রেকর্ড জয়ের পর লিটন দাস

‘জীবনে কোন কিছু সহজ না, সব কিছু অর্জন করে নিতে হয়’

Litton Das
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

২০১৯ সালে প্রথম দেখায় নবীন টেস্ট দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। চার বছর পর দ্বিতীয় দেখায় সেই হারের শোধ তীব্রভাবে নিল স্বাগতিকরা। আফগানদের ৫৪৬ রানের ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে এবার যে বড় জয় এসেছে, তা রানের ব্যবধানে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পাওয়া জয়।

সাকিব আল হাসানের চোটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া লিটন দাস দাপট ম্যাচ জুড়ে প্রতিপক্ষের উপর দাপট দেখানোর পর জানালেন পরিতৃপ্তি, তুলে ধরলেন টেস্ট নিয়ে নিজেদের চিন্তা।

ক্যাপ্টেন্সি কেমন উপভোগ করলেন?

লিটন:  অধিনায়কত্ব খুব উপভোগ করেছি।  বোলাররা যেভাবে আমাকে সহায়তা করেছে… বিহাইন্ড দ্য বল দেখছি যে বোলাররা বল ক্যারি করাচ্ছে, স্লিপের দিকে বল যাচ্ছে। কিপিং করতেও মজা লেগেছে। যখন অধিনায়ক থাকি তখন ভালো লাগে যে যেকোনো সময় উইকেট পাওয়ার সুযোগ থাকে।

যখন প্রথম ইনিংসে শান্ত ও জয়ের ভিত্তিতে আমরা ভালো স্কোর করলাম তখন থেকে আমরা বিশ্বাস করছিলাম প্রথম ইনিংসের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তাদের আমরা দেড়শো আগে অলআউট করেছি। কাজেই ব্যবধানটা তখনই বোঝা গেছে কোন পথে যেতে পারি। কিন্তু কঠিন উইকেট ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও আমাদের ব্যাটাররা যেভাবে ক্যারেক্টার শো করেছে এটা সম্পূর্ণ ক্রেডিট আমাদের ব্যাটার ও বোলার পুরো দলের।

Litton Das, Taskin Ahmed, Ebadot Hossain, Khaled Ahemd, Mushfiq Hasan, Shoriful Islam
টেস্ট জেতার পর স্কোয়াডের পাঁচ পেসার নিয়ে অধিনায়ক লিটন দাস। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

তিন পেসার ১৫ উইকেট নিয়েছে, পেসারের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করবেন 

লিটন: মিরপুরে আমরা কখনো তিন পেসার নিয়ে খেলি না। যেহেতু উইকেটের আচরণটাই এমন ছিল তিন পেসার নিয়ে খেলার মতো। উইকেটে যথেষ্টই পেসারদের রসদ ছিল। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমি অধিনায়ক হিসেবে খুব খুশি।

২০১৯ সালের তুলনায় আফগানিস্তানের এই দল দুর্বল মনে হয়েছে কিনা

লিটন: এই জিনিসটা তুলনা করা কঠিন। কারণ অবশ্যই তাদের কিছু কিছু ভালো বোলার ছিল, তারা আসেনি। আসলেও যে খুব একটা বড় তফাৎ হতো তাও না। বিষয়টা হচ্ছে আমরা অনেক দিন ধরে টেস্ট খেলছি, তারা অনেক কম খেলে। তাদের জন্য কঠিন ছিল। অন্তত আমরা গেমের দিক থেকে এগিয়ে ছিলাম।

৮৯ বছরের মধ্যে টেস্টে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জেতার রেকর্ড গড়েছেন। জেতার বাইরেও জেতার ধরন কতটা আনন্দ দিচ্ছে?

