সেই খুলনাকে হারিয়ে অবশেষে জয়ের দেখা পেল ঢাকা

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আগের ম্যাচগুলোতে ব্যর্থ সৌম্য সরকার ফিফটি হাঁকালেও ঢাকা ডমিনেটর্স থামল একশ পেরিয়েই। ফলে টানা সপ্তম হার চোখ রাঙাচ্ছিল তাদেরকে। কিন্তু দলটির বোলাররা স্বল্প পুঁজি সত্ত্বেও জ্বলে উঠল দারুণভাবে। পেসার তাসকিন আহমেদের নেতৃত্বে তারা তোপ দাগল খুলনা টাইগার্সের ওপর। মাত্র ৮৪ রানে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়ে নাসির হোসেনরা অবশেষে পেল জয়ের দেখা।

মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএলে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে দেখা মিলেছে চরম নাটকীয়তার। লো-স্কোরিং লড়াইয়ে ২৪ রানে জিতেছে ঢাকা। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই বল বাকি থাকতে তাদের ইনিংস থামে ১০৮ রানে। জবাবে খুলনা আরও বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখায়। ২৭ বল বাকি থাকতেই ইয়াসির আলিরা অলআউট হয়ে যায় একশর নিচে।

এবারের বিপিএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে ৬ উইকেটে জিতেছিল ঢাকা। এরপর টানা ছয় ম্যাচে হার মানে তারা। তাদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার অবসান ঘটল সেই খুলনাকে হারিয়েই। এই জয়ে আসরের পয়েন্ট তালিকার তলানি থেকে এক ধাপ এগিয়ে ছয় নম্বরে উঠেছে ঢাকা। আট ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৪। দুই ম্যাচ কম খেলা খুলনার অর্জনও সমান পয়েন্ট। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে পাঁচে আছে দলটি।

ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই নাহিদুল ইসলামের জোড়া আঘাতে চাপে পড়ে ঢাকা। তিন বলের মধ্যে এই অফ স্পিনার সাজঘরে পাঠান মিজানুর রহমান ও উসমান ঘানিকে।

নিজের পরের দুই ওভারেও শিকার ধরেন নাহিদুল। চতুর্থ ওভারে বিদায় নেন নড়বড়ে মোহাম্মদ মিঠুন। ঘানির মতো তিনিও পারেননি রানের খাতা খুলতে। ৮ রানে পড়ে যায় ঢাকার ৩ উইকেট। অষ্টম ওভারে অবসান হয় অ্যালেক্স ব্লেকের দুর্দশার। বিস্ময় জাগিয়ে ১৭ বল খেলে মাত্র ৩ রান করেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার। সৌম্যের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৩০ রানের জুটিতে তার ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের।

ঠিক পথে ফিরতে প্রয়োজন ছিল ভালো একটি জুটির। পঞ্চম উইকেটে নাসিরকে নিয়ে সেই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন সৌম্য। কিন্তু ৪০ রান যোগ করে তারা আলাদা হওয়ার পর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে দলটি।

অধিনায়ক নাসিরকে স্বদেশি উইকেটরক্ষক আজম খানের ক্যাচ বানান পাকিস্তানের পেসার ওয়াহাব রিয়াজ। ১১ বল খেলে ৫ রান করেন তিনি। ব্যর্থতার বৃত্তের ইতি টেনে সৌম্য করেন হাফসেঞ্চুরি। তবে সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ টেকেননি তিনি। নাসুম আহমেদের বলে বোল্ড হওয়ার আগে করেন ৫৭ রান। ৪৫ বল মোকাবিলায় তার ব্যাট থেকে আসে ৬ চার ও ২ ছক্কা। এর আগে এবারের আসরে সাত ম্যাচে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ১৬ রানের।

এক বলের ব্যবধানে নাসুম এলবিডব্লিয়ের ফাঁদে ফেলেন আরিফুল হককে। বাঁহাতি এই স্পিনারের তৃতীয় শিকার হন তাসকিন। ঢাকাকে গুটিয়ে দেওয়ার বাকি কাজটা সারেন নাহিদ রানা ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

মাত্র ৩০ রানে প্রতিপক্ষের শেষ ৬ উইকেট তুলে নেয় খুলনা। তাদের পক্ষে নাহিদুল দুই মেডেনসহ ৪ উইকেট নেন মাত্র ৬ রানে। সব ধরনের টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এটি তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। ৩ উইকেট দখল করতে নাসুমের খরচা ১১ রান।

ঢাকার মাত্র তিন ব্যাটার পৌঁছান দুই অঙ্কে। তাসকিন ৯ বলে ১২ রান করেন। আল আমিন হোসেন অপরাজিত থাকেন ১১ বলে ১০ রানে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে।

লক্ষ্য তাড়ায় বলার মতো কোনো জুটিই গড়তে পারেনি খুলনা। দলীয় ৯ রান থেকে শুরু হয় তাদের ব্যাটিং দৈন্য। সেই থেকে নিয়মিত বিরতিতে পড়তে থাকে উইকেট। শেষ ৫ উইকেট তারা হারায় কেবল ৯ রানে।

খুলনার পক্ষে বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল সর্বোচ্চ ৩০ রান করেন। ২৩ বল খেলে ৪ চার ও ১ ছয় মারেন তিনি। নাসিরের বলে কুপোকাত হওয়ার আগে তিনি টিকে ছিলেন সপ্তম ওভার পর্যন্ত। এর আগেই সাজঘরের পথ ধরেন শেই হোপ ও মাহমুদুল হাসান জয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার হোপ চলমান বিপিএলে প্রথমবার নেমে সুবিধা করতে পারেননি। তাকে বোল্ড করে দেন তাসকিন। ৮ বলে ৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। জয়কে দ্রুত বিদায় করেন নাসির।

পাকিস্তানের আজম খানের হাত খোলার অবকাশ মেলেনি। তাসকিনের বলে ১০ বলে ৪ রান করে ঘানির তালুবন্দি হন তিনি। পাকিস্তানের পেসার সালমান ইরশাদ আক্রমণে ফিরে তুলে নেন অধিনায়ক ইয়াসিরকে। ২৪ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২১ রান করেন তিনি। এরপরই ম্যাচ হেলে পড়তে থাকে ঢাকার দিকে।

আমাদ বাটকে আউট করেন আমির হামজা। নাহিদুল ও নাসুমকে ১৫তম ওভারে বিদায় করেন আল আমিন। খুলনার আশার আলো হয়ে ছিলেন সাইফউদ্দিন। পরের ওভারের প্রথম বলে তাকে ঝুলিতে জমা করার পর রানার স্টাম্প উপড়ে ঢাকাকে দারুণ জয় পাইয়ে দেন তাসকিন।

গত কয়েক বছর ধরে বল হাতে টানা নৈপুণ্য উপহার দিয়ে যাওয়া ম্যাচসেরা তাসকিন ৯ রানে নেন ৪ উইকেট। ২ উইকেট করে নিতে আল আমিন ও নাসিরের খরচা যথাক্রমে ১৭ ও ৩০ রান।  

Comments

The Daily Star  | English

At least 16 killed as Pakistan-India tensions intensify

8 killed in Pakistan, 3 killed in Indian Kashmir in shelling from both sides

6h ago