শেষ ওভারের নাটকীয়তায় চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

শেষ ম্যাচে তাদের বিশাল কাজ করা বাকি ছিল। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে কমপক্ষে ১৮ রানে জিততে হতো।

প্রথম আট ম্যাচে স্রেফ এক জয়। তখন কে ভেবেছিল, এই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুই শেষমেশ জায়গা করে নেবে আইপিএলের প্লে-অফে! খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা পাঁচ জয়ের পরও শেষ ম্যাচে তাদের বিশাল কাজ করা বাকি ছিল। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে কমপক্ষে ১৮ রানে জিততে হতো। সেই চাহিদা ভালোভাবে মিটিয়ে তারা জিতে গেল ২৭ রানে। টানা ছয়টি জয় নিয়ে এই ফিরে আসার গল্প যেন কোনো রূপকথা! পয়েন্ট তালিকার চতুর্থ স্থান দখলের ম্যাচে নাটকের কমতি থাকল না এক ফোঁটাও!

শনিবার আইপিএলের অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠ এম চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে বেঙ্গালুরু। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে তারা তোলে ৫ উইকেটে ২১৮ রানের বড় পুঁজি। এরপর প্লে-অফে জায়গা পেতে প্রতিপক্ষকে ২০০ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলার সমীকরণ ছিল তাদের সামনে। অর্থাৎ ১৮ রানের কমে হারলেও চতুর্থ স্থান নিশ্চিত হতো চেন্নাইয়ের। কিন্তু তারা পুরো ওভার খেলে ৭ উইকেটে ১৯১ রান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

প্লে-অফে যেতে হলে ৭ বলে ২৩ রান যখন দরকার ছিল চেন্নাইয়ের, তখন রবীন্দ্র জাদেজার ছক্কার পর মহেন্দ্র সিং ধোনিও বল সীমানাছাড়া করলে সেই প্রয়োজন নেমে আসে ৫ বলে ১১ রানে। এরপর ইয়াশ দয়ালের স্লোয়ারে ধোনি ক্যাচ দিলে ম্যাচের মোড় ফের ঘুরে যায়। ১৩ বলে ২৫ রানে ধোনি ফেরার পর শার্দুল ঠাকুর দুই বলে বের করতে পারেন মাত্র ১ রান। শেষ দুই বলে ১০ রানের চাহিদাও এরপর জাদেজা মেটাতে পারেনি দয়ালের দুর্দান্ত আরও দুটি স্লোয়ারে। স্নায়ুচাপ জয় করে শেষ পাঁচ ডেলিভারিতে স্রেফ ১ রান দেন ভারতের এই বাঁহাতি পেসার।

২২ বলে তিনটি করে ছক্কা ও চারে ৪২ রান করে অপরাজিত থাকা জাদেজাকে মাঠ ছাড়তে হয় বিধ্বস্ত হয়ে। অবশ্য দুঃস্বপ্নেও যেমন শুরু পাওয়ার কথা হয়তো ভাবত না চেন্নাই, সেরকমই সূচনা হয় তাদের। প্রথম বলেই অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় ফিরে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের নিরীহ এক বলে। তৃতীয় ওভারে ড্যারিল মিচেলও বিদায় নেওয়ার পর আজিঙ্কা রাহানে ও রাচিন রবীন্দ্রর ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় চেন্নাই। শেষমেশ তাদের ৬৫ রানের জুটি ভেঙে যায় রাহানে ২২ বলে ৩৩ রানে আউট হয়ে গেলে।

শিবাম দুবে এরপর তার ১৫ বলে ৭ রানের ইনিংসে পুরোপুরি ভোগান্তিতেই থাকেন। একপাশে রবীন্দ্র ৩১ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তাকে দুর্ভাগ্যজনকভাবেই ফিরে যেতে হয় রানআউট হয়ে। ৩৭ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৬১ রান করে যখন আউট হন তিনি, তখন চেন্নাইয়ের রান ১১৫। আরও ১৪ রান যোগ করতেই তারা দুটি উইকেট হারিয়ে ফেলে পড়ে যায় মহাবিপদে। শেষমেশ ধোনি-জাদেজার জুটি আশ্বাস দিলেও তাদের থেমে যেতে হয় লক্ষ্য থেকে দূরেই।