লিটন:  অবশ্যই, এটা তো যখন চাইবেন তখনই হবে না-এরকম একটা ব্যবধান। এটার জন্য কৃতিত্ব ব্যাটারদের কারণ উইকেটটা  এত সহজ ছিল না। প্রতিটা ব্যাটারকে কৃতিত্ব দিতে হবে। সত্যি কথা আমাদের বোলাররাও খুবই ভালো বল করেছে, লাইন লেন্থ মেনে বল করেছে। এটা টেস্ট ক্রিকেট কাজে বড় অর্জন। এরকম জিততে পারলে এর থেকে বড় কিছু চাওয়ার থাকতে পারে না। অধিনায়ক হিসেবে আপনি এর থেকে বড় ব্যবধানে জয় চাইতে পারেন না কখনো।'

Najmul Hossain Shanto
ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

নাজমুল হোসেন শান্ত দুরন্ত ছন্দে আছে। আপনার দৃষ্টিতে সাফল্যের পেছনে তার কোন বদল বেশি চোখে লেগেছে?

লিটন: দেখেন শান্তর জায়গায় আমিও ছিলাম কিছুদিন আগে। এসব নিয়ে শান্তর সঙ্গে আমার কথাবার্তাও হয়েছে। জানি না কতটুকু তাকে সাহায্য করেছে। তার হয়ত অনুশীলনের মেথড একটু বদল করেছে। আগে যেভাবে অনুশীলন করত এখন অনেক গুছনো। আপনি যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে থাকবেন নিয়মিত আপনি কিন্তু জানবেন আপনার ঘাটতি কি। কোন জায়গায় আপনি শক্তিশালী, কোন জায়গায় আপনি দুর্বল। সে তার জিনিসটা খুব ভালোভাবে খুঁজে পেয়েছে। ওভাবেই অনুশীলন করেছে। এটা ভালো দিক। আমি চাইব ও যেভাবে খেলছে এটা যেন ধরে রাখে। খারাপ সময় আসবে-যাবে। ও যদি ধরে রাখতে পারে, কীভাবে সফল হয়েছে মনে রাখে তাহলে সাফল্য পাবে।

ঘরের মাঠে পেস বান্ধব উইকেটে নিয়মিত খেলবেন কিনা?

লিটন: এটা নির্ভর করছে আমরা কার সঙ্গে খেলছি। এমন না যে শুধু স্পিন উইকেটে খেলব বা শুধু পেস উইকেটে খেলব। যার সঙ্গে খেলব তাদের শক্তি, দুর্বলতা সব কিছু পর্যালোচনা করে…যেটা মানুষ করে হোম এডভান্টেজ নেওয়া। এটাই করব।

Zakir Hasan
সেঞ্চুরির পর জাকির হাসানের উদযাপন। ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

জয়, জাকির, শান্ত। অপেক্ষাকৃত তরুণ টপ অর্ডার ভালো পারফর্ম করা কতটা স্বস্তির? 

লিটন: আপনি যদি বড় দল হতে চান। পাঁচদিন ক্রিকেট খেলতে চান (টপ অর্ডারের পারফর্ম্যান্স জরুরি)।

আমি অনুভব করি, আমার কাছে খুব ভালো লাগে। আমাদের বোলিংও যদি দেখেন। অফ স্পিনার, বাঁহাতি স্পিনার…পেসাররা সবাই ভালো করছে। পাইপলাইনে চার-পাঁচজন পেসার আছে যাদের যেকোনো সময় নামিয়ে দেওয়া যায়। এদিক থেকে বলব আমাদের বোলিং খুবই শক্তিশালী।

হ্যাঁ আমাদের ব্যাটিং আগে নড়বড়ে ছিল। টেস্টে যদি টপ অর্ডার পারফর্ম না করে তাহলে খুব কঠিন ফিরে আসা। এদিক দিয়ে আমরা খুশি যে ব্যাটাররা পারফর্ম করছে। এটা ভালো দিক যে আমাদের ব্যাটাররা ক্যারেক্টার শো করছে। জাকির কেবল তৃতীয় টেস্ট খেলেছে। কখনই মনে হয়নি কেবল তৃতীয় টেস্ট খেলছে। ওর ভেতরে পরিপক্বতা এসেছে, একই কথা জয়ের বেলাতেও।  জয় নিউজিল্যান্ডেও গেল। ওই যে ক্যারেক্টার শো করছে, আমরা চাই এরকম ক্যারেক্টার শো করবে। ডিটারমেশন অনেক হাই থাকবে যে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারব। জাকির রান আউট না হলে আরও বড় ইনিংস খেলতে পারত। যেভাবে সে খেলেছে আমি খুশি।

