আইপিএল

জাদেজার শেষ দুই বলের ছক্কা-চারে চ্যাম্পিয়ন ধোনির চেন্নাই

আহমেদাবাদে আইপিএলের ফাইনালে ডিএলএস মেথডে গুজরাট টাইটান্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে চেন্নাই।
Ravindra Jadeja
ছবি: আইপিএল

মোহিত শর্মার লেগ স্টাম্পের উপর বলটা ফাইন লেগ দিয়ে সীমানার দিকে ঠেলে দিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। মাথা নিচু করে তখন ধ্যানমগ্ন মাহেন্দ্র সিং ধোনি। খানিক পরই তিনি টের পেলেন কাজ হয়ে গেছে! দুহাত উঁচিয়ে ছুটছেন জাদেজা, পুরো মাঠ হলুদময়। বৃষ্টি বিঘ্নিত আর রোমাঞ্চে ভরপুর ফাইনালে নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে চেন্নাই সুপার কিংস।

আহমেদাবাদে আইপিএলের ফাইনালে ডিএলএস মেথডে গুজরাট টাইটান্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে চেন্নাই। এই নিয়ে আইপিএলে এটি তাদের পঞ্চম শিরোপা। সর্বোচ্চ শিরোপা জেতায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে স্পর্শ করল আইপিএলের সফলতম দল। 

আগে ব্যাটিং পেয়ে সাই সুদর্শনের বিস্ফোরক ইনিংসে আইপিএলের ফাইনালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২১৪ রানের পুঁজি গড়ে গুজরাট। বৃষ্টিতে অনেকটা সময় নষ্টের পর ডিএলএস মেথডে ১৫ ওভারে চেন্নাইর লক্ষ্য ঠিক হয় ১৭১ রানের। একদম শেষ বলে সেই লক্ষ্য পূরণ করে ফেলে চেন্নাই।

ফাইনাল ম্যাচটা ছিল মূলত রোববার। সেদিন বৃষ্টির কারণে খেলা না হওয়ায় ম্যাচ আসে সোমবার। এদিনও চেন্নাইর ইনিংসের শুরুতে হানা দেয় বৃষ্টি। অনেকটা সময় নষ্টের পর খেলা যখন শেষ হলো ঘড়িতে তখন হয়ে গেছে ৩০ তারিখ!

বারবার রঙ বদলে দুলতে থাকা ম্যাচে শেষ দুই ওভারে চেন্নাইর দরকার ছিল ২১ রান। মোহাম্মদ শামির ১৯তম ওভার থেকে এলো কেবল ৮ রান। শেষ ওভারে ১৩ রান আটকানোর দায়িত্ব পড়ল  এর আগে ৩ উইকেট নেওয়া মোহিতের ঘাড়ে। প্রথম চার বল থেকে তিনি দিলেন মাত্র ৩ রান। শেষ দুই বলে দরকার ১০ রান। স্ট্রাইক পেয়ে পঞ্চম বলে সোজা ছক্কা মেরে দেন জাদেজা। শেষ বলে বাউন্ডারি পেয়ে যান পেছন দিকে। ভৌ দৌড় দিয়ে মাতোয়ারা হয়ে যান উৎসবে। 

চেন্নাইর রান তাড়ায় তিন বল হওয়ার পরই নামে বৃষ্টি, খেলা বন্ধ থাকে লম্বা সময়। বৃষ্টি থামার পর মাঠ প্রস্তুত করে খেলা শুরু করতে স্থানীয় সময় রাত ১২টা পেরিয়ে যায়।

১৫ ওভারে ১৭১ রানের লক্ষ্যে রতুরাজ গায়কোয়াড়-ডেভন কনওয়ে নেমে নির্ধারিত ৪ ওভারের পাওয়ার প্লেতেই এনে ফেলেন ৫২ রান। পাওয়ার প্লের পরেও চলতে থাকে রানের স্রোত। সপ্তম ওভারে গিয়ে জোড়া আঘাত আনেন আফগান নূর আহমেদ। তার রিষ্ট স্পিন উড়াতে গিয়ে টপ এজড হয়ে ধরা দেন রতুরাজ। ৭৪ রানে প্রথম উইকেট হারায় চেন্নাই।

