হৃদয়কে সময়ের আগেই দলে নেওয়া হয়েছে, মত মাশরাফির
সদ্যসমাপ্ত বিপিএলে ব্যাট হাতে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে তৌহিদ হৃদয় ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। আগামী মাসে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশের প্রথম দুই ওয়ানডের স্কোয়াডে আছেন তিনি। তবে নির্বাচকদের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার মতে, হৃদয়কে এখনই দলে ডাকার পরিবর্তে উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করা উচিত ছিল।
২২ বছর বয়সী হৃদয় তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে শেষ করেছেন বিপিএলের নবম আসর। মাশরাফির নেতৃত্বে ফাইনালে ওঠা সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলে নজর কেড়েছেন তিনি। ১৩ ম্যাচে ৩৬.৬৩ গড় ও ১৪০.৪১ স্ট্রাইক রেটে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪০৩ রান। নাজমুল হোসেন শান্ত ও রনি তালুকদার হৃদয়ের চেয়ে বেশি রান করলেও স্ট্রাইক রেটে পিছিয়ে। তার স্ট্রাইক রেট ১৪০.৪১, যা টি-টোয়েন্টি ঘরানার সঙ্গে খুবই খাপ খায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে যখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে খেলছিল সিলেট, তখনই আসে হৃদয়ের জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবর। তবে দিনটা পুরোপুরি আনন্দে শেষ করতে পারেননি তিনি। বিপিএলের ফাইনালে কুমিল্লার কাছে ৭ উইকেটে হেরে রানার্সআপ হয় তার দল সিলেট।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে হৃদয়ের দলে ডাক পাওয়া নিয়ে নিজের ভাবনা জানান মাশরাফি, 'হৃদয় ক্যারিয়ারের একদমই শুরুর দিকে আছে। আমাকে যদি বলেন, আমি হয়তো আরেকটু সময় নিতাম ওর ক্ষেত্রে। সবাইকে এটা মেনে নিতে হবে। (প্রতিপক্ষ) জাতীয় দলে একটা দেশের সেরা পাঁচজন বোলার থাকবে। আমি প্রত্যাশা করছি না… ভালো খেললে আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু প্রত্যাশায় একটু লাগাম থাকা উচিত। কারণ, ছেলেটাকে খুব দ্রুতই দলে নেওয়া হয়েছে।'
এক-দুই ম্যাচ ভালো না করলে কোনো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার নজির এদেশে বিরল নয়। ফলে ওই খেলোয়াড় পড়ে যান ভীষণ চাপে। অভিজ্ঞ পেসার মাশরাফির ভয় সেখানেই। শান্ত ও লিটন দাসের উদাহরণ টানেন তিনি, 'এখন এমন না হয় যেন রান না করলে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। তখন কিন্তু আমরা প্রশ্ন করি না, কেন এক টুর্নামেন্ট দেখেই তাকে দলে নেওয়া হলো আর কেন এক-দুই ম্যাচ খেলানোর পর বাদ দেওয়া হলো। এই জিনিসগুলো দলে নেওয়ার সময় যেমন খেয়াল রাখতে হবে, বাদ দেওয়ার সময়ও খেয়াল রাখতে হবে। বারবার লিটন ও শান্তকে যেভাবে সেট (দলে আসা-যাওয়ার মাধ্যমে) করা হয়েছে, প্রচুর চাপ কিন্তু ওদেরই নিতে হয়েছে। একজন খেলোয়াড়কে তৈরি করতে হলে সময় দিয়ে ও বিভিন্ন জায়গায় খেলিয়ে তাকে প্রস্তুত করতে হয়। কিন্তু জাতীয় দলে বারবার কাউকে সেট করা দলের জন্য যেমন কঠিন, সেই ক্রিকেটারের জন্যও কঠিন।'
মূলত, তরুণ ও স্থানীয় ক্রিকেটারদের ওপর নির্ভর করে বিপিএলে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলেছে সিলেট। এই অর্জনের বড় কৃতিত্ব হৃদয়ের। তাকে শুভকামনা জানিয়ে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বলেন, 'হৃদয়ের কথা এইটুকুই বলব, চমৎকার খেলোয়াড়। এই মুহূর্তে দারুণ ফর্মে আছে। আমি তার মঙ্গল কামনা করছি। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হলো, সে যদি তিনটা, চারটা বা পাঁচটা ম্যাচে রান না-ও করে, আমি অবাক হব না। কারণ, আন্তর্জাতিক ম্যাচে অনেক রকমের চাপ থাকবে। আশা করব, ও যেন চাপমুক্ত থেকে খেলে।'
হৃদয়ের প্রশংসা করলেও তাকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করার কথা ফের মনে করিয়ে দেন মাশরাফি, 'আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন খেলোয়াড়ের জন্য প্রথম পাঁচ, ছয় বা সাত ম্যাচে ভালো করা সহজ। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে যখন খেলতে থাকবেন, দিন যত যাবে তত কঠিন হবে কাজ। কারণ, কম্পিউটার অ্যানালিস্ট থাকে। আপনার দুর্বল জায়গাগুলো খুঁজে সেখানে আঘাত করা হবে। আশা করি, সে মানিয়ে নিতে পারবে। সে দারুণ খেলোয়াড়। কিন্তু একটু আগেভাগে নেওয়া হয়েছে।'
Comments