মাশরাফি, তাসকিনের সঙ্গে প্রাণবন্ত আড্ডায় অ্যামব্রোসের টিপস

নিজেদের মধ্যে ম্যাচ শেষ করে তখন মাঠ ছাড়ার অপেক্ষা। পড়ন্ত বেলায় ফেরার আগে কিংবদন্তি স্যার কার্টলি অ্যামব্রোসকে পেয়ে আড্ডায় ডুবলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা আর তাসকিন আহমেদ। তিন প্রজন্মের পেসারদের প্রাণবন্ত আড্ডায় উপকৃত হলেন তাসকিনই। যার সামনে পড়ে আছে অনেক প্রাপ্তির সম্ভাবনার দুয়ার।
এবার বিপিএলে অ্যামব্রোস ধারাভাষ্য দিতে আসার পর তার দিকেই অনেক ক্রিকেটারের নজর। প্রথম দিন অ্যামব্রোসকে দেখেই ছবি তোলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে মাশরাফি লিখেছিলেন, 'বসের সঙ্গে।'
খেলার ব্যস্ততায় লম্বা আলাপ হচ্ছিল না, চট্টগ্রামে গিয়ে জমল সেটা। সোমবার দিনের প্রথম ম্যাচ শেষে তিন প্রজন্মের পেসারকে দেখা গেল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের এক কোণায়।
বিসিবির পাঠানো ভিডিওতে দেখা যায় অ্যামব্রোস আক্ষেপ করে বলছেন, 'ক্রিকেট এখন অনেক বদলে গেছে। আমার সময়ে অনেক ভিন্ন ছিল। টি-টোয়েন্টি তো ছিলই না। ওয়ানডে আর টেস্ট ছিল। নিয়মেও বদলে এসেছে, এখন তো ক্রিকেট খেলাটা ব্যাটসম্যানদের। বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন। পিচগুলো খুবই নির্মম। সারা দুনিয়ায় এটা একপেশে ব্যাটসম্যানদের খেলা হয়ে গেছে।'
মাশরাফি পাশ থেকে আক্ষেপের সুরে যোগ করেন, 'টেস্টেও এখন চার-পাঁচশো রান নিয়মিত হয়।'
তারপরই মাশরাফি ফিরে গেলেন ২৪ বছর আগে, '১৯৯ সালে ঢাকায় আপনাকে বল করতে দেখেছি।'
'আপনি তো এখন নিয়মিত ধারাভাষ্য দেন। এটা জিজ্ঞেস করছি কেন জানেন? কারণ শিগগিরই সেখানে আপনি সঙ্গী হবো।' মাশরাফি এই কথা বলার পর তিনজনের তুমুল হাসি।
খানিক পর শুরু হলো সিরিয়াস আলাপ। মাশরাফি তাসকিনকে দেখিয়ে বলেন, 'তবে এই ছেলেটা অনেক বদলে গেছে। গত দুই বছরে বিশ্বের নানা জায়গায় পারফর্ম করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫ উইকেট নিয়েছে, নিউজিল্যান্ডে দারুণ করেছে। তার সঙ্গে যদি কিছু কথা বলেন।'
২৩ বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থামানো অ্যামব্রোস এবার মেলে ধরেন তার অভিজ্ঞতা। ৬৩০ আন্তর্জাতিক উইকেটের মালিক উৎসাহ দেন তাসকিনকে, 'বিশ্বের নানা জায়গায় যারা ভাল করে সেইসব দেখে আমি ক্রিকেটারদের বিচার করি, এটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে আছে দেশে ভালো, বিদেশে গিয়ে সুবিধা করতে পারে না। গ্রেট হতে হলে বিশ্বের সবখানে ভালো করতে হবে।' তাসকিনকে তিনি বলেন, 'তুমি ঠিক দিকেই আছ।'
তাসকিনের গতির কথা উল্লেখ করেন মাশরাফি, 'ও কিন্তু নিয়মিত ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করে।' অ্যামব্রোস যোগ করেন, 'এই গতিতে বল করছে মন্থর উইকেটে। সহায়ক উইকেট পেলে গতি বাড়বে।'
এক যুগের ক্যারিয়ারে চোট খুব একটা কাবু করেনি অ্যামব্রোসকে। একজন পেসার হয়েও শরীরকে কীভাবে ফিট রাখতে হবে সেই পন্থা তাসকিনকে দেখিয়ে দেন অ্যামব্রোস, 'অনেক বোলারকেই দেখেছি। জিমে অনেক বেশি সময় কাটায়। আমি জিমে যেতে মানা করব না, শক্তিশালী হতে হবে। কিন্তু মনে রাখবে, বডিবিল্ডার হওয়ার চেষ্টা করবে না। পেসারদের শরীর থাকতে হবে সহজ, নমনীয়। অনেক বেশি দৌড়াবে আর বল করবে। বেশি দৌড়ালে আর বল করলেই শরীর অভ্যস্ত হয়ে যায়।'
তাসকিন জানতে চান, কিরকম দৌড়ালে ভালো। অ্যামব্রোস তখন দেখিয়ে দেন পন্থা, '১০ সেকেন্ডে ১০০ মিটার পার হওয়া বোলারদের কাজ না। পায়ের পেশি জোরালো করার দিকে মন দিতে হবে তোমাকে। অনেককে দেখেছি জিমে প্রচুর খাটছে কিন্তু ৪ ওভার বল করেই কাহিল হয়ে যায়। প্রচুর বল করতে হবে। তাহলেই শরীরের সব কিছু কাজ করে।'
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর স্পেলগুলোর তালিকা করলে সেখানে একাধিকবার আসবে অ্যামব্রোসের নাম। ব্যাটারদের জন্য আতঙ্ক এই পেসারের থেকে বিপিএল চলাকালীন চাইলেই অনেক পরামর্শ নিতে পারেন বাংলাদেশের পেসাররা।
Comments