জাকেরের অবিশ্বাস্য ইনিংসের পরও হারল বাংলাদেশ
জাকেরের অবিশ্বাস্য ইনিংসের পরও হারল বাংলাদেশ
শেষ ওভারে দরকার ছিলো ১২ রান, স্লো ওভাররেটের কারণে একজন ফিল্ডার বেশি উপরে রাখতে হয়েছিলো শ্রীলঙ্কাকে। এমন সমীকরণে দাসুন শানাকার প্রথম বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন রিশাদ হোসেন। পরের বলে ওয়াইড থেকে এক রান। তাসকিন আহমেদ বৈধ দ্বিতীয় বলটাই সিঙ্গেল নিয়ে জাকেরকে স্ট্রাইক দেন। দুর্দান্ত ইনিংস খেলা জাকের বড় শটের চেষ্টায় ক্যাচ দেন লং অফে। ৩৪ বলে ৬৮ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলে থামেন তিনি। শরিফুল ইসলাম ক্রিজে এসেই কাভার দিয়ে মারেন বাউন্ডারি। কিন্তু পরের দুই বলে আর সমীকরন মেলেনি। ৩ রানে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা।
২০৭ রান তাড়ায় ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৭৮। শেষ ১০ ওভারে একদম ব্যাকফুটে থেকে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা।
মাথিশা পাথিরানার ১০ ওয়াইড আর ৩ নো বলে পাওয়া মোমেন্টাম কাজে লাগিয়ে মাহমুদউল্লাহ-জাকের আলি দলকে টেনে নেন। ২৭ বলে ফিফটির পর ৫৪ করে মাহমুদউল্লাহ ফিরলেও জাকের চালিয়ে যান। শেখ মেহেদীকে নিয়ে ৬৫ রানের আরেক জুটি পান তিনি। তবে তার দুর্দান্ত ব্যাটিং শেষে গিয়ে কেবল আক্ষেপই বাড়ালো।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ২০৬ (আভিশকা ৪, কুশল ৫৯, কামিন্দু ১৯, সাদেরা , চারিথা ; শরিফুল ১/৪৭, তাসকিন ১/৪০, শেখ মেহেদী ০/৩০ মোস্তাফিজ ০/৪২, রিশাদ ১/৩২, সৌম্য ০/৮)
বাংলাদশ: ২০ ওভারে ২০৩/৮ (লিটন ০, সৌম্য ১২, শান্ত ২০, হৃদয় ৮, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, জাকের ৬৮, শেখ মেহেদী ১৬, রিশাদ ০, তাসকিন ২*, শরিফুল ৪* ; ম্যাথিউস ২/১৭, বিনুরা ২/৪১, থিকসেনা ১/৩২, শানাকা ২/৩৬, আকিলা ০/১৯, পাথিরানা ১/৫৬)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৩ রানে জয়ী
শেখ মেহেদীর বিদায়
জাকের অলি অনিকের সঙ্গে ২৭ বলে ৬৫ রানের ঝড়ো জুটিতে সঙ্গ দিলে থামলেন শেখ মেহেদী হাসান। বিনোরা ফার্নান্দোর বলে ক্যাচ দিয়ে ১১ বলে ১৬ করে আউট হন তিনি। ১৮০ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জাকেরের প্রথম ফিফটি
একের পর এক ওয়াইডে এলোমেলো বোলিং করা মাথিশা পাথিরানার উপর চেপে বসলেন জাকের আলি অনিক। ছক্কা-চারে ২৫ বলে স্পর্শ করলেন ফিফটি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ফিফটি পেতে ১ চারের সঙ্গে জাকের মারলেন ৬ ছক্কা। তার ব্যাটে আশা জাগল বাংলাদেশের। জিততে শেষ ৩ ওভারে দরকার ৩৭ রান।
ঝড়ো ফিফটির পর মাহমুদউল্লাহর বিদায়
২৭ বলে ফিফটি করে আশা জাগালেও মাহমুদউল্লাহ আর বেশি এগুতে পারলেন না। ৩১ বলে ৫৪ করে মাহেশ থিকসেনার বলে বাউন্ডারি লাইনে ধরা দিলেন তিনি। ১১৫ রানে ৫ উইকেট হারালো বাংলাদেশ। আউট হওয়ার আগে সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন মাহমুদউল্লাহ। ৫ম উইকেটে জাকের আলির সঙ্গে ২৯ বলে ৪৭ তুলে যান অভিজ্ঞ ব্যাটার।
দলের বিপদে মাহমুদউল্লাহর ঝড়ো ফিফটি
ক্রিজে এসে প্রথম বলেই ছক্কা মারলেন মাহমুদউল্লাহ। আরেক পাশে নাজমুল হোসেন শান্ত সেভাবে মেলে ধরতে পারলেন না নিজেকে। মাহমুদউল্লাহ ধরে রাখলেন হাল। ২৮ রানে জীবন পেয়ে সেটা কাজে লাগালেন দারুণভাবে। ২৭ বলে ফিফটি তুলে নিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি তা সপ্তম ফিফটি।
পাথিরানার ১২ বলের ওভারে ২০ নিল বাংলাদেশ
মাথিশা পাথিরানা গতির ঝড় তুলেন ঠিকই কিন্তু ভীষণ এলোমেলো বোলিংও করেন। একের পর এক ওয়াইড, নো বলে ৬টি বাড়তি বল করতে হলো তাকে। সেসব বল কাজে লাগিয়ে দুই ছক্কা মারলেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের আলি। তার ১১তম ওভার থেকে ২০ রান তুলে ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশ।
