আফিফের ব্যাট দিয়ে মাহমুদউল্লাহর অনুশীলন, বড় রানের ম্যাচের আশায় বাংলাদেশ
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উত্তর-পূর্ব পাশের নেটে পাশাপাশি ব্যাট করছিলেন জাকের আলি অনিক ও আফিফ হোসেন। জাকের বেরিয়ে যেতে প্রবেশ করলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাকে আসতে দেখে ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প ছুটে এসে বললেন, 'রিয়াদ, এই পিচ মন্থর, বাউন্স ঠিক নেই।' মাহমুদউল্লাহর জবাব, 'সমস্যা নেই, এখানেই করি(ব্যাটিং)।'
জাতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফ নাসিরের বল থ্রো খেলতে বেশ বেগ পেলেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। বল ফেরত দিতে দিতে বললেন, 'কীরে, একটা এদিকে যায়, আরেকটা ওদিকে। আমি শতভাগ নিশ্চিত তুই জেনেবুঝে জীবনেও এমন করতে পারতি না।' নাসির বেশ নাজুক হয়ে বলছেন, 'ভাই, বল পড়ে এরকম হয়ে যাচ্ছে।'
মাহমুদউল্লাহ অবশ্য পরে মানিয়ে নিয়েছেন দ্রুত। খানিক পর কয়েক পা সামনে এগিয়ে এসে ড্রাইভ করলেন জোরালো। হেম্প বাহবা দিয়ে দেখালেন হেড পজিশন নিখুঁত থাকায় ড্রাইভটা এত সুন্দর হয়েছে, 'এমনই রাখতে হবে ম্যাচে।'
শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিলো। ২৬ থেকে ২৮ এপ্রিল বিশেষ ক্যাম্পেও খেটেছেন ক্রিকেটাররা, বিশ্রাম তাই প্রয়োজন। এদিন মাঠে এসেছিলে তাই নয় ক্রিকেটার। মাঠে এলেও কেবল সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত, অনুশীলন করেননি অধিনায়ক। অনুশীলন করেছেন দুই পেসার তানজিম হাসান সাকিব ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। দুই স্পিনার তানবীর আহমেদ ও রিশাদ হোসেন। ব্যাটারদের মধ্যে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ, জাকের ও আফিফ। এছাড়া প্রথম তিন ম্যাচের স্কোয়াডের বাইরে থাকা সৌম্য সরকার এসেছিলেন ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে।
মাহমুদউল্লাহ নেটে ব্যাট করেছেন আফিফের ব্যাট দিয়ে। সেই ব্যাট হাতে নিয়েই তিনি আফিফকে বললেন, 'কীরে, হেন্ডেল দেখি ছোট।' আফিফ বলেন, 'ভাই, এই ব্যাটই ছোট। এটা দিয়ে ম্যাচে খেলি না আর।'
আফিফের ওই ছোট ব্যাটেই অবশ্য নিজেকে ঝালিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ। আফিফ তার স্ট্যানফোর্ডের আরেকটি ব্যাটে মেরেছেন বড় বড় শট। তার একটি গিয়ে পড়ে গ্যালারি ছাড়িয়ে স্টেডিয়াম আঙিনার বাইরে। মাহমুদউল্লাহর তালিও পান এই তরুন। বাঁহাতি স্পিনার তানবীরের সঙ্গে খুনসুটি করতে করতে চলে আফিফের অনুশীলন। বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে এই সিরিজের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে আফিফকে, এরকমই বড় বড় শটে।
দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ব্যস্ত ছিলেন ব্যাটিংয়ে। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেলে তার ভূমিকা যে স্রেফ ৪ ওভারের বোলিং নয় সেই বার্তা হয়ত পেয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে। লোয়ার অর্ডার শক্ত রেখে উপরের ব্যাটারদের আরও স্বাধীনতা দিতে চায় বাংলাদেশ দল। রিশাদ হোসেনেরও সেই দায়িত্ব আছে। টপ অর্ডার ব্যাটার কেউ না থাকায় এদিন নিচের দিকের ব্যাটাররাই কোচদের সব মনোযোগ পেয়েছেন।
রিশাদ তার মূল কাজে অবশ্য এদিন তেমন ধারালো ছিলেন না। আলগা বল দিয়ে ব্যাটারদের ঝাঁজের শিকার হয়েছেন। তার বোলিং নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা
স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদকে তাতে বিচলিত হতে দেখা যায়নি।
প্রধান কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক শান্ত স্কিল অনুশীলন থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন। মাঝমাঠে গিয়ে উইকেট দেখার পর দুজনে আলাপ করলেন লম্বা সময় নিয়ে। উইকেট ও একাদশ সেই আলোচনাই যে মুখ্য- তা আঁচ করা যায়। শান্ত অবশ্য পরে সংবাদ সম্মেলনে জানান তাদের আলোচনার পুরোটা জুড়ে উইকেট ছিলো না, তবে উইকেট যে এবারও ব্যাটিং স্বর্গ হবে তা অনেকটা স্পষ্ট তার কথায়, 'উইকেট নিয়ে আমরা অনেক বেশি কথা বলছিলাম না, আমরা অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম। উইকেট নিয়ে যতটুকু কথা বলার বলেছি। কিন্তু চট্টগ্রামে সাধারণত ভালো উইকেট থাকে, অনেক রান হয়। এটা একটা ধারণা, বা আগেও হয়ে আসছে। কিন্তু ওই দিনে কত রান হবে, বা কি ধরণের স্কোর তাড়া করা যাবে বা ডিফেন্ড করা যাবে। এটা ওইদিন খেলা শুরু হলে বোঝা যাবে। আশা করছি যে হাইস্কোরিং ম্যাচই হবে।'
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের প্রথম টি-টোয়েন্টি। সারা দেশে তাপদাহ থাকলেও চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে হয়েছে ঝুম বৃষ্টি, দিনের বাকি সময়ও ছিলো মেঘলা। খেলার সময় বৃষ্টি বাগড়া না দিলে দুই দলের ফুরফুরে মেজাজের রোমাঞ্চকর ম্যাচই দেখা যেতে পারে। জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজার মতে, 'বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের খেলা কখনই বিরক্তিকর হয় না, খুবই রোমাঞ্চকর লড়াই হয়। এবারও তেমন হবে।'
Comments