মিরপুরের গ্যালারির সিঁড়িগুলো সাইফুদ্দিনের ‘কষ্টের সাক্ষী’
বিপুল সম্ভাবনা নিয়েই ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। অভিষেকের পর দলের ভরসা হয়ে উঠতেও সময় নেননি তিনি। তবে চোট আর ছন্দহীনতা তার ক্যারিয়ারের গতিপথ করে দেয় এলোমেলো। ২০২২ সালের অক্টোবরের পর আর ডাক পাননি। এবার বিপিএল খেলা নিয়েও শঙ্কায় ছিলেন ডানহাতি পেসার।
প্রথম ৬ ম্যাচ পর ফরচুন বরিশাল খেলতে নামায় তাকে। টানা ৯ ম্যাচ খেলে তামিম ইকবালদের শিরোপা জেতায় বিশাল ভূমিকা রাখেন সাইফুদ্দিন। ৯ ম্যাচেই নেন ১৫ উইকেট। ফাইনালেও শেষ ওভারে দারুণ বল করে ম্যাচের মোড় ঘোরাতে রাখেন ভূমিকা। ফাইনাল শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কষ্টের দিনগুলোর কথা স্মরণ করেছেন ২৭ পেরুনো সাইফুদ্দিন।
৯ ম্যাচ খেলেi ১৫ উইকেট নিলেন। পুরো টুর্নামেন্ট খেললে সর্বোচ্চ উইকেট নিতে পারতেন। আক্ষেপ আছে?
সাইফউদ্দিন: নাহ… আলহামদুলিল্লাহ, যা হয়েছে সব মিলিয়ে খুশি। সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যারা আমার ভক্ত-সমর্থক আছেন, যারা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন, সমর্থন করেছেন, আমার জন্য দোয়া করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের দোয়ার কারণেই হয়তো প্রত্যাবর্তন করতে পেরেছি৷
চোট কাটিয়ে দীর্ঘ দিন পর ফিরলেন প্রস্তুতিটা কিভাবে নিয়েছিলেন?
সাইফউদ্দিন: আমি সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছি। আপনারা হয়তো দেখেছেন, মিরপুরের গ্যালারির সিঁড়িগুলোতে অনেক স্ট্রেংথ ট্রেনিং করেছি ইফতি ভাইয়ের (ট্রেনার ইফতেখার ইসলাম) সঙ্গে।
ইফতি ভাই সবসময় উজ্জীবিত করতেন, 'যখন ভালো কিছু করবি, উদযাপন করবি, তখন এই সিঁড়িগুলো সাক্ষী থাকবে।' আজকে খেলা শেষে যখন উদযাপন করছিলাম, দর্শকদের অ্যাপ্রিশিয়েট করছিলাম, প্রতিটি সিঁড়ির কথাই আমার মনে পড়ছিল, ওই দিনগুলোর কথা।
ফিরে আসতে আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে কে?
সাইফউদ্দিন: সবাই…আমার পরিবার, নতুন বউ। ক্রিকেটের প্রতি তার তেমন আগ্রহ নেই। আজকেও অনেক অনুরোধ করেছিলাম মাঠে আসতে, তারপরও আসেনি। তবু আমার মনে হয় টিভি সেটের সামনে বসে খেলা দেখেছে। সত্যি বলতে,আমার মাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। মা সবসময় আমার পাশে ছিল এবং খারাপ সময়ে সাহস দিয়েছে। আমাকে সবসময় উজ্জীবিত করেছে।
অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবাল কতটা উজ্জীবিত করেছেন আপনাকে
সাইফউদ্দিন: অসাধারণ! অসাধারণ…! রাসেল আগের ওভারে যখন ৩টি ছক্কা মেরেছিল, তখন তিনি (তামিম) আমার বুকে সাহস দিয়ে বলছিলেন, 'তুই এটা করতে পারবি।' কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে যখন (২০১৯ সালে) খেলেছিলাম, আমাকে একইভাবে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছিলেন। যে কারণে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে, রাসেল আমাকে একটা বাউন্ডারিও মারতে পারবে না।
সত্যি বলতে শুধু অধিনায়ক বা বড় ভাই নয়, তিনি আবার খুব কাছের একজন। আমার পরিবারের সদস্যের মতোই। তিনি আমাকে উজ্জীবিত না করলে আজকে হয়তোবা এমন করতে পারতাম না।
যখন দলে সুযোগ পেলেন, তামিম কীভাবে স্বাগত জানান আপনাকে?