জীবন পেলেন মাহমুদউল্লাহ
আকিলা ধনঞ্জয়ার বলে স্লগ সুইপের চেষ্টায় গেলেন মাহমুদউল্লাহ। টাইমিং হলো না ঠিকমতো। বাউন্ডারি লাইনে সহজ ক্যাচ ধরতে পারলেন না সাদেরা সামারাবিক্রমা, উল্টো বাউন্ডারি দিয়ে দিলেন তিনি। ২৮ রানে জীবন পেলেন মাহমুদউল্লাহ।
পাথিরানার বলে ধুঁকে বিদায় নিলেন শান্ত
মাথিশা পাথিরানার গতিতে পেরে উঠলেন না নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ অধিনায়ককে একাধিকবার পরাস্ত করলেন লঙ্কান পেসার। পরে পুল করতে গিয়ে পুরো ব্যাটে নিতে পারলেন না। সহজ ক্যাচে ফিরলেন ২২ বলে ২০ রান করে। ৬৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ক্যাচ দিয়ে রিভিউও নষ্ট করে গেলেন হৃদয়
ম্যাথিউসের বলে এগিয়ে এসে খেলতে গেলেন তাওহিদ হৃদয়। পুল খেললেও পরাস্ত হলেন, তার ব্যাটে লেগে বল জমল কিপারের হাতে। আওয়াজ মিলল পরিস্কার। তবু রিভিউ নিয়ে সেটাও নষ্ট করলেন তিনি। ছক্কায় ইনিংস শুরু করা ব্যাটার ফিরলেন ৫ বলে ৮ রান করে। ৩০ রানে ৩ উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
ছক্কার চেষ্টায় সৌম্যের বিদায়
চতুর্থ ওভারে বিনুরা ফার্নান্দোর বলে ছক্কা উড়াতে টাইমিং করতে পারলেন না সৌম্য সরকার। উঁচুতে উঠা বল সহজে এসে জমল মিড অনে থাকা চারিথা আসালাঙ্কার হাতে। ২১ রানে বাংলাদেশ হারালো দ্বিতীয় উইকেট।
শুরুতেই খালি হাতে ফিরলেন লিটন
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ভেতরে ঢোকানো প্রথম বল সরে গিয়ে খেলতে পেলেন না লিটন দাস। পরের বলটি আউটস্যুয়িং করলেন ম্যাথিউস। আলগা শটে লিটন ধরা দিলেন কিপারের হাতে। কোন রান করার আগেই প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার বিশাল পুঁজি
শুরুতে উইকেট হারালেও পরে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালো শ্রীলঙ্কা। কুশল মেন্ডিস-সাদেরা সামারাবিক্রমা মিলে গড়লেন ৬১ বলে ৯৬ রানের জুটি। ঝড়ো ফিফটির পর কুশল মেন্ডিস ফিরলেও ফিফটি করে টিকে রইলেম সাদেয়া। শেষ দিকে ঝড় তুললেন চারিথা আসালাঙ্কা। শেষ ১০ ওভারে ১২৭ রান তুলে দুইশো ছাড়ালো শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ২০৬ (আভিশকা ৪, কুশল ৫৯, কামিন্দু ১৯, সাদেরা , চারিথা ; শরিফুল ১/৪৭, তাসকিন ১/৪০, শেখ মেহেদী ০/৩০ মোস্তাফিজ ০/৪২, রিশাদ ১/৩২, সৌম্য ০/৮)
সামারাবিক্রমার ফিফটি
মোস্তাফিজুর রহমানকে দারুণ কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে ৪৩ বলে ফিফটি করেছেন সাদেরা সামারাবিক্রমা।
ঝড়ো ফিফটি করা কুশলকে ফেরালেন রিশাদ
আগের ওভারেই সৌম্য সরকারের বলে কুশল মেন্ডিসের ক্যাচ ছেড়েছিলেন লিটন দাস। ৫৭ রানে জীবন পেয়ে আর বেশি এগুননি কুশল মেন্ডিস। ৩৬ বলে ৫৯ করে ক্যাচ দেন পরের ওভারেই। রিশাদ হোসেনকে ছক্কায় উড়াতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা দেন লঙ্কান ওপেনার। ১৫তম ওভারে ১৩৩ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এই আউটে সাদেরা সামারাবিক্রমার সঙ্গে ভাঙে তার ৬১ বলে ৯৬ রানের জুটি।
সৌম্যের বলে জীবন পেলেন কুশল
সৌম্য সরকারের বলে আগ্রাসী ব্যাট চালিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ উঠিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস। কঠিন সেই ক্যাচ মুঠোয় ধরতে পারেননি লিটন দাস। অনেকখানি ছুটে গেলেও হাতে জমাতে পারেননি ক্যাচ। ৫৭ রানে জীবন পান কুশল।
কুশল মেন্ডিসের ঝড়ো ফিফটি
