নিজের সঙ্গে অন্যায় হলেও একটা শব্দ বলিনি: হার্দিক

Hardik Pandya
ভারতকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে আনন্দে কাঁদছেন হার্দিক পান্ডিয়া।

ম্যাচ তখন শেষ, হার্দিক পান্ডিয়া কাজ সেরে বসে পড়েছিলেন অদ্ভুত এক অনুভূতি নিয়ে। উঠে দাঁড়িয়ে আবেগে ভাসতে থাকলেন তিনি, চোখ দিয়ে তখন বেয়ে পড়ছে অশ্রুধারা। রোহিত শর্মা এসে জড়িয়ে ধরে তাকে রাখলেন কিছুটা সময়। এ কান্না আনন্দের, বিজয়ের। কিন্তু ফ্ল্যাশব্যাকে মাস কয়েক আগে চলে গেলে পাওয়া যাবে ভিন্ন ছবি। হার্দিক যেন তখন সমর্থকদের শত্রু।

হার্দিকের জীবনে গত কয়েক মাসে হয়েছে অনেক কিছুই। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের অধিনায়ক হয়ে ফেরার পর দুঃসময়ের শুরু। ঘরের মাঠগুলোতে তাকে দুয়োধ্বনি শুনে কাটাতে হয়েছে বলতে গেলে পুরো ২০২৪ আইপিএল। এসবের প্রভাব মাঠের পারফরম্যান্সেও পড়েছে। পারিবারিক জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর বেরিয়েছে এরপর। এত কিছুর পর সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপ শেষে হার্দিক জানালেন তার মনের কথা।

২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর ভারতের সবাইকেই আবেগে ছুঁয়েছিল। কিন্তু হার্দিকের চোখের জল বেরিয়েছে অনবরত। সবচেয়ে বেশি আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়া এই অলরাউন্ডার বলেছেন, 'আমার জন্য এটা আরও স্পেশাল মনে হয়। যেভাবে শেষ ছয় মাস কেটেছে…একটা শব্দ বলিনি। (কিছু) জিনিস অন্যায্য হয়েছে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করেছি কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে গেলে জ্বলে উঠতে পারব। এটা আমার স্বপ্ন ছিল। আর এরকম সুযোগ পেয়ে (বিশ্বকাপ জেতা) আরও স্পেশাল বানিয়ে দিয়েছে।'

এরপর বার্বোডোজে ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হার্দিক আরও বলেন, 'অনেক কিছু বলা হয়েছে, অনেক কথা হয়েছে। হার্দিক পান্ডিয়া কে, কেউ এক ভাগও জানেনা। কিন্তু কথাবার্তা সবাই বলেছে, কোনো সমস্যা নেই। আমি সবসময় জীবনে মেনেছি- কখনো আপনি মুখে জবাব দেন না। পরিস্থিতি ও অবস্থা জবাব দিতে পারে। যখন কঠিন সময় যাচ্ছিল, তখনও আমি একটা জিনিস নিজেকে বলেছি- বেশিদিন চলবে না (এই সময়)।'

২০২৪ আইপিএলে রোহিত শর্মার জায়গায় মুম্বাইয়ের অধিনায়কত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার পর তীর্যকভাবে সমালোচনার শিকার হয়েছেন তিনি। মুম্বাইয়ের সমর্থকরাই তাকে নিয়মিত দুয়ো শুনিয়েছে মাঠে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল চলেছে অবিরাম। মাঠেও মোটেই সময় ভালো কাটেনি তার। আগের দুইবার গুজরাটকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়া হার্দিক গতবারের আইপিএল শেষ করেন সবার শেষে থেকে। সম্প্রতি তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের খবরও বেরিয়েছিল গণমাধ্যমে। সব মিলিয়ে ছিলেন কোণঠাসা।

এমন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া হার্দিককে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরে চেনা রূপে পেয়েছে ভারত। ১৫১ স্ট্রাইক রেটে ৮ ম্যাচে করেছেন ১৪৪ রান, বল হাতে ৭.৬৪ ইকোনমিতে নিয়েছেন ১১ উইকেট। বর্তমানে ভারতের ক্রিকেটের অন্যতম একজনের আর্জি, 'সময় এসেছে আমাদের সমর্থক কিংবা যে কারো জন্য শেখার। একটা ভালো উপায় খুঁজতে হবে আমাদের দেশে। আমি নিশ্চিত ওই একই মানুষেরা অনেক খুশি হবেন। এটাই, বেশি কিছু বলার মতো নেই।'

১৭৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শনিবারের ফাইনালে শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। গুরুত্বপূর্ণ ওভারে হার্দিক ৮ রান দিলে ভারত পায় ৭ রানের জয়। ওভারটি নিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতে ভারতের সহ-অধিনায়ক বলেন, 'চাপ নিয়ে কোনা লাভ ছিল না। সবাই এমনিতেই বাইরে চাপ নিচ্ছিলেন, আমি মনোযোগ দিচ্ছিলাম কীভাবে দক্ষতা প্রয়োগ করতে পারি। এর চেয়ে ভালো সুযোগ হতেই পারে না। আমার জীবনে এই মুহূর্ত লেখা ছিল। ভাগ্য সবসময় যে পরিশ্রম করে তাদের দিকে যায়। চেষ্টা করেছি, পরিশ্রম করে যেতে, মাথা নিচু রাখতে এবং হেসে যেতে। আজ একটা চওড়া হাসি থাকবে, লম্বা সময় ধরে।'

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

3h ago