আইপিএল

কোহলিদের বিদায় করে ফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখল রাজস্থান

ছবি: এএফপি

সম্মিলিত পারফরম্যান্স বোধহয় একেই বলে! রাজস্থান রয়্যালসের প্রায় প্রত্যেকেই ম্যাচে ভূমিকা রেখেছেন কোনো না কোনোভাবে। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত রাজস্থানের বিপক্ষে যেন স্রেফ টিকে থাকার লড়াই-ই চালিয়ে যেতে পেরেছেন বিরাট কোহলি-ফ্যাফ ডু প্লেসিরা, জাগাতে পারেননি শেষ হাসির আশা। শেষতক ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেছে সঞ্জু স্যামসনের দল। তারা টিকে থাকছে আইপিএলের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে।

বুধবার আহমেদাবাদে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু গড়ে ১৭২ রানের পুঁজি। এক ওভার হাতে থাকতেই সেই সংগ্রহ পেরিয়ে গেছে রাজস্থান। তাদের হয়ে পাওয়ার প্লেতে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ট্রেন্ট বোল্ট ১৬ রানে ১ উইকেট নেন। মাঝের ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিন সর্দারি দেখান মাত্র ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে। আর মাঝে ও শেষে কিছুটা খরুচে হলেও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন আভেশ খান।

এরপর লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাট হাতে রাজস্থানের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর আসে যশস্বী জয়সোয়ালের ব্যাট থেকে, ৪৫ রান। আরও ছয় ব্যাটারের ছোট ছোট কার্যকর ইনিংস তাদেরকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে পৌঁছে দিয়েছে ১৯ ওভার শেষেই। এতে থেমে গেছে বেঙ্গালুরুর অদম্য যাত্রা। খাদের কিনার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এগোতে থাকা দলটির টানা ছয় ম্যাচের জয়রথ শেষে এসে যায় তাই বিদায়ের ক্ষণ।

১৭৩ রানের লক্ষ্যে রাজস্থানের দুই ওপেনারেরই শুরু হয় নড়বড়ে। ৩ রানে জীবন পান জয়সোয়াল। যদিও স্লিপের ক্যাচটি হাতের নাগালেই এসেছিল শুধু ক্যামেরন গ্রিনের মতো উচ্চতার খেলোয়াড় থাকায়। ১১ রানে সহজ ক্যাচ মিসেই দ্বিতীয় জীবন পেয়ে যান আরেক ওপেনার টম কোহলার ক্যাডমোর। সেটিও কার হাতে! বিশ্বের সেরা ফিল্ডারদের একজন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। জীবন অবশ্য ক্যাডমোর কাজে লাগাতে পারেননি সেভাবে। ২০ রানেই ফিরে যান লকি ফার্গুসনের অসাধারণ স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে। 

সময়ের সাথে ছন্দ খুঁজে পাওয়া জয়সোয়ালের ব্যাটে এগিয়ে যেতে থাকে রাজস্থান। বাঁহাতি এই ব্যাটারের সঙ্গে স্যামসনের জুটি ম্যাচ থেকে বেঙ্গালুরুকে ছিটকে দেওয়ার পথেই ছিল। কিন্তু চার বলের ব্যবধানে দুজনের উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফিরে আসে ডু প্লেসির দল। স্কুপ খেলতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে জয়সোয়াল ৩০ বলে ৮ চারে আউট হন ৪৫ রানে। অযথা ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে বিপদ ডেকে আনেন স্যামসন। কার্ন শর্মা দারুণভাবে ওয়াইড লাইনের বাইরে বল করে তাকে স্টাম্পিংয়ের শিকার বানান ১৩ বলে ১৭ রানে। দুই তরুণ রিয়ান পরাগ ও ধ্রুব জুরেল আত্মবিশ্বাসের সাথে শুরু করেন। কিন্তু তাদের জুটিটাও ২৬ রানের বড় হয়নি দুর্ভাগ্যজনকভাবে জুরেল রান আউট হয়ে গেলে। বাউন্ডারি থেকে কোহলির দুর্দান্ত থ্রোতে জুরেলের বিদায় ঘটে ৮ রানেই। 

