নিউজিল্যান্ডের ‘প্রথম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার’ বাংলাদেশের নতুন বোলিং কোচ
নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া প্রথম ক্রিকেটারের নাম কী, বলতে পারেন? বলবেন, নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি যারা খেলেছেন, তাদের সকলেরই তো একই ম্যাচে অভিষেক হয়েছে। তা ঠিক, তবে ক্যাপ নাম্বার ১ পেয়েছেন যিনি, তাকেই তো বলা যায় সর্বপ্রথম অভিষিক্ত। কিউইদের সেই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ক্যাপ নাম্বার ওয়ান উঠেছিল যার মাথায়, তার নাম আন্দ্রে অ্যাডামস। হ্যাঁ, সদ্য নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশের বোলিং কোচ অ্যাডামস। ডানহাতি এই পেসার এক অর্থে দাবি করতেই পারেন, তিনি নিউজিল্যান্ডের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়।
দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়া অ্যাডামস শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকেই যোগ দিবেন বাংলাদেশ দলে। বাংলাদেশে যদিও প্রথম আসা হবে না তার। খেলোয়াড়ি জীবনে যে আসা হয়েছে তার বঙ্গদেশে। সেটি একেবারে প্রথম বিপিএলের সময়। ২০১২ সালের সেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে অবশ্য ৩ ম্যাচের বেশি খেলেননি। বাংলাদেশে যখন আবার ফিরবেন, মাঠে খেলার কথা চিন্তা করলে ওই ৩ ম্যাচের অভিজ্ঞতটা তাকে সুখস্মৃতি দিবে বলে মনে হচ্ছে না। তিন ম্যাচ মাঠে নেমে যে একটি উইকেট নিয়েও তিনি মাঠ ছাড়তে পারেননি। সবমিলিয়ে আট ওভার বোলিং করে ৭০ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য৷ সেই সময় যার নেতৃত্বে খেলেছিলেন, তার একজনকে কিন্তু এখন কোচ অ্যাডামস পাবেন বাংলাদেশ দলে। খেলেছিলেন খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হয়ে। যে দলের অধিনায়ক কে ছিলেন জানেন? সাকিব আল হাসান।
নতুন চাকরিতে তাই একেবারে অপরিচিতদের ভিড়ে থাকতে হবে না অ্যাডামসকে। সাকিবের সঙ্গে আরও একজনকেও তো তিনি পাবেন, যার সাথে তার পরিচয় বহুদিনের। তিনি চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া দল নিউ সাউথ ওয়েলসে প্রায় দীর্ঘ পাঁচ বছর বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন অ্যাডামস। সেখানে হাথুরুসিংহেকে কয়েক বছর তিনি পেয়েছেন সহকর্মী হিসেবে। বাংলাদেশের হয়ে আগের মেয়াদে ২০১৭ সালে দায়িত্ব ছাড়ার পর শ্রীলঙ্কার কোচ হয়েছিলেন হাথুরু। এরপর লঙ্কানদের দায়িত্ব ২০১৯ সালে ছেড়ে দেওয়ার পর যোগ দিয়েছিলেন আবার নিউ সাউথ ওয়েলসে। আবার বাংলাদশে ২০২৩ সালে ফেরার আগ পর্যন্ত সহকারী কোচ ও ব্যাটিং কোচ হিসেবে সেখানেই ছিলেন হাথুরুসিংহে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিউ সাউথ ওয়েলসে কাজ করা অ্যাডামসের সঙ্গে তাই বোঝাপড়া ভালোই থাকার কথা হাথুরুসিংহের। এবার তাদের সেই বোঝাপড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটেও যথেষ্ট কাজে আসবে, সেই আশায় থাকবে বাংলাদেশ।
আগের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের অধীনে বাংলাদেশের পেস বোলারদের উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখান থেকে পেসারদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই হবে অ্যাডামসের কাজ ও বড় চ্যালঞ্জ। কোচিংয়ে অত হাই-প্রোফাইল নাম না হলেও বিগত সময়ে বড় দায়িত্বে কাজ করা শুরু হয়েছিল তার। ২০২৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি সিরিজের সময় কিউইদের পেস বোলিং কোচের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং কোচ হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে এই ডানহাতি পেসারের। বিগ ব্যাশের দল সিডনি সিক্সার্সেরও কোচিং স্টাফে একই ভূমিকায় ছিলেন তিনি চার বছরের বেশি সময়।
নিজের কোচিং অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগিয়ে দলের সাফল্যে অবদান রাখবেন, সেই আশা নিয়ে আসবেন তিনি বাংলাদেশে। তবে সমালোচনার আয়নায় যখনই তার চেহারা ভেসে উঠবে, নিশ্চিতভাবেই তার ক্যারিয়ার রেকর্ডে আলো ফেলা হবে। বাংলাদেশে যেমনটা হয়। অ্যাডামসের ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা সমৃদ্ধ বলা যায় না। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন সবমিলিয়ে ৪৭টি। এক টেস্টে ৬ উইকেট পেয়েও আর খেলা হয়নি সাদা পোষাকে। ৪২ ওয়ানডেতে ৫৩ উইকেট নিয়েছেন ৩১ গড়ে। ৪টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে তাতে ৩৫ গড়ে তার ভাগ্যে জুটেনি ৩টির বেশি উইকেট।
ডানহাতি এই পেসারের ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ার যদিও অনেক লম্বা সময়েরই। ১৯৯৭/৯৮ মৌসুম থেকে শুরু হওয়া প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৭৩ ম্যাচ। যেখানে উইকেট তুলে নিয়েছেন ৬৯২টি, সেটিও ২৩.৯৫ গড়ে। লিস্ট-এ ম্যাচও খেলেননি ১৬৫টির কম, ২৮.৫০ গড়ে তার শিকার এতে ২০৯ উইকেট। আর টি-টোয়েন্টিতে ৭১ ম্যাচে তার শিকার ২২ গড়ে ৮৭ উইকেট। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে হয়তো খুব বেশি মনে রাখার মতো কিছু করতে পারেননি, বিশাল কোন কীর্তিরও মালিক হতে পারেননি। তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচে নেমে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন ঠিকই। একই সাথে বলতে পারবেন, নিউজিল্যান্ডে সবার আগে কুড়ি ওভারের এখনকার রমরমা খেলায় অভিষেক হয়েছে তারই।
রিফাত বিন জামাল/অতিথি লেখক
Comments