বুমরাহর তোপে দিশেহারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চালকের আসনে ভারত

সব মিলিয়ে ১৭১ রানের লিড নিয়ে বিশাখাপত্তনম টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবে ভারত।
ছবি: আইসিসি এক্স

ওভারপ্রতি গড়ে সাড়ে চারের বেশি রান তুলল ইংল্যান্ড। কিন্তু তাদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং কৌশল বা বাজবলকেও পড়তে হলো পেসার জাসপ্রিত বুমরাহর পাল্টা আক্রমণের মুখে। তাতে দিশেহারা হয়ে কোনোমতে আড়াইশ পেরিয়ে গুটিয়ে গেল সফরকারীরা। প্রথম ইনিংসে পাওয়া বড় লিডটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে চালকের আসনে রয়েছে ভারত।

বিশাখাপত্তনম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে পড়েছে মোট ১৪ উইকেট। আগের দিনের ৬ উইকেটে ৩৩৬ রান নিয়ে খেলতে নামা ভারতের প্রথম ইনিংসের বাকি থাকা ৪ উইকেট ও ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের ১০ উইকেটের সবকটি। ভারত ৩৯৬ রানে থামার পর ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে ২৫৩ রানে। এতে ১৪৩ রানের লিড মেলে স্বাগতিকদের। এদিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো বিপদ ঘটতে না দিয়ে তারা তুলেছে ২৮ রান। সব মিলিয়ে ১৭১ রানের লিড নিয়ে তাই তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবে দলটি।

৪৫ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট শিকার করেন বুমরাহ। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার দশম ফাইফার। তার গতি ও কাটারের সংমিশ্রণের কোনো জবাব ছিল ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের কাছে। প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পথে ১৫০ উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন তিনি। ৩৪ টেস্ট খেলা বুমরাহই এই তালিকায় ভারতের দ্রুততম পেসার।

শেষ বিকালে ৫ ওভারে ব্যাট করে ভারতীয়রা। প্রথম ইনিংসের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান যশস্বী জয়সওয়াল ১৭ বলে ১৫ ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা ১৩ বলে ১৩ রানে অপরাজিত আছেন। উভয়েই তিনটি করে চার মেরেছেন। ইংলিশরা ব্যবহার করে তিন বোলার। তবে জেমস অ্যান্ডারসন, শোয়েব বশির ও রেহান আহমেদের কেউই সফলতার খোঁজ পাননি।

এর আগে দিনের প্রথম সেশনেই ভারতের প্রথম ইনিংসের ইতি ঘটে। তারা স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারে আর ৬০ রান। মূল আকর্ষণটা ছিল জয়সওয়ালের ডাবল সেঞ্চুরি হবে কিনা তা নিয়ে। আগের দিন রাজকীয় ব্যাটিং উপহার দেওয়া তরুণ বাঁহাতি ওপেনারের দাপট অব্যাহত থাকে। অভিষিক্ত ইংলিশ অফ স্পিনার বশিরকে টানা ছক্কা ও চার মেরে ২৭৭ বলে ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেন তিনি।

আগের দিনের ২৫৭ বলে ১৭৯ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন জয়সওয়াল। এরপর মাইলফলকে পৌঁছাতে বেশি সময় নেননি তিনি। কোনো প্রকার স্নায়ুচাপকে পাত্তা না দিয়ে তিনি চড়াও হন প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর। ডাবল সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি জয়সওয়াল। ২৯০ বল মোকাবিলায় তিনি করেন ২০৯ রান। তার ব্যাট থেকে আসে ১৯ চার ও ৭ ছক্কা। অষ্টম ব্যাটার হিসেবে জয়সওয়াল সাজঘরে ফেরেন জেমস অ্যান্ডারসনের শিকার হয়ে। ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ পেসারকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় জনি বেয়ারস্টোর তালুবন্দি হন তিনি।

ছবি: আইসিসি এক্স

তাক লাগানো ইনিংসে রেকর্ড বইতেও জায়গা পেয়েছেন জয়সওয়াল। ভারতের টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরিয়ান জয়সওয়াল। ২২ বছর ৩৬ দিন বয়সে এই টেস্ট শুরু করেছেন তিনি। তার চেয়ে কম বয়সে দ্বিশতকের ছোঁয়া পেয়েছেন ভারতের আর কেবল দুজন। ১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুম্বাইয়ে ২১ বছর ৩২ দিন বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন বিনোদ কাম্বলি। কিংবদন্তি সুনিল গাভাস্কার ১৯৭১ সালে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ২১ বছর ২৭৭ দিন বয়সে।

একাদশের আর কেউ ফিফটি না করতে পারলেও (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শুবমান গিলের ৩৪ রান) একজন হাঁকিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি। জয়সওয়ালের নৈপুণ্যে টেস্টে এমন কিছু সপ্তমবারের মতো দেখা গেছে। এই তালিকায় ভারতের প্রথম ব্যাটার তিনি। ফলে ভাঙা পড়েছে সাবেক তারকা বিরেন্দর শেবাগের কীর্তি। কোনো সতীর্থ ফিফটি না করলেও ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্ন টেস্টে ১৯৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

ভারত শেষ ৪ উইকেট হারায় কেবল ৩২ রানে। ইংল্যান্ডের হয়ে ৪১ পেরুনো অভিজ্ঞ পেসার অ্যান্ডারসন ৪৭ রানে নেন ৩ উইকেট। সমানসংখ্যক উইকেট পেতে লেগ স্পিনার রেহান আহমেদ ও বশিরের খরচা যথাক্রমে ৬৫ ও ১৩৮ রান। অন্য উইকেটটি বাঁহাতি স্পিনার টম হার্টলির।

জয়সওয়ালের পর ইংল্যান্ডের জন্য আতঙ্কে পরিণত হন বুমরাহ। বিনা উইকেটে ৩২ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়া দলটি চা বিরতির আগে হারায় ৪ উইকেট। বুমরাহর নেন দুটি। আর চা বিরতির পর ৯৮ রানে পড়ে ইংলিশদের বাকি ৬ উইকেট। বুমরাহই ধরেন ৪ শিকার। এক পর্যায়ে ১৮২ রানে ৭ উইকেট খুইয়ে ফলোঅনের শঙ্কাতেও পড়েছিল ইংল্যান্ড। অধিনায়ক বেন স্টোকসের কারণে রক্ষা মেলে তাদের।

স্টোকসকে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে থামান বুমরাহ। স্টাম্প ভেঙে যাওয়ার পর অসহায়ত্ব বোঝাতে গিয়ে হাত থেকে ব্যাটই ফেলে দেন তিনি। এর আগে অলি পোপকেও চোখ ধাঁধানো ইয়র্কারে বোল্ড করেন বুমরাহ। হার্টলিকে ফিরিয়ে ফাইফার পূরণের পর অ্যান্ডারসনকে এলবিডব্লিউ করে ইংল্যান্ডের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটান তিনি। তার মাইলফলকের দিনে ৭১ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদিপ যাদব।

ওপেনার জ্যাক ক্রলি সর্বোচ্চ ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন। ৭৮ বলে তিনি মারেন ১১ চার ও ২ ছক্কা। আর কেউ ফিফটি করতে পারেননি। স্টোকসের ৫ চার ও ১ ছয়ে সাজানো ৪৭ রানের লড়াকু ইনিংস থামে ৫৪ বলে। এছাড়া, জনি বেয়ারস্টো ২৫ ও পোপ ২৩ রান করেন। বেন ডাকেট ও হার্টলি দুজনই আউট হন ২১ রান করে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago