মিরপুরে সাকিবকে বিদায়ী টেস্ট খেলতে না দেওয়া ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বললেন শান্ত
সাকিব আল হাসান চেয়েছিলেন মিরপুরেই ক্যারিয়ার শেষ টেস্ট খেলতে। তাকে স্কোয়াডেও রেখেছিল বিসিবি। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে তাকে আসতে মানা করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। দেশের ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারকে শেষ টেস্ট খেলতে না দেওয়ার ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে সাকিবকে মিরপুরে বিদায় দেওয়া উচিত।
ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজের সময় কানপুর টেস্টের আগে অবসর ঘোষণা দেন সাকিব। তখন জানান মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলে আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট থেকে বিদায় নিতে চান তিনি। বাকি দুই সংস্করণের মধ্যে টি-টোয়েন্টি আর না খেলা ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ওয়ানডে ছাড়ার কথা বলেন সাকিব।
এরপরই পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাকিব দেশে ফিরে শেষ টেস্ট খেলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে তৈরি হয় সংশয়। সাকিবকে নিরাপত্তা দিতে শুরুতে অপারগতা জানান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাংসদ সাকিবকে অবস্থান পরিষ্কার করতে বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। জনগণ সাকিবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করলে তার কিছু করার নেই বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। পরে অবশ্য সুর নরম করে সাকিবের দেশে ফেরা ও দেশ ছাড়ায় বাধা না থাকার কথা বলেছিলেন।
সেভাবেই সাকিবকে দলে রেখে স্কোয়াড দিয়েছিল বিসিবি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশের পথে রওয়ানাও হয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু দুবাই আসার পর তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের ফ্লাইটে উঠতে বারণ করা হয়। একই সময়ে দেশে একদল লোক সাকিব বিরোধী বিক্ষোভ করে মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে। সাকিব সমর্থকরাও পাল্টা কর্মসূচিতে সাকিবকে দেশে ফিরতে দেওয়ার দাবি তোলে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের আপত্তির মুখে দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যান সাকিব। মিরপুরে আপাতত আর বিদায় নেওয়া হচ্ছে না এই তারকার।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের নামার আগে রোববার সংবাদ সম্মেলনে আসা শান্তর কাছে অনেক প্রশ্ন যায় সাকিব ঘিরে। বাংলাদেশ অধিনায়ক স্পষ্ট করেই জানান নিজের হতাশা, 'কীভাবে দেখছি আসলে...যেটা বললাম দুর্ভাগ্যজনক (সাকিবকে মিরপুরে বিদায় দিতে না পারা)। যেটা হওয়া উচিত ছিলো। আমরা সবাই জানি কেন হয়নি। এটা নিয়ে টেস্ট ম্যাচের আগের দিন কথা এগুতে চাই না।'
টেস্টের মাত্র পাঁচদিন আগে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে চাকরীচ্যুত করা, সাকিবকে ফিরতে না দেওয়া মিলিয়ে দলের মানসিক অবস্থা কঠিন বলে জানান শান্ত, 'কঠিন (মানসিক অবস্থা)। সত্যি করে বললে। তবে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই সেটা নিয়ে চিন্তা করাটা সময় নষ্ট। যত বেশি সম্ভব খেলাটে ফোকাস করা। কারণ খুব গুরুত্বপূর্ণ দুইটা টেস্ট।'
মিরপুরে সাকিবকে বিদায় দিতে নানান পরিকল্পনা করেছিলেন তার সতীর্থরা। শান্ত জানান এসব পরিকল্পনা পেন্ডিং রয়ে যাচ্ছে, 'অবশ্যই পরিকল্পনা ছিলো আমাদের। বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় (সাকিব)। শুধু বাংলাদেশ বলব না। খুবই দুর্ভাগ্যজনক যেকোনো কারণেই হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রত্যেকটা খেলোয়াড় মনে করে এটা পেন্ডিং থেকেই গেলো।'
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গণহারে মামলার ভিড়ে সাকিবকেও একটি হত্যা মামলার আসামী করা হয়। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা ফেসবুকে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এবার সাকিবকে ফিরতে না দেয়ায় ফেসবুকে এমন সোচ্চার দেখা যায়নি তাদের। এটা কি ভয় থেকে? শান্তর জবাব, 'এরকম কোন কিছু না (ভয়ের কারণে ফেসবুকে পোস্ট দেননি কিনা) । আগামী কাল একটা টেস্ট ম্যাচ শুরু হবে। আমরা সবাই জানি এখানে উনি শেষ টেস্ট খেলতে পারলে খুব ভালো হতো। ফোকাসটা ওই জায়গায় আনা হয়েছে যেন আমরা টেস্ট ম্যাচটা জিততে পারি। যত কথা বলব এখন কোন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আমরা সবাই জানি কেন উনি আসতে পারছে না। এখন বর্তমান সময়ে যেরকম অবস্থা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেই সব সমাধান হয়ে যায়। আমিও ভাবছি প্রতিদিন একটা করে স্ট্যাটাস দেব।'
সাকিব না থাকায় সব সময় যে সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ, এবারও একাদশ সাজাতে সেই সমস্যার কথাও জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'এখনো সমস্যা হচ্ছে কম্বিনেশন মেলাতে। অস্বীকার করার কিছু নেই। এই জায়গা ঠিক করতে কিছুদিন সময় লাগবে। যে খেলোয়াড়গুলো আছে সবার এই সামর্থ্য আছে যার যে জায়গা থেকে ভূমিকা পালন করবে।'
Comments