মেসিকে ছাড়াই বলিভিয়ার মাঠে আর্জেন্টিনার দুর্দান্ত জয়
গুঞ্জন সত্যি করে খেললেন না লিওনেল মেসি। অধিনায়কের অনুপস্থিতি বাধা হলো না আর্জেন্টিনার জন্য, বাধা হলো না লা পাজের দুরূহ কন্ডিশনও। ছন্দময় ফুটবলের পসরা মেলে ধরল বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। বলিভিয়ার বিপক্ষে ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচে তারা তুলে নিল দুর্দান্ত জয়।
মঙ্গলবার রাতে এস্তাদিও হার্নান্দো সিলেসে একপেশে লড়াইয়ে ৩-০ গোলে জিতেছে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। আকাশি-সাদা জার্সিধারীদের তিন গোলদাতা হলেন এঞ্জো ফার্নান্দেজ, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো ও নিকোলাস গঞ্জালেজ। জাল খুঁজে না পেলেও মেসির বদলে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া আনহেল দি মারিয়া দেখান অসাধারণ পারফরম্যান্স। সতীর্থদের দুটি গোলে অ্যাসিস্ট করেন অভিজ্ঞ তারকা।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২ হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত স্টেডিয়ামটিতে খেলা ভীষণ কঠিন। কারণ হলো বাতাসে অক্সিজেনের স্বল্পতা। তাই ৩৬ বছর বয়সী মেসি প্রায় ফিট থাকলেও তাকে নিয়ে ঝুঁকি নেয়নি আর্জেন্টিনা। গত শুক্রবার ইকুয়েডরের বিপক্ষে বাছাইয়ের পর্বের প্রথম ম্যাচে অস্বস্তি নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। এরপর মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভয়ের কিছু না মেলায় দলের সঙ্গে লা পাজে গেছেন। তারপরও মেসিকে স্কোয়াডে রাখা হয়নি। এক্ষেত্রে তার বয়স এবং বর্তমান ক্লাব ইন্টার মায়ামির ব্যস্ত সূচির কারণে সৃষ্ট ক্লান্তি ভূমিকা রেখেছে।
ম্যাচের দশম মিনিটে প্রথমবার প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতি ছড়ায় আর্জেন্টিনা। প্রায় ২০ গজ দূর থেকে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের রদ্রিগো দি পলের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই মিনিট পর গোলরক্ষকের দক্ষতায় বেঁচে যায় বলিভিয়া। তাগলিয়াফিকোর পাসে প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে জোরালো শট নেন এঞ্জো। হাওয়ায় ভাসা গিয়ের্মো ভিসকারার হাত ছুঁয়ে গোলপোস্টে বাধা পেয়ে বল চলে যায় বাইরে।
২০তম মিনিটে আদ্রিয়ান হুসিনোর অসাবধানতার সুযোগে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেজ। দুরূহ কোণ থেকে তার নেওয়া শট দৃঢ়তার সঙ্গে ঠেকান ভিসকারা। দুই মিনিট পর বলিভিয়া সুযোগ তৈরি করে। ভিক্তর আব্রেগোর কোণাকুণি শট ঝাঁপিয়ে সহজেই ঠেকান গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
টানা আক্রমণের সাফল্য আর্জেন্টিনা পায় ৩১তম মিনিটে। ডানপ্রান্ত থেকে ছয় গজের বক্সে নিখুঁত ক্রস ফেলেন বেনফিকার উইঙ্গার দি মারিয়া। আলতো টোকায় বাকি কাজটা অনায়াসে সেরে দলকে এগিয়ে নেন চেলসির মিডফিল্ডার এঞ্জো। পাঁচ মিনিট পর স্বাগতিকদের ম্যাচে ফেরার আশায় লাগে বড় ধাক্কা। ক্রিস্তিয়ান রোমেরোকে বিপজ্জনক ফাউল করেন রবার্তো ফার্নান্দেজ। শুরুতে তাকে হলুদ কার্ড দেখানো হলেও পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে তা লাল কার্ডে উন্নীত করেন রেফারি। ফলে ম্যাচের প্রায় এক ঘণ্টা ১০ জন নিয়ে খেলতে হয় বলিভিয়াকে।
৪২তম মিনিটে আলবিসেলেস্তেরা ব্যবধান দ্বিগুণ করে অলিম্পিক লিওঁর ডিফেন্ডার তাগলিয়াফিকোর কল্যাণে। দি মারিয়ার ফ্রি-কিকে ডি-বক্সে অরক্ষিত অবস্থায় হেড করে জাল কাঁপান তিনি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ হারান আলভারেজ। ডি-বক্সে তাকে একদম ফাঁকায় খুঁজে নেন এঞ্জো। কিন্তু বলই নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন তিনি।
বিরতি শেষে দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে আবার দূর থেকে চেষ্টা চালান দি পল। তার ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া শট ভিসকারা ঝাঁপিয়ে পরে রুখে দেন। ৭০তম মিনিটে ভাগ্যের ফেরে গোলের উল্লাস করতে পারেননি আলভারেজ। দি মারিয়ার সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। ডানদিক থেকে তার কোণাকুণি শট বাধা পায় দূরের পোস্টে। দুই মিনিট পর বলিভিয়ার চার ডিফেন্ডারের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে ২০ গজ দূর থেকে শট নেন দি মারিয়া। তবে বল ভিসকারাকে ফাঁকি দিতে পারেনি।
৮৩তম মিনিটে সফরকারীদের ফের গোলের উল্লাসে মাতান ফিওরেন্তিনার উইঙ্গার গঞ্জালেজ। সাত মিনিট আগে বদলি নামা এজিকিয়েল পালাসিওস ডি-বক্সের বামদিকে বল বাড়ান তাকে। জোরালো শটে ভিসকারাকে পরাস্ত করেন তিনি। ম্যাচের বাকি সময়ে আর্জেন্টিনার জার্সিতে বদলি হিসেবে আরও নামেন লাউতারো মার্তিনেজ, আলেহান্দ্রাওয়া গার্নাচো, লেয়ান্দ্রো পারেদেস ও আনহেল কোরেয়া।
বিশ্বকাপের বাছাইয়ে আর্জেন্টিনার এটি টানা দ্বিতীয় জয়। এর আগে ইকুয়েডরের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে জিতেছিল তারা। পূর্ণ ৬ পয়েন্ট নিয়ে তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা আপাতত রয়েছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে।
Comments