সাইফউদ্দিন: তামিম ভাই আমাকে বলেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন হলে দুইটা ব্যাট দেবেন। এজন্য আমি বেশি খুশি। অনেকের হয়তো টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, জমির নেশা থাকে। আমার এসব নেশা নেই। আমার শুধু ব্যাটের নেশা, ব্যাটিং পারি আর না পারি (হাসি)।
আপনাদের উদযাপন নিয়ে আর কি পরিকল্পনা আছে।
সাইফউদ্দিন: এটা পুরোপুরি টিম ম্যানেজমেন্ট বলতে পারবে। সামনে রোজা আসছে। শুনেছি তামিম ভাই ছুটিতে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তামিম ভাই না থাকলে তো উদযাপনটা করা হবে না। হয়তো ঈদের পরে... ড্রেসিং রুমে অসাধারণ আবহ। কারণ বরিশাল এর আগে দুইবার খুব কাছে গিয়ে ফাইনাল হেরেছে। স্বাভাবিক এটা অন্যরকম উদযাপন হবে। আমরা উদযাপনের একটা অংশ শেষ করলাম। হোটেলে গেলে আরেকটা হবে। সব মিলিয়ে সময়টা উপভোগ করতে চাই।
বিপিএলে আপনি ভালো করার আগেই জাতীয় দল ঘোষণা হয়ে গেছে, আক্ষেপ আছে কি একটু?
সাইফউদ্দিন: না, না…অবশ্যই আক্ষেপ নেই কোনো। আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। বিসিবি আমার জন্য যেটা ভালো মনে করেছে। আমি টানা 'হাই ইনটেনসিটি' ম্যাচ খেলেছি। অবশ্যই আমার বিশ্রাম প্রয়োজন। যেহেতু অনেক দিন পর 'হাই ইনটেনসিটি' ম্যাচ খেলেছি, তাই একটা 'সোরনেস' থাকে পুরো শরীরে। পুরোপুরি ফিট হয়ে, বোলিং ওয়ার্কলোডের জন্য প্রস্তুত হয়ে জাতীয় দলে ফেরাটাই আমার জন্য ভালো হবে।
কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে দেখা হয়েছে বা কথা হয়েছে?
সাইফউদ্দিন: না (হাসি)। প্রথম যখন এসেছিলাম, তাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কি ব্যাপার? তোমাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলাম, সিন করলে না।' তিনি বললেন যে, 'আমি আসলে দেখিনি।' আমি আবার জিজ্ঞেস করি আমাকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। তখন তিনি বলেস, 'তুমি তো চোটে আক্রান্ত। কী পরিকল্পনা করব! পরে যখন ফিট হবে, তখন দেখা যাবে।'
এখন কি আবার মেসেজ দেবেন?
সাইফউদ্দিন: দেখি! মুডের ওপর নির্ভর করে (হাসি)।
অনেক চাপের ম্যাচ খেলার পর এখন বিশ্রাম। এই বিশ্রামটা কি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ?
সাইফউদ্দিন: বিশ্রামের তো আসলে সুযোগ নেই। সামনে প্রিমিয়ার লিগ শুরু হচ্ছে। এক সপ্তাহ সময় পাব হয়তো। আবার রমজান আসছে। সব মিলিয়ে আরও বেশি প্রস্তুত হতে হবে। ফিটনেসের ওপর আরও মনোযোগ দিতে হবে। যেহেতু টানা খেলার মধ্যে আছি, ধকল যাচ্ছে শরীরের ওপর। বয়সও যেহেতু বাড়ছে এখন, ২৬-২৭ পার হয়ে গেছে… তাই এখন ফিটনেস নিয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
Comments