সাকিব না থাকাতে একধরণের ভালোও হয়েছে কিনা। কারণ হয়ত যারা পারফর্ম করেছে এরকম একজন বোলারকে বাদ দিতে হতো।

লিটন: দেখেন ম্যাচের আগে হয়তবা এরকম ছিল সাকিব ভাই খেললে ভালো হত। ম্যাচের পরে আসছে যে খেললে ভালো হত কিনা। জিনিসটা এমন না, আপনার হাতে যা অস্ত্র আছে, যখন একাদশ তৈরি করে দিয়েছি। কে থাকবে না থাকবে এটা নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই। হয়ত দুই বছর পর বা চার বছর পর এমন দিন আসবে যখন সাকিব ভাই থাকবে না। বাংলাদেশ দলকে তো এগুতে হবে। যে দলটা খেলেছে সেটা বাংলাদেশের সেরা দল ছিল। তারা তাদের ভূমিকা পালন করেছে।

আপনার কি মনে হয় জয়, জাকিরদের সাহায্য করেছে 'এ' দলে নিয়মিত খেলা? প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা? 

লিটন:  অবশ্যই। আমার মনে হয় জাকির ৬০ এর বেশি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছে (টেস্ট অভিষেকের আগে)। যত বেশি চার দিনের ম্যাচ খেলবেন আইডিয়া বেশি হবে। যদিও কদিন আগে অভিষেক হয়েছে। কিন্তু চারদিনের ম্যাচ হেল্প করেছে। আপনি যদি একটা খেলোয়াড়কে চার-পাঁচ ম্যাচ পর নিয়ে আসেন, আর আরেকটা প্লেয়ার যদি ৬০, ৭০ ম্যাচ পর আসে পার্থক্য অনেকটা বোঝা যায়। যত বেশি লাল বলের ম্যাচ খেলা যায় টেস্ট ক্রিকেট তত সহজ হবে।

Bangladesh Test Team
ছবি: ফিরোজ আহমেদ/ স্টার

এই আফগানিস্তান দলটাকে দুর্বল মনে হয়েছে কিনা?

লিটন: আমি জানি না এই জিনিসটা নিয়ে কেন আপনারা..(বলেন), দুর্বল ছিল কিনা বা কোন কিছু… দেখেন,  খেলতে গেলে জিনিসটা কষ্টকর। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়কে কষ্ট করে উইকেট নিতে হয়। এই গরমে এতটা সহজ না যে এসে চার-পাঁচ ওভার স্পেল করলাম, আর হয়ে গেল। বা একটা ব্যাটসম্যানকে তো কেউ ফুলটস বল দিয়ে বলে না যে ভাই… কষ্ট করে ব্যাট করতে হয়েছে গরমের ভেতর।  জিনিসটা এতটা সহজ না। আপনি যদি দেখেন উইকেটে বল উঠছে, নামছে। তাদের স্পিনাররা বল টার্ন করাচ্ছে যথেষ্ট। লাইফে কোন কিছু সহজ না, আপনাকে সব কিছু অর্জন করে নিতে হয়। আপনি যদি মানসিক ব্যাপারটা শক্ত রাখতে না পারেন। স্বপ্নটা থাকতে হয় । না হলে অর্জন করতে পারবেন না। আমার কাছে এরকম মনে হয় না আপনি কার সঙ্গে খেলছেন। বড় দল হলেও যে পরিশ্রম করে খেলা লাগে, ছোট দল হলেও একই জিনিস অনুসরণ করা লাগে। রুটিনের কোন ভিন্নতা হওয়া যাবে না।'

Litton Das
ড্রেসিংরুমে নিজের ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছেন লিটন দাস। ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

এই টেস্টের আগে কিছু খবর বেরিয়েছিল আপনি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কত্ব নিতে চাইছেন না। যদিও আপনি নিজে কিছু বলেননি। আগামীতে যদি সুযোগ থাকে অধিনায়কত্ব নিয়ে কি ভাবনা?

