উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

বায়ার্নকে বিদায় করে সেমিতে ম্যান সিটি, প্রতিপক্ষ রিয়াল

ছবি: এএফপি

সেমিফাইনালে ওঠার পথটা আগেই সুগম করে রেখেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। এবারও দুর্দান্ত ছন্দে থাকা আর্লিং হালান্ডের গোলে প্রতিপক্ষের মাঠে লিড নিল তারা। অন্যদিকে, নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিলেও প্রত্যাবর্তনের স্মরণীয় কোনো গল্প লেখা হলো না বায়ার্ন মিউনিখের। ইয়োশুয়া কিমিখের লক্ষ্যভেদে কেবল সমতাতেই ফিরতে পারল তারা। তাদেরকে বিদায় করে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে উঠল পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।

বুধবার রাতে আসরের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ১-১ গোলে ড্র করেছে বায়ার্ন ও সিটি। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ ব্যবধানের অগ্রগামিতায় সেমির টিকিট পেয়েছে সিটিজেনরা। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে বাভারিয়ানদের ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল তারা। এই নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব প্রতিযোগিতার সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ক্লাবটি।

সেমিতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের লিগের শিরোপাধারী ম্যান সিটির প্রতিপক্ষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। আরেক কোয়ার্টারে দুই লেগ মিলিয়ে চেলসিকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। গত মৌসুমের শেষ চারেও মুখোমুখি হয়েছিল দুই পরাশক্তি। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ ব্যবধানের অগ্রগামিতায় সিটিকে ছিটকে দিয়ে ফাইনালে উঠেছিল রিয়াল।

তিন গোলে পিছিয়ে থাকার ব্যবধান ঘোচাতে বায়ার্ন কোচ টমাস টুখেল ছিলেন মিরাকলের আশায়। সেটা বাস্তবে রূপ নেয়নি। তাদের আক্রমণের ঝাপটা দারুণভাবে সামাল দেয় সিটি। ৫৮ শতাংশ বল পায়ে রাখা বায়ার্ন গোলমুখে ১৯টি শট নিয়ে সাতটি রাখে লক্ষ্যে। বিপরীতে, সিটির সাতটি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল দুটি।

প্রথমার্ধে পেনাল্টি মিস করা ২২ বছর বয়সী নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার হালান্ড দ্বিতীয়ার্ধে খুঁজে নেন জাল। আগের লেগেও নিশানা ভেদ করেছিলেন তিনি। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মাত্র ৮ ম্যাচে ১২ গোল হয়ে গিয়েছে তার। তিনি আছেন আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকার শীর্ষে। সব মিলিয়ে এই প্রতিযোগিতায় ২৭ ম্যাচে ৩৫ গোল রয়েছে তার নামের পাশে।

দুই দল গোলশূন্যভাবে বিরতিতে যাওয়ার আগে সবচেয়ে বড় সুযোগটা এসেছিল হালান্ডের সামনে। কিন্তু তিনি হতাশ করায় এগিয়ে যাওয়া হয়নি সিটির। ম্যাচের ৩৭তম মিনিটে তিনি ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন স্পট-কিক। এর আগে ডি-বক্সে ফরাসি ডিফেন্ডার দায়োত উপামেকানোর হাতে বল লাগলে রেফারি বাজান পেনাল্টির বাঁশি। ক্লাব পর্যায়ে গত দুই বছরের মধ্যে ১৬ বারের চেষ্টায় এটাই হালান্ডের প্রথম পেনাল্টি মিস। সবশেষ ২০২১ সালের এপ্রিলে সাবেক ঠিকানা বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ইউনিয়ন বার্লিনের বিপক্ষে স্পট-কিকে অসফল হয়েছিলেন তিনি।

প্রথমার্ধে একাধিক ভালো সুযোগ তৈরি করে স্বাগতিক বায়ার্ন। ১৭তম মিনিটে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে লেরয় সানের কোণাকুণি শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। চার মিনিট পর এই জার্মান ফরোয়ার্ডের ফ্রি-কিক রুখে দেন সিটির ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এদারসন। ৪২তম মিনিটে বামদিকে কিংসলে কোমানকে খুঁজে নেন সানে। তবে ফরাসি এই ফরোয়ার্ডের জোরালো শটও পরাস্ত করতে পারেনি এদারসনকে।

বিরতির পর সফরকারীদের শুরুটা হয় উজ্জ্বল। ম্যাচের ৫৫তম মিনিটে ইংলিশ মিডফিল্ডার জ্যাক গ্রিলিশের রক্ষণচেরা পাসে ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে যান হালান্ড। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বায়ার্নের সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের দিকে সরাসরি শট নিয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি।

দুই মিনিট পরই অবশ্য দলকে উল্লাসে মাতান হালান্ড। কোমানের ভীতিকর ক্রস প্রতিহত করে পাল্টা আক্রমণে ওঠে গার্দিওলার দল। বেলজিয়ান মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে মাঝমাঠ থেকে খুঁজে নেন হালান্ডকে। উপামেকানো ডি-বক্সের সামনে শারীরিক ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলে তার কাজটা হয়ে পড়ে সহজ। সামনে এগিয়ে আসা সোমারকে ফাঁকি দিয়ে কাল কাঁপান তিনি।

সমতায় ফিরতে মরিয়া বায়ার্নের একটি গোল বাতিল হয় ৭৫তম মিনিটে। মাথিস তেল লক্ষ্যভেদ করলেও এর আগে অফসাইডে ছিলেন কোমান। তিন মিনিট পর অদ্ভুতুড়ে কায়দায় আত্মঘাতী গোল হজম করতে যাচ্ছিল সিটি। তবে বল গোললাইন অতিক্রম করা ঠেকিয়ে তাদের ত্রাতা বনে যান পর্তুগিজ ডিফেন্ডার রবেন দিয়াস।

ম্যাচের ৮০তম মিনিটে সান্ত্বনাসূচক গোলের স্বাদ নেয় টুখেলের দল। সফল পেনাল্টি থেকে এদারসনকে পরাস্ত করেন জার্মান মিডফিল্ডার কিমিখ। এর আগে বদলি নামা সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড সাদিও মানের ক্রস বাইলাইনের কাছে মানুয়েল আকাঞ্জির হাতে লাগে। এতে স্পট-কিকের নির্দেশ করেন রেফারি। যোগ করা সময়ে মানের শট থাকেনি লক্ষ্যে।

এরপর শেষ বাঁশি বাজলে উল্লাসে মাতোয়ারা হয় ম্যান সিটি। তাদের আগে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠার কীর্তি ছিল কেবল দুটি ইংলিশ ক্লাবের। তারা হলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও চেলসি। দুই ক্লাবই ২০০৬-০৭ থেকে ২০০৮-০৯ পর্যন্ত মৌসুমে টানা সেমিতে জায়গা করে নিয়েছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Failure in state formation leads to the rise of fascist rule: Prof Ali Riaz

He made the remarks at the beginning of a discussion between the commission and the Amjanata Party.

1h ago