ছিটকে দেওয়ার কাজটা আসলে করে দেয় এরপরের জুটিই। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নামা শিমরন হেটমায়ার দ্রুতই ম্যাচে প্রভাব রাখেন বড়সড়। অন্যদিকে পরাগও খেলতে থাকেন দারুণভাবে। পাঁচ ওভারে ৪৭ রানের প্রয়োজন যখন ছিল তাদের, তখন দুজনে মিলে গ্রিনের ওভারে ১৭ রান এনে লক্ষ্য নাগালেই এনে ফেলেন। ১৮ বলে ১৯ রান বাকি থাকতে মোহাম্মদ সিরাজ ছয় রানের ওভারে দুজনকেই যদিও ফিরিয়ে দেন সাজঘরে। পরাগ বোল্ড হন ২৬ বলে দুটি করে চার ও ছয়ে ৩৬ রান করে, হেটমায়ার ১৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ রানে ক্যাচ আউট। শেষ যা আশার কিরণ দেখতে পেয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর সমর্থকরা তখন, তা অদৃশ্য হয়ে যায় রভম্যান পাওয়েলের ঠাণ্ডা মাথার ক্যামিওতে। ৮ বলে পাওয়েল খেলেন ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৬ রানের ইনিংস।

এর আগে বেঙ্গালুরুর ওপেনিং জুটি ভালোই টের পেয়েছে, সুইং পেলে বোল্ট কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন। কোহলি ও ডু প্লেসি আগ্রাসী হতে চাইলেও বোল্টের নিয়ন্ত্রণ তাদের ডানা মেলতেই দেয়নি। ৩ ওভারের স্পেলে মাত্র ৬ রান দিয়ে ডু প্লেসিকে বিদায় করে দেন বোল্ট। ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়ে ১৪ বলে ১৭ রান করেই আউট হন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক। 

অপরপ্রান্তে দুই দেশি বোলারের উপর চড়াও হন কোহলি। বোল্ট বাদে বাকি তিন ওভারে ৩৭ রানে এনে বেঙ্গালুরু পাওয়ারপ্লে শেষ করে ৫০ রানে। কিন্তু ৮ম ওভারে কোহলিও আউট হয়ে যান ২৪ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে। যুজবেন্দ্র চাহালের বলে স্লগ সুইপে মিডউইকেটের হাতে মরণ ঘটে কোহলিরও। কিন্তু চাহালের উপর গ্রিন ও রজত পাতিদারের জুটি চড়াও হয়ে রানের চাকা সচল রাখে। যদিও অশ্বিন তাদেরকে বেধে রাখেন ভালোমতোন। শেষমেশ অশ্বিনের বলে গ্রিন ২৭ রানে আউট হয়ে গেলে ভেঙে যায় ৪১ রানের জুটি। ক্যারম বলে মারতে গিয়ে খাড়া ক্যাচ তুলে গ্রিনের ২১ বলে ২ চার ও ১ ছক্কার ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। 

অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাক্সওয়েল এসে প্রথম বলেই মারতে যান এবং লং অনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন! সেট হয়ে যাওয়া পাতিদার দশ বল যেতে না যেতেই ম্যাক্সওয়েলের পথ অনুসরণ করেন। আভেশ খানের খাটো লেংথের বলে মিডঅফের ওপর দিয়ে মারতে গেলে ধরা পড়েন। ২২ বলে দুটি করে চার ও ছক্কায় ৩৪ রানেই থেমে যায় পাতিদারের ইনিংস। দীনেশ কার্তিকও একই লেংথের বলে ক্যাচ তুলে আউট হন মাত্র ১১ রান করে।

ফোর ডাউনে নামা মাহিপাল লমরর স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনিও ওই ওভারেই আউট হয়ে গেলে শেষের ঝড়ের সম্ভাবনা কমে যায় বেঙ্গালুরুর। ১৯তম ওভারে আভেশের বলে ১৭ বলে দুটি করে চার ও ছক্কায় ৩২ রান করে আউট হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হয়ে নামা স্বপ্লীল সিংয়ের ৪ বলে ৯ রানের ক্যামিওতে বেঙ্গালুরু গড়ে ১৭২ রানের পুঁজি। যে পুঁজি যথেষ্ট হয়নি তাদের অসাধারণ ফিরে আসার গল্পের ব্যাপ্তি বাড়ানোর জন্য।

Comments

The Daily Star  | English
us tariff impacts bangladesh synthetic shoe exports

US tariff threatens booming synthetic shoe exports

The country’s growing non-leather footwear industry now faces a major setback as a steep new tariff from the United States threatens its growth

15h ago