পাকিস্তানের পেসারদের তোপে ভারত গুটিয়ে গেল মাত্র ১১৯ রানে
নিউইয়র্কের মাঠের আগের ধারা ভেঙে বড় স্কোরের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ভারত। কিন্ত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপরীতে তাদেরকে গুটিয়ে যেতে হলো মাত্র ১১৯ রানেই। পাকিস্তানের চার পেসার মিলে ধস নামিয়ে রোহিত শর্মার দলকে অলআউট করে দিলেন এক ওভার বাকি থাকতেই। একমাত্র রিশভ পান্ত পারলেন ত্রিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলতে। ভারতকে তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোরেই গুটিয়ে যেতে হলো নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আগে এর চেয়ে কম রানে মাত্র একবারই ভারত অলআউট হয়েছিল। ২০১৬ সালের আসরে নাগপুরে নিউজিল্যান্ডের ১২৬ রানের জবাবে তারা থেমেছিল স্রেফ ৭৯ রানে। তাছাড়া, কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে এটাই ভারতের সর্বনিম্ন রানের পুঁজি। তাদের মাত্র তিনজন ব্যাটার যেতে পারেন দুই অঙ্কে।
রোববার বৃষ্টির শঙ্কা ছিল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে ঘিরে। শেষমেশ হাইভোল্টেজ ম্যাচটির প্রথম বল মাঠে গড়াতে নির্ধারিত সময়ের ৫০ মিনিট পার হয়ে যায়। এরপর টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামা ভারত প্রথম ওভারে আনে ৮ রান। আবার নেমে আসে বৃষ্টি, আধা ঘণ্টার বেশি সময়ের বিরতির পর শুরু হয় খেলা। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই দারুণ এক চারে সূচনা করেন বিরাট কোহলি। কিন্তু এক বলই পরই ভারতের সমর্থকদের সব উত্তেজনা নিভে যায় তিনি আউট হয়ে গেলে। ৩ বলে ৪ রান করে কোহলি ফিরেন নাসিম শাহর বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে।
পরের ওভারেই আরেক ওপেনার রোহিত শর্মাও বিদায় নেন। শাহিন আফ্রিদির বলে ফ্লিকে ছক্কা মেরেছিলেন আগে, এবার ধরা পড়েন স্কয়ার লেগে। ১২ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৩ রানের ইনিংস খেলে ভারতের অধিনায়ক ফেরার পর চারে নামেন অক্ষর প্যাটেল। ওয়ান ডাউনে নামা পান্তের সঙ্গে মিলে এই বাঁহাতি চাপ তাড়াতে আক্রমণের পথ বেছে নেন। স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকা অক্ষর পঞ্চম ওভারে শাহিনকে চারের পর ছক্কায় আনেন ১৪ রান। ঝুঁকি নিয়ে খেলতে থাকা পান্ত যদিও টাইমিং খুঁজে পেতে হয়রান হচ্ছিলেন। বারবার মিসটাইমিং করতে থাকা এই ব্যাটার পঞ্চম ওভারে ক্যাচ তুলেও ফেলেছিলেন। কিন্তু ইনফিল্ডে থাকা উসমান খান পেছনে ছুটে গিয়ে কঠিন ক্যাচটি লুফে নিতে ব্যর্থ হন। ১৯ রানে ২ উইকেট হারানো ভারত পাওয়ারপ্লে শেষ করে ৫০ রানে।
অক্ষর আগবাড়িয়ে নাসিমকে মারতে গিয়ে ৩৯ রানের জুটির শেষ লিখে দেন। ১৮ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২০ রানে বোল্ড হন তিনি। পান্ত এরপর ছন্দ ফিরে পেয়ে হারিস রউফের এলোমেলো ওভারে মারেন তিনটি চার। ৮১ রানে ইনিংসের অর্ধেক শেষ করা ভারত যদিও দ্রুতই হারিয়ে ফেলে চতুর্থ উইকেট। রউফের বলে মিডঅফে ক্যাচ তুলে দিয়ে সূর্যকুমার যাদব ফিরে যান ৭ রানে। সেই থেকে মড়ক লাগে ভারতের ইনিংসে।
এক অঙ্কে শিবাম দুবেও ফিরেন যখন, ৯৪ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। নাসিমের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে দুবের ৯ বলে ৩ রানের নড়বড়ে ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। এক রানের মধ্যে আরও দুই উইকেট হারিয়ে আচমকাই ভারত পড়ে যায় অলআউটের শঙ্কায়। মোহাম্মদ আমিরের বলে তুলে মারতে গিয়ে পান্ত আউট হন ৩১ বলে ৬ চারে গড়া ৪২ রানের ইনিংস খেলে। রবীন্দ্র জাদেজা এসে প্রথম বলেই আউট হয়ে যান কাভারের কোলে ক্যাচ তুলে দিয়ে। ১৫তম ওভারেই হার্দিক পান্ডিয়া নিজের সঙ্গী হিসেবে খুঁজে পান লেজের ব্যাটারদের।
আর্শদীপ সিং এলোপাতাড়ি ব্যাট চালিয়ে স্কোরবোর্ডে রান যোগ করছিলেন। কিন্তু নিরাপদে খেলতে থাকা হার্দিকই বিদায় নেন ১৮তম ওভারে। রউফের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি স্কয়ার লেগে। ১২ বলে ৭ রানে হার্দিকের ফেরার পরপরই একই পথ ধরেন জাসপ্রিত বুমরাহ। শেষমেশ আর্শদীপ রানআউট হয়ে ফিরেন ১৩ বলে ৯ রানে।
২৯ রানে ১ উইকেটে চার ওভারের স্পেল শেষ করেন শাহিন। নাসিম চার ও রউফ তিন ওভারে করে সমান ২১ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩টি করে উইকেট। আমিরের ঝুলিতেও ২৩ রান খরচে ঢুকেছে ২টি উইকেট। তাদের সম্মিলিত তোপে ভারত তাদের শেষ ৭ উইকেট হারায় মোটে ৩০ রানে।
Comments