বিপিএলে সফলতার পেছনে ডট দেওয়া-নেওয়া

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

টি-টোয়েন্টিতে সফল হওয়ার অন্যতম চাবিকাঠি কী? হিসাব তো একেবারেই সহজ— নিজেরা ব্যাটিংয়ের সময় ডট দাও কম করে, অন্যদের ব্যাটিংয়ের সময় যত পারো বেশি ডট আদায় করে নাও।

সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলে চোখ ফিরিয়েই আসলে এত সোজাসাপ্টা করে বলে ফেলা গেল। বিপিএলের দশম আসরে যে দেখা গেছে ঠিক এটাই। দলগুলোর সফলতা-ব্যর্থতার পেছনে এই মন্ত্র কাজে লাগাতে পারা-না পারার দারুণ ভূমিকা ছিল।

চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের দিকেই প্রথমে তাকানো যাক। ব্যাটিংয়ে যে দুটি দলের ডট দেওয়ার হার সবচেয়ে কম, তাদেরই একটি বরিশাল। সবচেয়ে কম ডটের হার ছিল অবশ্য রংপুর রাইডার্সের। সাকিব আল হাসানরা মাত্র ৩৭.৯৭ শতাংশ ডেলিভারিতে কোনো রান আনতে পারেননি। এই তালিকায় ৩৯.২০ শতাংশ ডট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে বরিশাল। রানার্সআপ হওয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স রয়েছে বরিশালের গা ঘেঁষেই। কুমিল্লার ব্যাটাররা শতকরা ৩৯.৭৫ ভাগ বল ডট দেন। এই তিনটি দলই ব্যাটিংয়ে ডটের পরিমাণ চল্লিশ শতাংশের নিচে রাখতে পেরেছে।

বল হাতেও তারাই ছিল এগিয়ে। লিগ পর্বে শীর্ষে থাকা রংপুরের বোলাররা এখানে বাজিমাত করেন দুর্দান্তভাবে। মোট ডেলিভারির ৪৪.৫৩ শতাংশই তারা ডট দেন। এই তালিকার পরের দুটি অবস্থান দুই ফাইনালিস্টের। কুমিল্লা প্রতিপক্ষকে শতকরা ৪৩.১৪ ভাগ বলে কোনো রান আনতে দেয়নি। বরিশালও ৪২.৯৩ শতাংশ ডট বল করতে সক্ষম হয়।

অর্থাৎ ব্যাটিংয়ে কম ডট দেওয়া ও বোলিংয়ে বেশি ডট নেওয়ার ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা সবচেয়ে ভালো দেখিয়েছে এই তিন দল। বিপিএলের শেষদিকে তাদেরকেই শিরোপার দাবিদার হিসেবে এগিয়ে রাখা হয়েছিল। আর এই তিন দলই টুর্নামেন্ট শেষ করেছে সবচেয়ে সফল তিন হয়ে। বরিশাল, কুমিল্লা, রংপুর— এই তিন দলই ২০২৪ বিপিএলে জিতেছে সবচেয়ে বেশি নয়টি করে ম্যাচ।

রংপুর ডটের হিসাবে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকলেও ফাইনালে যেতে পারেনি। আসলে প্লে-অফে যাওয়ার পর শেষ ফলাফল কী হবে তা নির্ভর করে এক-দুই ম্যাচের পারফরম্যান্সের ওপর। রংপুরের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে, তীরে গিয়ে খেই হারায় তারা। তবে নিঃসন্দেহে দারুণ একটি টুর্নামেন্ট কাটায় দলটি।

বরিশালের ক্ষেত্রে একটা লক্ষণীয় বিষয় হলো, একমাত্র তামিম ইকবালের দলই টুর্নামেন্টে ১৭০০-এর বেশি ডেলিভারি ব্যাটিং ও বোলিং করেছে। তাদের ম্যাচের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ১৫টি হওয়ায় যা স্বাভাবিক। তবে বেশি ম্যাচ, বেশি বল সত্ত্বেও ডটের হারের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা তাদের সফলতার পেছনে অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রানের চেয়ে রান তোলার গতিই যেখানে বেশিরভাগ সময় গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে একেকটা ডটের প্রভাব থাকে অনেক। ভারতের ব্যাটার শ্রেয়াস আইয়ার একবার বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টিতে ডট বল খেলা অপরাধের পর্যায়েই পড়ে। পিচের চ্যালেঞ্জ আর সামর্থ্যের ঘাটতি— দুইয়ে মিলে বিপিএলে সেই অপরাধ করতে দেখা যায় অনেক ব্যাটারকে। এর প্রভাব পড়ে দলীয় পারফরম্যান্সে। টুর্নামেন্টে যেসব দল এবার ব্যর্থ হয়েছে, তারা ডট দেওয়া-নেওয়ার হিসাবে পিছিয়ে ছিল বেশ।

প্রথম পর্বের পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচে থাকা দুর্দান্ত ঢাকা যেমন সবচেয়ে বেশি ডট দেয় ব্যাটিংয়ের সময়। ৪৫.২৯ শতাংশ বলে ঢাকার ব্যাটাররা স্কোরবোর্ডে রান যোগ করতে পারেননি। খুলনা টাইগার্স আর সিলেট স্ট্রাইকার্সও আছে কাছাকাছিই। ব্যাটিংয়ে খুলনা ও সিলেটের ডটের হার ছিল যথাক্রমে ৪৩.৯৮ ও ৪৩.০২ শতাংশ।

ষষ্ঠ স্থানে থেকে বিপিএল শেষ করা সিলেট বোলিংয়ে ডট দেওয়ার বেলায় সবার শেষেই ছিল। প্রতিপক্ষকে মাত্র ৩৮.৪৯ শতাংশ বলে ডট দিতে পারেন তাদের বোলাররা। ঢাকা ও খুলনা এক্ষেত্রে সিলেটের চেয়ে এগিয়ে ছিল সামান্য, যথাক্রমে ৪০.২১ ও ৪০.৫০ শতাংশ ডটের হার নিয়ে।

শুরুর তিন দল আর শেষের তিন দলের মাঝে ছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। মজার ব্যাপার হলো মধ্যখানে থাকা চটগ্রাম ব্যাট হাতে ডটের হিসাবেও অবস্থান করছে ঠিক মাঝামাঝি। ৪২.১৩ শতাংশ বলে শুভাগত হোমের দল ডট দিয়েছে। বোলিংয়ে যদিও তার দলের বোলাররা তুলনামূলক কম ডটই এনে দিয়েছেন, দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৩৯.১৩ শতাংশ।

কোনো খেলায় সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর। তবে একটি বিবেচনায় দেখলে, ডটের শতকরা হারও কি জানিয়ে দিচ্ছে না যথেষ্ট কিছু? ডট যারা নিজেদের ব্যাটিংয়ে কম রেখেছে, অন্যদের ব্যাটিংয়ের সময় দিয়েছে বেশি, তারাই দশম বিপিএলে দেখতে পেয়েছে সফলতার মুখ।

(রিফাত বিন জামাল, অতিথি লেখক)

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

13h ago