাইভ খেলাধুলা দেখে জীবনটা উপভোগ করা।'

ইংল্যান্ডে অন্য চাকরি অবশ্য আছে। কাজের সূত্রে নাইজেল থাকেন ম্যানচেস্টারে, হেলেন আপাতত লন্ডনে। কিন্তু ক্রিকেট দেখার নেশা তাদের এতটাই প্রবল, ছুটির ব্যবস্থা ঠিকই কোন না কোনভাবে হয়ে যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Gaza still bleeds

Intensified Israeli airstrikes on Gaza yesterday killed dozens on the eve of the first anniversary of its offensive in the besieged territory that has killed nearly 42,000 Palestinians and left the enclave in ruins.

7h ago