লিটন: দেখেন, এখন ত আপাতত  একটার জন্য পেয়েছি। (অধিনায়কত্ব)। আশা করব সাকিব ভাই তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। এবং তার কাছে হস্তান্তর করব। আমি আগামীরা পরে ভাবব। দেখা যাক।

২০১৯ সালে আফগানিস্তানের কাছে হারটা খুব বিব্রতকর ছিল। এই টেস্টের আগে মনে হয়েছে কিনা তাদের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সেটা ফিরিয়ে দেব?

লিটন:  আমি ওভাবে অনুভব করি না। আমি  জেতার জন্য খেলতে চাই। অবশ্যই জেতার জন্য তো খেলতে গেলে একটা জিনিস থাকে বড় ব্যবধানে জেতা, ভালোভাবে জেতা। জেতা মানে জেতা। অবশ্যই আপনি যখন বড় ব্যবধানে জিতবেন, তখন মনে হবে বড় দল হওয়ার একটা পথে যাচ্ছি। ২০১৯ আমাদের জন্য অন্যরকম ছিল। তারা যে লেভেলের খেলত আর আমরা যেমন খেলতাম হয়ত একটু ম্যাচিংয়ে গড়মিল ছিল। ২০২৩ সালে এসে অনেক টেস্ট খেলেছি, সেদিক থেকে পাকাপোক্ত যে জানি কীভাবে খেলতে হয়। আরেকটা জিনিস ২০১৯ সালে হয়ত আমাদের পেস আক্রমণ এতটা ভালো ছিল না, ২০২৩ সালে যতটা হয়েছে। তুলনা করলে অনেক ভিন্নতা পাবেন। এই ম্যাচ জেতাতে আমরা খুশি সবাই।

সাকিব-তামিম ছিলেন না, এই বদল কীভাবে দেখেন। নতুন ফেইজে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন কিনা?

লিটন: না বদল না। নিউজিল্যান্ডে যে আমরা জিতেছি, একই  কিন্তু। তামিম ভাই, সাকিব ভাই কেউই খেলেনি। আমরা তরুণ দল ছিলাম এবং দেশের বাইরে গিয়ে জিতেছি। আমরা যখন দেশের বাইরে গিয়ে জিতলাম আমাদের ভেতর একটা বিশ্বাস আসল যে কষ্ট সাফল্য পাওয়ার হার বাড়ে। সবাই এখন একটা ব্যাপারে মরিয়া যে কখন টেস্ট আসবে, কখন টেস্ট আসবে। আল্টিমেটলি দুই-তিন বছর পরে গিয়ে তিন-চারজন সিনিয়র খেলোয়াড়কে পাবেন না। এখন থেকে এটা যদি সামলাতে না পারেন তাহলে হুট করে বদল হয়ে গেলে কঠিন। তারা খেললে ভালো হতো, কিন্তু এমন না যে ওখান থেকে আমরা কামব্যাক করতে পারব না। পাইপলাইনে, আমাদের ব্যাটিং অর্ডারে আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে। নতুন যারা আসছে তারা সামর্থ্যবান।

এই বড় জয়ের পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পরের চক্রে নামার আগে বিশ্বাস বাড়ল?

