সিঙ্গাপুরের কাছে বাংলাদেশের কষ্টের হার

দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হাল না ছেড়ে প্রাণপণ লড়াই চালাল বাংলাদেশ। গ্যালারিভর্তি দর্শকদের উল্লাস ও উন্মাদনার মাঝে রাকিব হোসেনের লক্ষ্যভেদে জাগল প্রত্যাবর্তনের আশাও। কিন্তু অনেক সুযোগ পেলেও আর গোল পাওয়া হলো না লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। ফলে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ভালো খেলেও কষ্টের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ল হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা।
মঙ্গলবার ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের 'সি' গ্রুপের ম্যাচে ২-১ গোলে পরাস্ত হয়েছে স্বাগতিকরা। অনেক সুযোগ নষ্ট করার পাশাপাশি ভাগ্যও সহায়তা দেয়নি তাদেরকে। প্রথমার্ধে সং উই ইয়ং জাল কাঁপালে এগিয়ে বিরতিতে যায় সিঙ্গাপুর। দ্বিতীয়ার্ধে সফরকারীদের হয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইখসান ফান্ডি। তারপর রাকিব একটি গোল শোধ করলেও শেষরক্ষা হয়নি।
ম্যাচে তুলনামূলক বেশি সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। বিশেষ করে, স্কোরলাইন ২-১ হওয়ার পর শেষ আধা ঘণ্টায় ছিল তাদের একচ্ছত্র দাপট। তবে সমতাসূচক গোলের দেখা মেলেনি। যোগ করা সময়ে নিশ্চিত পেনাল্টির আবেদন জানিয়েও রেফারির কাছ থেকে মেলেনি সাড়া। এমনকি শেষ বাঁশি বাজার ঠিক আগে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ক্রসবার।

গত ৪ জুন একই ভেন্যুতে হওয়া ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের শুরুর একাদশ থেকে আসে মোট তিনটি পরিবর্তন। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার পাশাপাশি জায়গা হারান মিডফিল্ডার সোহেল রানা ও লেফট ব্যাক তাজ উদ্দিন। তাদের বদলে অভিষেকের স্বাদ পাওয়া শমিত সোমের সঙ্গে সুযোগ পান মোহাম্মদ হৃদয় ও শাকিল আহাদ তপু।
সিঙ্গাপুর ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগ তৈরি করে নবম মিনিটে। বামদিক থেকে হ্যারিস স্টুয়ার্টের লম্বা থ্রো-ইন এগিয়ে গিয়ে লুফে নিতে ব্যর্থ হন গোলরক্ষক মিতুল মারমা। বরং জর্ডান এমাভিউয়ের মাথা ছুঁয়ে বল চলে যায় দূরের পোস্টে। ফাঁকা জাল পেয়েও অরক্ষিত উই ইয়ং লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। ফলে বড় বাঁচা বেঁচে যায় বাংলাদেশ।
১৬তম মিনিটে প্রথমবারের মতো শট লক্ষ্যে রাখতে পারে স্বাগতিকরা। ডিফেন্ডার শাকিল আহাদ তপু প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ সামলে ডানপ্রান্ত দিয়ে ক্রস করেন ডি-বক্সে। উইঙ্গার রাকিব স্লাইড করে কোনোমতে পা ছোঁয়ালেও বল অনায়াসে লুফে নেন গোলরক্ষক ইজওয়াদ মাহবুদ। পরের মিনিটে আবার ভীতি ছড়ায় সিঙ্গাপুর। ফান্ডির হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

৩১তম মিনিটে দুই প্রান্তে দুটি ভালো সুযোগ তৈরি হয়। বক্সের ভেতরে ফান্ডির কোণাকুণি শট অসাধারণ কায়দায় রুখে দেন মিতুল। এরপর দ্রুত পাল্টা আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। কানাডা প্রবাসী মিডফিল্ডার শমিত সোম প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়কে দারুণভাবে এড়িয়ে দেন রক্ষণচেরা পাস। কিন্তু রাকিব নাগাল পাওয়ার আগেই পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে বল হাতে জমান মাহবুদ।
চার মিনিট পর উইঙ্গার ফাহামিদুল ইসলাম ফাউলের শিকার হলে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড প্রবাসী মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীর শট চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। কিছুক্ষণ বাদে অভিষেক শমিত আরেকটি অসাধারণ পাসে ফাহামিদুলকে খুঁজে নেন। তবে একজনকে কাটিয়ে তার নেওয়া ডান পায়ের শট হয় ব্লকড।

