৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে গোলের মালা পরাল বাংলাদেশ

ফিফা র্যাঙ্কিং অনুসারে বাংলাদেশের চেয়ে বাহরাইন এগিয়ে রয়েছে ৩৬ ধাপ। তবে মাঠের খেলায় মনে হলো ঠিক উল্টোটা! আক্রমণাত্মক ও গোছানো ফুটবলে মধ্যপ্রাচ্যের দলটিকে স্রেফ দর্শক বানিয়ে রাখল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে প্রতিপক্ষকে গোলের মালা পরিয়ে বাছাইপর্ব শুরু করল পিটাল বাটলারের শিষ্যরা।
রোববার ইয়াঙ্গুনে ২০২৬ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের 'সি' গ্রুপের ম্যাচে ৭-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধেই ৫-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল তারা। ব্যবধান আরও বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না!
জোড়া গোল আসে তহুরা খাতুনের পা থেকে। একবার করে লক্ষ্যভেদ করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র, ঋতুপর্ণা চাকমা, কোহাতি কিসকু ও মুনকি আক্তার। এছাড়া, নিজেদের জালে বল পাঠিয়ে দেন বাহরাইনের রাওয়ান আল আলি।
এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের অতীত পরিসংখ্যান ছিল দুঃস্বপ্নের। ২০১৪ সালের আসরের বাছাইয়ে তিনটি ও ২০২২ সালের আসরের বাছাইয়ে দুটিসহ মোট পাঁচটি ম্যাচ খেলে সবকটিতে হেরেছিল তারা। ২৫ গোল হজমের বিপরীতে নিজেরা কোনো গোলই করতে পারেনি।
একদম শুরু থেকেই বলের দখল রেখে বাহরাইনের রক্ষণে ভীতি ছড়াতে থাকে বাংলাদেশ। সেই ধারায় দশম মিনিটে লিড আদায় করে নেয় তারা। মাঝমাঠে নিজেদের অর্ধ থেকে লম্বা করে চমৎকার বল বাড়ান মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী। ডানপ্রান্ত দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের চিপ শটে লক্ষ্যভেদ করেন উইঙ্গার শামসুন্নাহার জুনিয়র।
পাঁচ মিনিট পর আবার দুর্দান্ত অ্যাসিস্ট করেন স্বপ্না। ডানদিক থেকে তিনি থ্রু বল দেন বামদিকে থাকা ঋতুপর্ণার উদ্দেশ্যে। প্রথম ছোঁয়ায় জায়গা করে নিয়ে বাঁ পায়ের জোরাল শটে জাল কাঁপিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন উইঙ্গার ঋতুপর্ণা। কোনো সুযোগই মেলেনি গোলরক্ষক ইমান আল খাত্তালের।
৪০তম মিনিটে স্বপ্না ছোট করে কর্নার নিয়ে বল দেন মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দাকে। তিনি একজনকে এড়িয়ে ক্রস করেন দূরের পোস্টে। সেটা বাহরাইন বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হলে বল পান মিডফিল্ডার কোহাতি। জটলার মধ্যে তার শট প্রতিপক্ষের একজনের পা ছুঁয়ে জালে জড়ায়। ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে একপেশে লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে দুবার গোলের উল্লাস করেন ফরোয়ার্ড তহুরা। দ্বিতীয় মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর থেকে ডান পায়ের দারুণ শটে নিশানা ভেদ করেন তিনি। চতুর্থ মিনিটের গোলটি ছিল নজরকাড়া আক্রমণের ফসল। ডানদিক দিয়ে দুই দফা শামসুন্নাহার জুনিয়রের সঙ্গে বল আদান-প্রদান করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন তহুরা। গোলরক্ষককে একা পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে ঠেলে দেন তিনি।
মাঝে ৩২তম মিনিটে অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের ক্রসে তহুরা হেডে গোল করলেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়। আর বিরতির আগে বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমাকে পার করতে হয় অলস সময়।
গোলের ক্ষুধা নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধেও একই তালে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ৬০তম মিনিটে আত্মঘাতী গোলে ষষ্ঠবারের মতো উৎসব করার সুযোগ মেলে তাদের। ডিফেন্ডার শামসুন্নাহার সিনিয়রের ক্রসে শামসুন্নাহার জুনিয়র টোকা দেওয়ার পর বল রাওয়ানের পায়ে লেগে গোললাইন পেরিয়ে যায়।
৭৪তম মিনিটে স্কোরলাইন ৭-০ করেন বদলি মিডফিল্ডার মুনকি। বদলি ফরোয়ার্ড শাহেদা আক্তার রিপার রক্ষণচেরা পাস ধরে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। এরপর বাহরাইনের একজনকে ছিটকে দিয়ে বাঁ পায়ের গড়ানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন।
৮৫তম মিনিটে বদলি ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সাগরিকা বল জালে পাঠালেও অফসাইডের জন্য গোল মেলেনি। পরের মিনিটে আরেক বদলি ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সুলতানার দূরপাল্লার শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। তাই ব্যবধান আর বাড়েনি।
'সি' গ্রুপে বাংলাদেশের অন্য দুই প্রতিপক্ষ হলো স্বাগতিক মায়ানমার ও তুর্কমেনিস্তান। প্রতিটি দল একবার করে পরস্পরের মুখোমুখি হবে। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দল আগামী বছরের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় নারী এশিয়ান কাপের টিকিট পাবে।
Comments