লিটন: আপনি একটা বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিতলে অনুভূতিটা খুব ভালো থাকে,  খেলোয়াড়রা পরিপক্বতা দেখিয়েছে।  এটা এক দিনে হয় না, নিয়মিত ম্যাচ খেললে হয়। আমার মনে হয় এ ম্যাচুরিটিটা কেউ ভুলবে না। চ্যাম্পিয়নশিপে সেম সিনারিওতে, খেলোয়াড়রা একই প্রক্রিয়া মেনে এগোবে। ফলাফলটা আপনি হাতে পাবেন কি না, সেটা আপনি সেদিনই বুঝতে পারবেন, যে ওই দিন আপনি ভালো খেলবেন কি না।  তবে ওটা অনেক দূরে। এখন আমাদের সাদা বলের ক্রিকেট আছে। এখন আসলে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে ভাবার খুব একটা সময় নেই, আর দায়িত্বটাও আরেকজনের হাতে। তো এটা নিয়ে আমি আর বলতে পারছি না।

এর আগে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করেছেন। এবার টেস্টেও করলেন। অধিনায়কত্ব করতে কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জের মনে হয়েছে? আর কাউকে অনুসরণ করে কিনা?

লিটন: চ্যালেঞ্জ না। যখন আপনার হাতে ভালো মানের ব্যাটার-বোলার থাকবে, তখন কাজটা সহজ হয়ে যায়। শান্ত আর জয় যেভাবে আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট করেছে সেটা খেলার ভিত অনেকটাই গড়ে দিয়েছিল, অধিনায়ক হিসেবে তখন আমার মনে হচ্ছিল আমরা শক্ত অবস্থানে চলে যাচ্ছি, যদিও আমাদের প্রথম ইনিংসে বড় রান করার কথা ছিল। আমরা বাই চান্স কিছু সিলি মিসটেকের কারণে করতে পারিনি। তাই চ্যালেঞ্জ ছিল না, ওরকম কিছু ফেস করতে হয়নি। অধিনায়কত্ব তো করলামই কয়েকটা ম্যাচ, কাউকে ফলো করি না এখনো।

পেসারদের এত ভালো করতে দেখে উঠতি পেসাররাও লাল বল খেলার প্রেরণা পাবে?

লিটন: অবশ্যই। আমার মনে হয় আমাদের পেস ইউনিটটা দিনে দিনে উন্নতি করছে। পিচ ম্যাপ দেখলে বুঝা যায়, আগে আমাদের বোলাররা, দুই এক জন ছাড়া তেমন বোলার ছিল না যারা একই জায়গায় টানা বল করতে পারত। এখন দেখেন আমরা কাভার-পয়েন্ট সব ছাড়া বল করি, এই উইকেটে না শুধু, ফ্ল্যাট উইকেটেও।

এখন আমরা নেটে ব্যাট করলেও স্ট্রাগল করতে হয়। যেটা আগে পেতাম না। আমার মনে হয় তাসকিন, ইবাদত, খালেদ, শরিফুল, মুশফিক এরা।। যারা সাদা বলের খেলোয়াড় আছে, তাদের মুখোমুখি হলেও নেটে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। আমাদের জন্য ভালো, আমরা ম্যাচের আগে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই। যেটার কারণে খেলা অনেকটা সহজ হয়। এমন যদি বোলিং হতে থাকে, তাহলে আরও পেস বোলার উঠে আসতে থাকবে।

আগে বললেন প্রতিপক্ষের ওপর নির্ভর উইকেট বানানোর কথা। এখন প্রতিপক্ষের উপর নির্ভর করে স্পিন উইকেটে গেলে এই ধারাবাহিকতা কি থাকবে? পেসাররা যদি সুযোগ না পায়…