ম্যাচের সময়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও এদিন সঠিক সময়েই খেলা শুরু হয়। কিন্তু ইনিংসের তিন ওভার শেষ হতে না হতেই চলে আসে বৃষ্টি। আধা ঘণ্টার বিরতি শেষে আবার খেলা শুরু হলে বেঙ্গালুরু দুই ধরনের রূপ দেখতে পায় পিচের। প্রথম তিন ওভারে ৩১ রান এনে ফেলা বিরাট কোহলি-ফ্যাফ ডু প্লেসির জুটিতে হুট করেই কমে যায় রানের গতি। আক্রমণে চেন্নাই স্পিনারদের নিয়ে এলে পিচের সাহায্য তারা পান বেশ। বড় টার্ন আদায় করে নিয়ে বেঙ্গালুরুর ব্যাটারদের পাওয়ার প্লের শেষ তিন ওভারে ১১ রানের বেশি আনতে দেননি।

৪২ রানে পাওয়ার প্লে শেষ করার পর ভালোই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যান দুই ওপেনার। বড় টার্ন মোকাবিলায় কোহলি ব্যাকফুটে থেকে তখন রান বের করার পথ খোঁজেন। ফুল লেংথে পেয়ে স্লগ সুইপে মারেন দুই ছক্কা। ডু প্লেসি বেশ ভোগান্তির মাঝে থাকলেও তিনিও জাদেজার এক ওভারেই তিনটি বাউন্ডারি আনেন অফ সাইড ও সোজা ব্যাটে খেলে। একসময় ৩০ বলে ২৯ রানে থাকা ডু প্লেসি পরে তাই ফিফটি পেয়ে যান ৩৫ বলে। কিন্তু দুর্দান্ত খেলতে থাকা কোহলিকে মিচেল স্যান্টনারের বলে আউট হয়ে ফিরতে হয় ফিফটির আক্ষেপ নিয়ে। ২৯ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৭ রান করেন কোহলি।

৭৮ রানের ওপেনিং জুটি ভেঙে ফেলার পর স্যান্টনার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে তার স্পেল শেষ করেন মাত্র ২৩ রানে। ১৩তম ওভারে দুর্ভাগ্যজনকাবে রানআউট হয়ে ফিরে যান ডু প্লেসি। বোলার স্যান্টনারের হাতে লেগে দিক বদলে বল যখন গিয়ে লাগে স্টাম্পে, তখন ডু প্লেসির ব্যাট ছিল ওপরে। ৩৯ বলে তিনটি করে চার ও ছক্কায় গড়া ৫৪ রানের ইনিংসের সমাপ্তি হয়ে যায় তাতে।

টানা ১০ ওভারের স্পিন আক্রমণের শেষে এরপর চেন্নাই যখনই পেসার নিয়ে আসে, তখনই শুরু হয় তাণ্ডব। রজত পতিদার ২৩ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলে থামেন। ক্যামেরন গ্রিন ১৮ রানের জীবন পেয়ে ১৭ বলে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। মাঝখানে দীনেশ কার্তিক ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এসে ঝড়ে শামিল হন। সিমারজিত সিং, তুষার দেশপান্ডে ও শার্দুল- সবার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। শেষ পাঁচ ওভারেই চেন্নাই ৮০ রান দিয়ে ফেলে। এতে পাওয়া ২১৯ রানের লক্ষ্য পরে আর ছোঁয়া হয়নি তাদের।

১৪ ম্যাচে সাত জয়ে ১৪ পয়েন্ট অর্জন করেছে বেঙ্গালুরু। তাদের নেট রান রেট +০.৪৫৯। সমান ম্যাচে সমান জয়ে সমান পয়েন্ট পেয়েও বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়ের। তাদের নেট রান রেট +০.৩৯২।

Comments