বরিশালকে আমূল বদলে দিয়েছেন কাইল মেয়ার্স

Kyle Mayers
বিপিএলে ব্যাটে-বলে প্রভাব বিস্তার করছেন কাইল মেয়ার্স। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

কোমরের উঁচুতে আসা অফ স্টাম্পের বাইরের বল। কাইল মেয়ার্স পেছনের পায়ে ভর করে পাঞ্চ করে গ্যালারিতে উড়িয়ে দিলেন বল, যেন মনে হলো স্রেফ শ্যাডো করছেন ব্যাট। এত অনায়াসে এমন শট খেলতে দেখে কিছুটা অবিশ্বাস্যের চোখে চেয়ে থাকতে হলো বোলারকেও। এরকম শটের পসরা নিয়মিত দেখা যাচ্ছে তার ব্যাটে।  এ তো গেল ব্যাটিং। নতুন বলে ইনিংসের শুরুতে মেয়ার্সের স্যুইং কীভাবে সামাল দিবেন তা ভাবতে ভাবতেই তালগোল পাকানো তো চলছেই।

নতুন বলে দুই দিকেই স্যুয়িং করাতে পারেন মেয়ার্স। রিষ্ট পজিশনের কারণে সেটা যেকোনো উইকেটেই সমান কার্যকর।  এবার বিপিএলে ফরচুন বরিশালের নিঃসন্দেহে সেরা বিদেশি রিক্রুট বলা যায় মেয়ার্সকে। তিনি যোগ দেওয়ার পর থেকেই বরিশাল একাদশে পাচ্ছে দারুণ সমন্বয়। একাদশে অসাধারণ ভারসাম্য এনে ব্যাটিং ও বোলিং দুই ভূমিকাতেই তার প্রভাব প্রবল।

টি-টোয়েন্টিতে প্রভাব বিস্তারি পারফরমান্স কাকে বলে সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে মেয়ার্সের খেলা দেখলেই চলবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই অলরাউন্ডার অনেক পরে বিপিএলে যোগ দিয়ে ৫ ম্যাচ খেলেই করে ফেলেছেন প্রায় দুইশো রান (১৯৭)। গড় ৩৯.৪, স্ট্রাইকরেট ১৫৮.৮৭! বোলিংয়ে ৮ উইকেট নিয়েছেন মাত্র ১৩.৭৫ গড়ে, ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন স্রেফ ৫.৭৮ করে। মেয়ার্স যদি ১৪ ম্যাচ খেলতেন তাহলে টুর্নামেন্ট সেরার লড়াইয়ে ধারেকাছেও হয়ত কেউ থাকতে পারতেন না।

মেয়ার্সের উত্থান পর্বেও মিশে আছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে সেরা কয়েকজন তারকা ছাড়া বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই দলের হয়ে অভিষেক হয় মেয়ার্সের। অভিষেক টেস্টেই ২১০ রানের ইনিংস খেলে ৩৯৫ রান তাড়া করে তাক লাগিয়ে দেন দুনিয়াকে। তখনই আভাস মিলেছিল বাঁহাতি ব্যাটার ও ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার বড় তারকাই হতে চলেছেন।

Kyle Mayers
কাইল মেয়ার্স। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

পরের কয়েকমাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলো ছড়ানোর পর আইপিএলেও ডাক পড়ে। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টের হয়ে গেল আইপিএলে শুরুতে কুইন্টেক ডি ককের অনুপস্থিতিতে একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন। পরে এমন পারফর্ম করা শুরু করেন যে ফেরার পর ডি ককেও বেঞ্চ গরম করতে হয়েছে।

অন্য সব ক্যারিবিয়ান ব্যাটারদের মতন গায়ের জোরে এগিয়ে মেয়ার্স। ব্যাটে-বলে ঠিকমতো সংযোগ হলে বিশাল ছক্কা নিশ্চিত, মিসটাইমিংয়েও বাউন্ডারি পেয়ে যান। তবে মেয়ার্সের খেলার ধরণও দারুণ মোহনীয়। দৃষ্টিনন্দন কাভার ড্রাইভ, ব্যাকফুট পাঞ্চ, ফ্লিকে, এক পা তুলে পুলে মুগ্ধ করেন তিনি। ব্যাটটা পেছনের দিকে টেনে এনে যখন বলে আঘাত করেন তখন তার শরীরের ছন্দও তৈরি করে নান্দনিক দৃশ্য- একদম ক্যালিপসো ঘরানা।

তাকে একাদশে রাখার বাড়তি সুবিধা হলো তাকে নিয়ে বাড়তি একজন ব্যাটার বা বোলার খেলানো যায়। প্রতি ম্যাচেই অন্তত তিন ওভার তার কাছ থেকে পাওয়া যায়। পাওয়ার প্লের ভেতর এই ওভারগুলো হয়ে উঠে ভাইটাল।

পাওয়ার প্লের ভেতর তিনি রান আটকে দেন, চাপ ফেলে তুলেন উইকেটও। কাটার, ওবল সিমের বৈচিত্র্যে ব্যাটারদের দ্বিধাগ্রস্থ করে রাখেন।

রংপুর রাইডার্স দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে মেয়ার্সকে ঠেকাতে ব্যাটারদের নতুন কৌশল নিয়েছিল। খেলার শুরুতে দেখা যায় দুই ওপেনার কয়েক স্টেপ এগিয়ে স্যুইংয়ের প্রভাব কমিয়ে খেলার চেষ্টা করছেন। এমন করতে গিয়ে অবশ্য তারা সফল হতে পারেননি।

বিপিএলের ফাইনালেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বড় চিন্তার কারণ হতে পারেন মেয়ার্স। ওপেনিং স্পেলে তার দুই কিংবা তিন ওভার বোলিং নিয়ে ভাবতে হবে কুমিল্লার টপ অর্ডারকে। কুমিল্লার বোলারদের প্রবল চিন্তা আছে মেয়ার্সের ঝড় থামানোর। কারণ উইকেটের মন্থরতাও তাকে থামাতে পারছে না। অন্যরা যেখানে ভুগেন সেখানেও ঠিকই দেড়শো স্ট্রাইকরেটে রান বের করার পথ খুঁজে নিতে পারেন তিনি।

মেয়ার্সের প্রভাব কতটা পড়েছে বরিশালে, পরিসংখ্যানই প্রমাণ। মেয়ার্স যোগ দেওয়ার পর পাঁচ ম্যাচের চারটাতেই জিতেছে বরিশাল। এরমধ্যে ছিলো প্লেফ নিশ্চিত করার ম্যাচ, দুইটা প্লে অফের ম্যাচে। অথচ লিগ পর্বে এর আগে নয় ম্যাচে তারা জিতেছিল পাঁচটা। ফাইনালেও বরিশালের সবচেয়ে বড় ট্র্যাম্পকার্ড হতে পারেন বার্বাডোজের অলরাউন্ডার।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

9h ago