পুরনো শিষ্যদের টুপিখোলা অভিনন্দন ডোনাল্ডের
বাংলাদেশের পেস আক্রমণের আজকের উন্নতির পেছনে অনেক বড় ভূমিকা অ্যালান ডোনাল্ডের। দক্ষিণ আফ্রিকান সাবেক পেসার বাংলাদেশের বোলিং কোচ থাকার সম পেসারদের দৃশ্যমান উন্নতি দেখা যায়। বর্তমান জাতীয় দলের পেসারদের প্রায় সবাই তার সঙ্গে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে দিলেও এখনো পুরনো শিষ্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে ডোনাল্ডের। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে দুই টেস্টেই নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদদের ঝলক দেখে ভীষণ সন্তুষ্ট ডোনাল্ড দ্য ডেইলি স্টারে একান্ত সাক্ষাতকারে তাদের উন্নতি নিয়ে কথা বলেছেন।
আপনার সময়ে বাংলাদেশের পেস ইউনিটের বিশাল বদল দেখা গেছে। এখন তাদের প্রথমবারের মতন টেস্টে ইনিংসে ১০ উইকেট দেখার উন্নতি কেমন মনে হচ্ছে?
অ্যালান ডোনাল্ড: আমার একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো ড্রেসিংরুম থেকে 'ফিয়ার ফ্যাক্টর' সরিয়ে দেয়া। 'ফিয়ার ফ্যাক্টর' বলতে আমি বুঝি ছেলেরা এখন ভুল করতে কম ভয় পায়। আমি সব সময় জানতাম প্রত্যেকটা ছেলে অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান, সহজাত প্রতিভা আছে তাদের, দুর্দান্ত কবজি আছে। আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো তাদের সঙ্গে মানসিকতা নিয়ে কাজ করা। তাদেরকে বোঝানো যে শক্ত মানসিকতা কি এবং কীভাবে ভয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। পুরো গ্রুপকে প্রতিনিয়ত এই প্রক্রিয়া মনে করিয়ে দেওয়ার ব্যাপার ছিলো। আমার মনে হয় ধীরে ধীরে, বছর-খানেকের মধ্যেই আমরা ফল পেতে শুরু করলাম। আমি সব সময় তাদের সঙ্গে ছিলাম, ভুল নিয়ে চিন্তিত না হতে বলতাম, তাদের জন্য বড় ব্যাপার ছিলো আমাকে ভরসা করা। একবার যখন ফল মিলল তারা আমাকে ভরসা করতে শুরু করল। আমি ভুল নিয়ে কখনই কথা বলতাম না, সব সময় ইতিবাচকভাবে শক্তিবৃদ্ধি করতে চাইতাম। এখন তাদের ভালো করতে দেখা আমার জন্য দারুণ সন্তুষ্টির।
বছর দুয়েক আগে আমি নাহিদ রানার সঙ্গে আলাপ করি চট্টগ্রামে। যেখানে তরুণদের একটা দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে এসেছিল। তাকে দেখে আমি রোমাঞ্চিত ছিলাম। আমি আনন্দিত যে সে একটা ভূমিকায় এসেছে। হাসান মাহমুদকে ভালো করতে দেখা, সে পাঁচ উইকেট নিল। নাহিদ ৪ উইকেট নিল। এটা দেখা দুর্দান্ত। কীভাবে ছেলেরা এগিয়ে এসে প্রক্রিয়ার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এটাই সবচেয়ে দারুণ দিক।
বাংলাদেশ এখন ঘরের মাঠে নিয়মিতই বেশি পেসার নিয়ে টেস্ট খেলে। এই বদলটা কীভাবে দেখেন?
ডোনাল্ড: আমার মনে হয় এটা মানসিকতার ব্যাপার। টেস্ট ক্রিকেট নির্মম। আপনাকে বোলার সমৃদ্ধ হয়ে প্রতিটা বলে চাপ তৈরি করতে হবে। আমি এখনো নিয়মিত তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কথা বলি। কাল রাতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আমাদের ভালো সময় কেটেছে। এই গ্রুপের মধ্যে যেমন বিশ্বাস আছে যেটা আগে আমি কখনো দেখিনি। প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদের ছুটে যাওয়া দেখতে পারা ভীষণ সন্তুষ্টির বিশেষ করে পাকিস্তানের মতন শক্তিশালী দলের বিপক্ষে। বল করার জন্য পাকিস্তান সবচেয়ে কঠিন জায়গা। রাওয়ালপিন্ডির মতন ভেন্যুতে, যেখানে কিনা ফ্ল্যাট উইকেট হয়। সেখানে পর পর দুই ম্যাচ খেলা। পুরো গ্রুপকে আমার টুপি খোলা অভিনন্দন।
হাসান মাহমুদ সাদা বলে নিয়মিত ছিলো আগে, তাকে টেস্টে খেলানো কি পূর্ব পরিকল্পনা থেকে?
ডোনাল্ড: হাসান মাহমুদের সঙ্গে আলাপ করার আগে রাসেল ডমিঙ্গোর একটা কথা আমার মনে পড়ে। সে বলেছিল, 'তুমি হাসান মাহমুদ নামের এক তরুণে মুগ্ধ হবে।' সে সব সংস্করণে খেলতে পারে। সে এটাও বলেছিল যে হাসান বাংলাদেশের সবচেয়ে স্কিলফুল বোলার। আমি হাসানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'তুমি কি টেস্ট খেলতে চাও?' সে বলেছিল, 'হ্যাঁ'। বার্তাটা ছিলো সে সব সংস্করণে নিজেকে প্রমাণ করতে প্রস্তুত। আমি খুশি যে সে টেস্ট দলে আছে। কাজেই এটা পূর্ব পরিকল্পিত। আমি আশা করছি পাকিস্তানের দুই টেস্টের মতন এমন পারফরম্যান্স আরও দেখবেন। খালেদ আহমেদের জন্য কঠিন, সে টেস্টে নিয়মিত। বোলিং গ্রুপটা এতটাই শক্তিশালী যে আপনাকে তিনজন ভিন্ন ভিন্ন পেসারকে ভিন্ন উইকেটে খেলাতে পারেন।
সামনে অনেক ম্যাচ আছে। পেসারদের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট করে খেলানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ডোনাল্ড: আপনি এমন পজিশনে যেতে চান যেখানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলাতে পারেন, একজনকে খেলিয়ে আবার দুই টেস্ট বিশ্রামে দেখতে পারেন। যেটা অস্ট্রেলিয়া খুব ভালো করতে পারে। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে আপনাকে পরের সিরিজের জন্য তিনজন সতেজ রাখা যায়। ভারতে পরের সিরিজের আগে আমার মনে হয় বাংলাদেশের হাতে বেশি সময় নেই।
পরের পাঁচ বছরে বাংলাদেশের পেস আক্রমণকে কোথায় দেখতে চান?
ডোনাল্ড: আমি তাদের সমৃদ্ধ হতে দেখতে চাই। পেস বোলিংয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যে এটা হবে বড় অর্জন। আপনাকে এই আত্মবিশ্বাস দেখাতে হবে এবং সেটা বাড়তে দিতে হবে। আমি মনে করি তাদের আরও তরুণ পেসার খুঁজে বের করা দরকার। গ্রুপ যত বড় হবে, তরুণদের মধ্যে শেখার ব্যাপারটা বাড়বে। আমি মনে করি তারা পুলটা বড় করবে, আরও তরুণ খুঁজে পাবে।
Comments