এমবাপের হ্যাটট্রিক ছাপিয়ে জিতে শিরোপার আরও কাছে বার্সেলোনা

ছবি: রয়টার্স

শুরুর ১৪ মিনিটের মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদ দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ায় একতরফা ম্যাচের আভাস মিলল। কিন্তু পিছিয়ে পড়ার পর যেন ঘুম ভাঙল বার্সেলোনার! খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিরতির আগেই চারবার জাল কাঁপিয়ে চালকের আসনে বসে পড়ল তারা। দ্বিতীয়ার্ধে কিলিয়ান এমবাপে হ্যাটট্রিক পূরণ করলেও তা যথেষ্ট হলো না রিয়ালের জন্য। একইসঙ্গে পাগলাটে, জমজমাট ও রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে তাদেরকে হারিয়ে শিরোপার আরও কাছে পৌঁছে গেল বার্সা।

রোববার রাতে লা লিগার মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ঘরের মাঠে ৪-৩ গোলে জিতেছে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। বার্সার পক্ষে জোড়া গোল করেন রাফিনিয়া। একবার করে নিশানা ভেদ করেন এরিক গার্সিয়া ও লামিন ইয়ামাল। রিয়ালের সবগুলো গোলই আসে এমবাপের পা থেকে।

এই জয়ে লা লিগার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে নিজেদের অবস্থান মজবুত করল বার্সেলোনা। আসরের আর তিন রাউন্ড বাকি থাকতে ৩৫ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৮২। দুইয়ে থাকা রিয়ালের চেয়ে ৭ পয়েন্ট এগিয়ে গেল তারা। সমান ম্যাচে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের অর্জন ৭৫ পয়েন্ট।

চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রিয়ালের বিপক্ষে এই নিয়ে চারবারের দেখায় সবকটিতে জিতল বার্সেলোনা। একই মৌসুমে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে চারটি জয়ের কীর্তি অতীতে একবারই গড়েছিল তারা। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে দুই দলের পাঁচবারের সাক্ষাতে চারটিতে জিতেছিল কাতালানরা। বাকিটি হয়েছিল ড্র।

উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই পেনাল্টি থেকে এগিয়ে যায় রিয়াল। বার্সার গোলরক্ষক ভয়চেখ স্ট্যান্সনি ডি-বক্সে এমবাপেকে ফেলে দিলে রেফারি বাজান স্পট-কিকের বাঁশি। ১২ গজ দূর থেকে শট নিয়ে কোনো ভুল করেননি বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি ফরোয়ার্ড।

নয় মিনিটের মধ্যে পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণও করে ফেলে সফরকারীদের উল্লাসে মাতান এমবাপে। ইয়ামালের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে বামপ্রান্তে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে দেন ফেদেরিকো ভালভার্দে। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের পাস প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের প্রান্ত থেকে বাঁকানো শটে জাল কাঁপান এমবাপে।

প্রতিপক্ষের ডেরায় দুই গোলের লিডের আনন্দ বেশিক্ষণ থাকেনি রিয়ালের। দুর্দান্ত কায়দায় লড়াইয়ে ফিরে তাদেরকে রীতিমতো স্তব্ধ করে দেয় বার্সেলোনা। ১৯তম মিনিটে গার্সিয়ার কল্যাণে ব্যবধান কমায় তারা। দানি অলমোর কর্নারের ফেরান তোরেস মাথা ছোঁয়ানোর পর হেডে গোল করেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার।

মাঝমাঠ দখলে রেখে ৩২তম মিনিটে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনে কাতালানরা। ফেরানের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের ভেতরে ডানদিক থেকে বাঁকানো শটে নিশানা ভেদ করেন ইয়ামাল। রিয়ালের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া ঝাঁপিয়েও বলে হাত স্পর্শ করাতে পারেনি।

দুই মিনিটের ভেতরে রিয়ালের ভুলে এগিয়েও যায় স্বাগতিকরা। আগের গোলের পর কিক-অফের কিছুক্ষণের মধ্যে বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় সতীর্থ দানি সেবায়োসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে এমবাপের। সেই সুযোগে বল পেয়ে পেনাল্টি অঞ্চলের কাছে রাফিনিয়াকে খুঁজে নেন পেদ্রি। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড বাম পায়ের নিচু শটে গোল করেন।

৪৩তম মিনিটে লস ব্লাঙ্কোসদের পক্ষে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। কিন্তু ভিএআরের সাহায্য নিলে অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়ে যাওয়ায় সমতা টানার সুযোগ হারায় দলটি। বরং প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে আরেক গোল হজম করে তারা। ফেরানের পাসে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন রাফিনিয়া।

দুই দল বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আবার গোল করে বসেন এমবাপে। কিন্তু বিধি বাম! অফসাইডের কারণে সেটা গণনায় ধরা হয়নি। বিরতিরও পরও চলতে থাকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। যদিও বেশি সুযোগ তৈরি করে বার্সাই। গোটা ম্যাচে ৬২ শতাংশ বল দখলে রেখে গোলমুখে ২৩টি শট নেয় তারা। এর মধ্যে নয়টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, গোলপোস্টে রিয়ালের নেওয়া নয়টি শটের পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে।

৫২তম মিনিটে বার্সার গোলও বাতিল হয়। রাফিনিয়ার পাসে ইয়ামাল বল জালে ঠেলে দিলেও অফসাইডের কারণে তা টেকেনি। উল্টো ৭০তম মিনিটে স্কোরলাইন ৪-৩ করে ম্যাচে টান টান উত্তেজনা ফিরিয়ে আনেন এমবাপে। ভিনিসিয়ুসের নিখুঁত পাসে খুব কাছ থেকে ফাঁকা জালে বল পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি।

বাকি সময়ে বার্সা ব্যবধান বাড়ানো ও রিয়াল সমতায় ফেরানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা করতে থাকে। ৭৪তম মিনিটে বার্সার রাফিনিয়া ও ৮৯তম মিনিটে রিয়ালের বদলি খেলোয়াড় ভিক্তর মুনোজ সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন। এরপর যোগ করা সময়ে দুই দলের একটি গোলও আবার বাতিলের খাতায় যায়।

মাঝে ৭৯তম মিনিটে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড ফেরানের শটে ডি-বক্সে বল লাগে আহেলিয়া চুয়ামেনির হাতে। বার্সা তোলে পেনাল্টির জোরাল আবেদন। মনিটরে রিপ্লে দেখেও স্পট-কিক না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন রেফারি। যদিও শরীর থেকে বেশ দূরে ছিল চুয়ামেনির হাত।

Comments

The Daily Star  | English

IMF loan tranches: Agreement with IMF at last

The government has reached a staff-level agreement with the International Monetary Fund for the fourth and fifth tranche of the $4.7 billion loan programme, putting to bed months of uncertainty over their disbursement.

9h ago