জাদেজার দুর্দান্ত লড়াই ছাপিয়ে ইংল্যান্ডের রোমাঞ্চকর জয়

শোয়েব বসিরের বলটা ঠিকঠাক ডিফেন্স করেছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ, কিন্তু দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে! বল মাটিতে পড়ে পরে পেছন দিকে গিয়ে আঘাত হানল স্টাম্পে, বেল পড়তেই বাঁধনহারা উল্লাসে মাতল ইংল্যান্ড। মাথা নুইয়ে বসে পড়লেন সিরাজ। শেষ দিনে রবীন্দ্র জাদেজার দুর্দান্ত লড়াই ছাপিয়ে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
লর্ডসে সোমবার তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড ও জয়ের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন জাদেজা। টেল এন্ডারদের নিয়ে অবিশ্বাস্য লড়াইয়ে দলকে জেতার কাছে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তবে তাকে এক পাশে অপরাজিত রেখেই শেষ হয়ে গেল ম্যাচ। শেষ সেশনে গিয়ে ২২ রানের জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে ২-১ ব্যবধানে।
Test Cricket.
Wow.
pic.twitter.com/XGDWM1xR2H— England Cricket (@englandcricket) July 14, 2025
১৯৩ তাড়ায় ১১২ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলো ভারত। তখন তাদের হার মনে হচ্ছিলো লাঞ্চের আগেই হয়ে যাবে। কিন্তু এরপর চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তায় অসাধারণ লড়াই দেখাতে থাকেন জাদেজা। জাসপ্রিত বুমরাহকে নিয়ে ২২ ওভারের বেশি ব্যাট করে ৩৫ রান যোগ করেন তিনি। শেষ উইকেটে সিরাজকে নিয়ে লড়াই চালান আরও ১৩ ওভার। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত রয়ে যান ৬১ রান। অন্য আর একজন ব্যাটার সামান্য সঙ্গে দিলেও ভারতকে ঐতিহাসিক জয় এনে দিতে পারতেন এই অলরাউন্ডার।

এই টেস্টের তৃতীয় দিন পর্যন্ত দুই দল ছিলো সমতায়, প্রথম ইনিংসে রান ছিলো সমান (৩৮৭ করে)। চতুর্থ দিনে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস দুইশোর নিচে আটকে জয়ের ছবি আঁকছিলো ভারত। তবে অল্প পুঁজি নিয়েই জ্বলে উঠলেন জোফরা আর্চার, বেন স্টোকসরা। দারুণ জয়ে লর্ডস টেস্ট জিতে সিরিজে এগিয়ে গেল স্বাগতিক দল।
১৯৩ রানের লক্ষ্যে নেমে চতুর্থ দিন বিকেলেই ৫৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। পঞ্চম দিনের খেলা শুরুর আগে তবু তারা সম্ভাবনায় কিছুটা এগিয়ে ছিলো। সকালের শুরুতেই দিক বদল করলে ম্যাচের গতিপথ পুরোটা নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন আর্চার ও স্টোকস।
রান তাড়ায় সবচেয়ে বিপদজনক হতে পারতেন যিনি সেই রিশভ পান্তকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন আর্চার। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান লোকেশ রাহুলকে ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ করে থামান স্টোকস। মাঠের আম্পায়ার নট আউট দিলে রিভিউ নিয়ে তাকে ফিরিয়ে চালকের আসনে বসে ইংল্যান্ড। খানিক পর অসাধারণ ফিরতি ক্যাচে ওয়াসিংটন সুন্দরকে আউট করে ম্যাচ দ্রুত শেষ করে দেওয়ার আভাস দেন আর্চার।
প্রথম ঘণ্টায় ওই তিন উইকেট পড়ার পর প্রথমে নিতিশ কুমার রেড্ডিকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন জাদেজা। লাঞ্চ বিরতির খানিক আগে ক্রিস ওকসের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন নিতিশ।
এরপরই জাদেজার সঙ্গে লড়াইয়ে যোগ দেন বুমরাহ। ক্রিজ আঁকড়ে রাখার দিকে মন দেন তারা। জাদেজাই ধীরে ধীর রান আনছিলেন, বুমরাহকে আগলে রাখার কাজও করছিলেন তিনি। এই জুটি টিকে যায় ২২ ওভারের বেশি। এক সময় কিছুটা আশার ঝিলিকও তৈরি হয় ভারতের। শেষ পর্যন্ত ধৈর্য হারা হয়ে বুমরাহ স্টোকসের বলে এলোপাথাড়ি শট খেলে সহজ ক্যাচ দিলে ভেঙে যায় এই জুটি। ১৩২ বলে ৩৫ রান যোগ হয় নবম উইকেটে।
সিরাজকেও একই তরিকায় হাঁটেন জাদেজা। বেশিরভাগ সময় স্ট্রাইক রাখছিলেন নিজের কাছে। তবে মাঝে মাঝে সিরাজ নিয়েই আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছিলেন। বিশেষ করে স্পিনারের বল সামলানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন আগের ওভারে। জাদেজাও ভরসা রাখেন তার পর। সিরাজ ভরসার দাম দিচ্ছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য শেষ পর্যন্ত হতাশায় পুড়িয়েছে তাকে ও ভারতকে।
Comments