৪৪তম মিনিটে গোল হজম করে বসে স্বাগতিকরা। গোলরক্ষক মিতুল পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে বল ফিস্ট করলেও বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন। বরং তা ডানদিকে পেয়ে যান স্টুয়ার্ট। এরপর তিনি বামদিকে করেন ক্রস। ফাঁকায় থাকা মিডফিল্ডার উই ইয়ং কোণাকুণি শটে সিঙ্গাপুরকে এগিয়ে দেন। হামজা দূর থেকে দৌড়ে এসে গোল বাঁচানোর চেষ্টা করলেও পারেননি।
মিডফিল্ডার সৈয়দ শাহ কাজেম কিরমানির বদলে উইঙ্গার শাহরিয়ার ইমনকে নামিয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে স্বাগতিকরা। কিন্তু ৫৯তম মিনিটে স্কোরলাইন ২-০ করে গোটা গ্যালারি স্তব্ধ করে দেন স্ট্রাইকার ফান্ডি। এই গোলেও দায় আছে মিতুলের। হামি শাহিনের জোরাল শট তিনি ফিস্ট করলে চলে যায় সামনে থাকা ফান্ডির পায়ে। অর্থাৎ বিপদমুক্ত করা যায়নি। ফান্ডির কোণাকুণি শট হৃদয়ের পায়ের ফাঁক দিয়ে দূরের পোস্ট হয়ে জড়ায় জালে।
আট মিনিট পর ভক্ত-সমর্থকদের মাঝে ফের প্রাণের সঞ্চার হয়। হামজা দেখান তার সামর্থ্য। তার রক্ষণচেরা পাস ধরে গড়ানো শট নেন রাকিব। সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষকের গায়ে লেগে বলের গতি কমে গেলেও শেষমেশ তা গোললাইন অতিক্রম করে। জাতীয় দলের জার্সিতে রাকিবের এটি পঞ্চম গোল।

এরপর থেকে বাংলাদেশ হয়ে ওঠে মরিয়া। প্রতিপক্ষের রক্ষণে হানা দিয়ে কর্নারের পর কর্নার আদায় করে নেয় তারা। ৮২তম মিনিটে টানা চারটি কর্নারে ভীতি তৈরি হলেও সেগুলো কাজে লাগানো যায়নি। এসবের আগে মাঠে প্রবেশ করেন তিন বদলি ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, শেখ মোরসালিন ও আল আমিন। বেরিয়ে যান ফাহামিদুল, শাকিল ও হৃদয়।
দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে আক্ষেপের পর আক্ষেপে পুড়তে হয় কাবরেরার দলকে। ডি-বক্সে উইঙ্গার ফাহিম ফাউলের শিকার হলেও পেনাল্টি দেননি রেফারি। এরপর তার জোরাল ভলি চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। তারপর হামজার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। আর শেষ মুহূর্তে মিডফিল্ডার মোরসালিনের ক্রসে ডিফেন্ডার তারিক কাজীর হেড মাহবুদের গ্লাভস ছুঁয়ে ক্রসবারে লাগে। সঙ্গে সঙ্গেই বাজে নির্ধারিত সময়ের বাঁশি।
'সি' গ্রুপের অন্য ম্যাচে হংকংয়ের মাঠে ১-০ গোলে হেরেছে ভারত। ফলে এখন ৪ পয়েন্ট করে অর্জন হংকং ও সিঙ্গাপুরের। বাংলাদেশ ও ভারতের নামের পাশে ১ পয়েন্ট করে।
Comments