কামিন্দু মেন্ডিসের বিদায়ের পর সাদেরা সামারাবিক্রমার সঙ্গে জুটি বেধে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন কুশল মেন্ডিস। রিশাদ হোসেনকে ছক্কায় উড়িয়ে ২৮ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। জুটিও ছাড়িয়েছে ফিফটি।
শরিফুলের পর উইকেট নিলেন তাসকিন
প্রথম ওভারে উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে বেশ ভালোই এগুচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে দলকে টানছিলেন কামিন্দু মেন্ডিস। পঞ্চম ওভারে বাঁহাতি ব্যাটারকে থামিয়েছেন তাসকিন। তাসকিনের বলে পুল করে মিড অনে ধরা দেন কামিন্দু। ১৪ বলে ১৯ রান করেন তিনি। ৩৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
রিভিউ হারালো বাংলাদেশ
কুশল মেন্ডিসকে পরাস্ত করে জোরালো আবেদন করেছিলেন শরিফুল ইসলাম। এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু দেখা যায় বল পিচড হয়েছে লেগ স্টাম্পের বাইরে। নষ্ট হয়ে যায় রিভিউ।
দ্বিতীয় বলেই উইকেট নিলেন শরিফুল
শরিফুল ইসলামের ইনিংসের প্রথম বলটা পড়েছিল অফ স্টাম্পের বাইরে, ড্রাইভ করতে গিয়ে আউটসাইড এজড হয় আভিশকা ফার্নান্দোর। তবু চার পেয়ে যান তিনি। পরের বলে একই চেষ্টায় গিয়ে ধরা দেন লিটন কুমার দাসের গ্লাভসে। ৪ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে জাকের
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ সময়ে দলে যুক্ত হওয়া ব্যাটার জাকের আলি অনিক একাদশেও জায়গা পেয়ছেন।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সময় রান তাড়া কন্ডিশন বিচারে সহজ হবে বলে জানিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
বিপিএলে আলো কেড়ে আলিস আল ইসলামের চোটে দলে আসা জাকের আলির এটি চতুর্থ টি-টোয়েন্টি। গত বছর অক্টোবরে হুয়াংজুতে এশিয়ান গেমসের ম্যাচে মালোয়েশিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির অভিষেক হয় তার। ওই আসরে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষেও খেলেছিলেন তিনি। এশিয়ান গেমসে প্রতিটি দলই পাঠায় দ্বিতীয় সারির দল। এশিয়ান গেমসের প্রতিটি ম্যাচকে আইসিসি টি-টোয়েন্টিও স্বীকৃতি দেওয়ায় জাকেরের অভিষেক আগেই হয়েছে। তবে কার্যত সিনিয়র দলের হয়ে এই প্রথম মাঠে নামবেন তিনি।
বাংলাদেশ একাদশে রেখেছে বিশেষজ্ঞ তিন পেসার ও দুই স্পিনার। তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী শরিফুল আছেন। শেখ মেহেদীর অফ স্পিনের সঙ্গে আছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। শান্তর সঙ্গে ইনিংস ওপেন করেন লিটন দাস। আরও দুই টপ অর্ডার ব্যাটার তাওহিদ হৃদয় ও সৌম্য সরকার। দলে ফিরে একাদশেও আছেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ।
নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রথম দুই ম্যাচে নিয়মিত অধিনায়ক ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে পাচ্ছে না শ্রীলঙ্কা। তার বদলে নেতৃত্বে আছেন চারিথা আসালাঙ্কা। পাথুম নিশানকার জায়গায় দলে ফিরে একাদশেও আছেন আভিশকা ফার্নান্দো। শ্রীলঙ্কা দুই বিশেষজ্ঞ পেসারের সঙ্গে দুজন পেস অলরাউন্ডার রেখেছে একাদশে। আছেন তিন স্পিনারও।
বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), লিটন দাস, সৌম্য সরকার, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলি, শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম।
শ্রীলঙ্কা একাদশ: আভিশকা ফার্নান্দো, কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, সাদেরা সামারাবিক্রমা, চারিথা আসালাঙ্কা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস,দাসুন শানাকা, মাহেশ থিকসেনা, আকিলা ধনঞ্জয়া, বিনুরা ফার্নেন্দো, মাথিশা পাথিরা।
Comments