লিটন: পয়েন্টটা ভালো ধরেছেন। সুযোগই যদি না পায়, বোলাররা কীভাবে তাদের ক্যারেকটার শো করবে! অবশ্যই, এরপরও অনেক কিছু আছে। কথা কথা আমরা যখন নিউজিল্যান্ডে খেলতে যাই, তখন কিন্তু আমাদের বিপক্ষে ওরা চারটা স্পিনার নিয়ে খেলতে যায় না, একটা স্পিনারও নেয়। তারা তাদের সুযোগটা ব্যাক করতে হবে। আমরা ওখানে ৩ স্পিনার নিয়ে খেলব না। একই ভাবে এশিয়ায় যখন কেউ খেলতে আসে, তখন কিন্তু এশিয়ানরা স্পিন উইকেট বানায়। আপনি যখন চ্যাম্পিয়নশিপে ঢুকে যাবেন, যখন আপনার জেতাটা দরকার। তখন আপনি অনেক সুযোগ নিতে চাইবেন। এখনো আমরা চাইব ভালো উইকেটে খেলতে, যেন দুই দিকেই সুবিধা থাকে; এমন নয় যে শুধু স্পিনার বা পেসাররা একচেটিয়া আধিপত্য দেখাবে। এই উইকেটে দেখেন, স্পিনাররাও কিন্তু সাহায্য পেয়েছে। দেখা যাক, ভবিষ্যতে দেখা যাবে।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে রানরেট অনেক বেশি ছিল, সাড়ে চার বা পাঁচের বেশি।

লিটন: বিষয়টা এমন না। ব্যাটারের কাছে যদি মনে হয় বলটা মারার, তাহলে মারা ভালো। মারার মতো বল পেলে ছাড়বেন কেন? বোর্ডে রান আসতে থাকলে কিন্তু প্রতিপক্ষও চাপে পড়ে যায়। টেস্টকে আগে বলা হতো ৫ দিনের খেলা, এখন কিন্তু বেশিরভাগ ম্যাচেই ৫ দিনে খেলা যাচ্ছে না। শেষ কয়েক বছর ধরেই এটা মানা হচ্ছে যে কত দ্রুত রান করা যায়, বোলার ভালো হলে ডিক্লেয়ার দিয়ে দেয়।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্ট ছিল। টেস্ট কমিয়ে ফেললে উন্নতি সম্ভব?

লিটন: আমরা তিন ফরম্যাট খেলতে থাকি। আমাদের চোট সামলানোরও একটা বিষয় থাকে। আপনি যদি টানা খেলতেই থাকেন, তাহলে আপনি একটা সময় গিয়ে ফেড আপ হয়ে যাবেন। আপনার শক্তি থাকবে না। এই গরমে যদি আমরা দুইটা টেস্ট খেলতাম, তাহলে আমি জানি না, আমরা হয়তো দুইটা টেস্ট খেলে ফেলতাম, কিন্তু ওই অ্যাকশনটা দিতে পারতাম কি না তাও প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা চাই,  কিন্তু বেশি চাওয়ারও সুযোগ নেই, কারণ আগামী বছরই কিন্তু ১৪টা টেস্ট খেলব আমরা। সামনে বিশ্বকাপ, সাদা বলের ক্রিকেট, এখন সবাই চাইবে সাদা বলে মনোযোগ দিতে।

ব্যাটারদের ভালোর জন্য কী ভালো উইকেটে খেলা উচিত?

লিটন:  ফ্ল্যাট উইকেটে খেললেই যে রান করবেন, তা কিন্তু নয়। সিমিং উইকেটে খেললে যে রান করতে পারবেন না, তাও কিন্তু না। আপনি ফ্ল্যাট উইকেটে খেললেও বাজে একটা শটে আউট হতে পারেন, আবার সিমিং উইকেটে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালো ইনিংস খেলতে পারেন। তো এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মনে হয়, কে কীভাবে অনুশীলন করছে, কে কীভাবে মানসিকভাবে এটা নিয়ে এগোচ্ছে।

আমরা যদি ইভেন উইকেটে খেলি, যেখানে ব্যাটাররা বড় রান পায়, সিমার-স্পিনাররাও উইকেট পায়… এখানে বড় বড় রান হয়েছে, দুই তিনটা সিমার, স্পিনাররাও উইকেট নিয়েছে, এই উইকেট নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। আমরা যদি পারি, তাদের হয়তো আমরা ওটা করতে দেইনি, আমাদের ব্যাটাররা যে আগ্রাসী ব্যাটিংটা করেছে, তার মুখোমুখি আমরা হইনি। অবশ্যই ভালো উইকেট মানে এসব উইকেট।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

9h ago