হতশ্রী পারফরম্যান্সে আফগানদের কাছে সিরিজ হারল বাংলাদেশ

Litton Das
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শরীরী ভাষায় দেখা গেল না ঝাঁজ, বোলিংয়ে বাংলাদেশ দলকে দেখে মনে হলো দিশাহীন। রাহমানুল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরানদের ব্যাটের দাপটে আফগানিস্তান পেল বড় রান। তার জবাব দেওয়ার কোন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলেন না ব্যাটাররাও। ফজল হক ফারুকি, মুজিব উর রহমানের তোপে সারাক্ষণ কোণঠাসা হয়ে থাকলেন তারা। মাঠের বাইরের বিতর্কে ম্রিয়মাণ বাংলাদেশ মাঠের ক্রিকেটেও দিতে পারল না স্বস্তি। প্রথমবার ওয়ানডে আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ হারল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।

শনিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে কোন লড়াই করতে পারেনি বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হেরেছে  ১৪২ রানের ব্যবধানে।  আফগানদের ৩৩১ রানের জবাবে স্বাগতিক দল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে করতে পারে ১৮৯ রান, সিরিজ হারে এক ম্যাচ আগেই। গত দশ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ডের বাইরে কেবল আফগানিস্তানই বাংলাদেশে এসে ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারল। 

ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো উইকেটে আফগানিস্তানের ওপেনিং জুটিতেই আসে আড়াইশোর বেশি রান। গুরবাজ, ইব্রাহিম দুজনেই পেলেন সেঞ্চুরি।  এক সময় মনে হচ্ছিল চারশো স্পর্শ করতে পারে তারা। ওপেনিং জুটি ভেঙে শেষের আঁটসাঁট বোলিংয়ে সাড়ে তিনশোর নিচে আটকানো গিয়েছিল সফরকারীদের। তাও ওই পুঁজি টপকাতে গড়তে হতো রেকর্ড।

রেকর্ড রান তাড়ায় নেমে নাঈম শেখ ছিলেন কুঁকড়ে। অধিনায়ক লিটন দাস দ্রুত রান বাড়ানোর তাড়ায় তিন বাউন্ডারি পেয়েই হয়ে যান কুপোকাত। ফারুকির বলে পুল করতে গিয়ে ব্যাটে নিতে পারেননি। ১৫ বলে ১৩ রানে থামেন তিনি। ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত মুজিবের দারুণ এক ক্যারম বলে বোল্ড হলে বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। নিজেকে গুটিয়ে রেখে নাঈম থিতু হতে পারেননি। ফারুকির বল নামাতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে বোল্ড বাঁহাতি ব্যাটার। ২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে যায় বাংলাদেশ।

তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে প্রতিরোধ গড়লেও তা থেকে দলকে উদ্ধার করতে পারেননি সাকিবও। আগের ম্যাচে ফিফটি করা হৃদয় এদিন অনেক সময় নিয়েও থিতু হতে পারেননি। সাকিব সাবলীল থাকলেও তাকে স্বস্তিতে খেলতে দেখা যায়নি। ৪০ রানের জুটির পর রশিদ খানের গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ৩৪ বলে ২ চারে ১৬ করেন ডানহাতি ব্যাটার।  সাকিব ফেরেন পরের ওভারেই। মোহাম্মদ নবির বল পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে পায়ে লাগিয়ে এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি তার।

দলে ফেরা আফিফ হোসেন করেন আবার হতাশ। রশিদের সামনে পড়ে প্রথম বলেই ভড়কে যান গুগলিতে। আফিফকে দেখে স্লিপে ফিল্ডার রেখেছিলেন রশিদ। সেখানেই ক্যাচ দেন বাঁহাতি ব্যাটার। ৭২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন দিকহারা বাংলাদেশ। গ্যালারির দর্শকদের মাঠ ছাড়াও হয় শুরু। উপস্থিতি শ' তিনেক আফগান দর্শক অবশ্য মাতিয়ে তুলেন গ্যালারি।

ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যাওয়া বাংলাদেশ এরপর পায় বড় জুটি। বিপর্যয় সামলে মিরাজকে নিয়ে লড়াই চালান মুশফিক। তবে রানরেটের চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় তাদের চেষ্টা কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। ৮৭ রানের জুটিতে ৪৮ বলে ২৫ করেন মিরাজ। ফিফটি করা মুশফিক শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন ৬৯ রান করে। কেবল ব্যক্তিগত অর্জনের খাতাতেই যোগ হয় তার প্রয়াস।

দুপুরে টস হেরে খেলতে নেমে শুরুতে সতর্ক ছিলেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার। দ্রতই ডানা মেলতে থাকেন তারা। ইব্রাহিম ধরে রাখেন এক প্রান্ত, গুরবাজ দেখা দেন চেনা ঢঙে। বাংলাদেশের বোলারদের আলগা বোলিংও তাদের কিছুটা সাহায্য।  শুরু থেকে এদিন লাইন-লেন্থ পেতে ধুঁকছিলেন হাসান, মোস্তাফিজরা। হাসানকে একাধিকবার ওভার স্টেপে নো বল করতেও দেখা যায়।

গুরবাজ ক্রমেই হয়ে উঠেন ভয়ানক। কোন সুযোগ না দিয়েই ছুটতে থাকেন দুর্বার গতিতে। প্রথম ৩০ বলে ১৮ করা ওপেনার ৪৮ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। পরে ১০০ বলে পৌঁছান ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরিতে। সেঞ্চুরির পরও দুর্বার হতে থাকে তার ব্যাট। ওপেনিং জুটি ভাঙার কোন দিশাই যেন পাচ্ছিল না বাংলাদেশ।

সেঞ্চুরির পর দ্রুত রান বাড়িয়ে ভয় ধরানো তারকা দেড়শোর কাছে গিয়ে পা হড়কান। ১০০ থেকে ১৪৫ পর্যন্ত যেতে তার লাগে ২৪ বল। টি-টোয়েন্টি ঘরানায় খেলা নিয়ে স্পর্শের বাইরে নিয়ে যাওয়ার দিকে ছিলেন তিনি। সাকিবের বলে পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউতে বিদায় তার। ১২৫ বলের ইনিংসে ১৩ চার আর ৮ ছক্কায় থামেন ১৪৫ রানে।

আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড গড়ে তার বিদায়ের পর নামে ধস। বিনা উইকেটে ২৫৬ থেকে ৩৩১ পর্যন্ত যেতে আর ৭৫ রানে তারা হারায় ৯ উইকেট।

শুরুতে আলগা বল করা বাংলাদেশের পেসাররা স্লগ ওভারে নিজেদের খুঁজে পান। মোস্তাফিজ নেন ৬০ রানে ২ উইকেট, হাসান ৭০ রান খরচায় পান সমান ২ উইকেট। নিজের স্পেল শেষ করার সময় উলটে পড়ে বাম পায়ে চোট পেয়ে বেরিয়ে যান তিনি। তার আগে অবশ্য রহমত শাহর উইকেট নেন ইবাদত। শুরুতে এলোমেলো থাকলেও পরে সামলে নিয়ে প্রভাব রেখেছেন সাকিব। ১০ ওভার বল করে ৫০ রানে নেন ২ উইকেট। মিরাজ বেশ কিছুটা খরুচে। ৯ ওভারেই ৬০ রান দিয়ে তিনি তুলেন ২ উইকেট।

শেষ দিকে ভালো করে প্রতিপক্ষকে সাড়ে তিনশোর আগে থামিয়ে রাখা গেলেও জবাব দেওয়া গেল ব্যাটে। হতাশায় সিরিজ শেষ করল বিবর্ণ বাংলাদেশ দল।

Comments

The Daily Star  | English

Private airlines caught in a bind

Bangladesh’s private airline industry is struggling to stay afloat, hobbled by soaring fuel prices, punitive surcharges, and what operators describe as unfavourable policies. Of the 10 private carriers that have entered the market over the past three decades, only two -- US-Bangla Airlines and A

7h ago