ওভারের শেষ বলে ঝড় তোলা কনওয়েকেও তুলে নেন তিনি। লং অফ দিয়ে চিপ শট খেলতে গিয়ে বাউন্ডারি ধরা দেন ২৫ বলে ৪৭ করা কনওয়ে। ম্যাচে ফেরে গুজরাট। 

তিনে নেমে শিভম দুভে শুরুতে কিছুটা আড়ষ্ট থাকলেও চারা নামা আজিঙ্কা রাহানে খেলে যান ক্যামিও ইনিংস। তার ১৩ বলে ২৭ রানে বেশ কিছুটা এগোয় চেন্নাই। মোহিতের বলে অবশ্য অসময়ে থামেন তিনি।

আগের দিন আইপিএলে নিজের শেষ ম্যাচ খেলার ঘোষণা দিয়েছিলেন আম্বাতি রাইডু। ফাইনাল মঞ্চে শেষটা রাঙাতে তার অবদানও কম না। গুরুত্বপূর্ণ ফেইজে ৯ বলে ১৯ করে রাখেন বড় অবদান।

ধোনি বিদায় বলেননি, তবে অনেকে ধরে নিয়েছিলেন তারও শেষ। ১৪ বলে ২২ রানের সমীকরণে নেমে ধোনি ক্যাচ দিয়ে দেন প্রথম বলেই! গুজরাটের পাল্লা তখন বেশ ভারির দিকে।  দুভে আড়ষ্টটা কাটিয়ে রানের চাকায় শান দিয়ে চেন্নাইর ভরসা হয়ে টিকে ছিলেন। তবে ক্রমশ কঠিন হয়ে যাওয়া পরিস্থিতিতে তিনিও বাউন্ডারি বের করতে পারছিলেন না। শেষটায় চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারের মতো কাজটা সারেন জাদেজা।

সন্ধ্যায় টস হেরে আগে ব্যাটিং পেয়ে দারুণ শুরু পায় গুজরাট। দুর্ধর্ষ ছন্দে থাকা শুভমান গিলের সঙ্গে পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে আগ্রাসী সূচনা করেন ঋদ্ধিমান সাহা।

প্রথম ৬ ওভারে আসে ৬২ রান। অবশ্য গিল-ঋদ্ধিমান দুজনকেই সহজ ক্যাচ ফেলে জীবন দেন দীপক চাহার।  পাওয়ার প্লের পর পরই দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত মুন্সিয়ানায় গিলকে ফেরান জাদেজা-ধোনি। জাদেজার জোরের উপর করা বল অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় ধরে বিদ্যুৎ গতিতে গিলকে স্টাম্পিং করেন ধোনি। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটার ফেরেন ৩৯ রান করে।

তিনে নেমে শুরুতে জড়োসড়ো ছিলেন সুদর্শন। ঋদ্ধিমানের গতিও কিছুটা কমে গিয়েছিল। তবে গিয়ার বদল করতে দেরি করেনি তারা।  ৬৪ রানের জুটির পর ৩৯ বলে ৫৪ করা ঋদ্ধিমানকে ফেরান চাহার।

সুদর্শন তার মন্থর শুরু একে একে উড়ান ছক্কার ঝড়ে। তার দাপুটে ব্যাটে বদলে যায় ইনিংসের গতি। শেষ ৫ ওভারে আসে ৭১ রান।

৩০ বলে ফিফটির পর আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠেন তিনি। একদম শেষ ওভারে জাগিয়েছিলেন সেঞ্চুরির আশাও। মাথিসা পাথিরানার বলে এলবিডব্লিউতে বিদায় নেওয়ার আগে করে যান ৪৭ বলে ৯৬। তার ইনিংসে দুইশো ছাড়ানো রেকর্ড পুঁজি পেয়ে স্বস্তিতে ছিল গুজরাট। বৃষ্টি, ডিএলএস মেথড ও নানান নাটকীয় মোড় ঘুরে হার্দিক পান্ডিয়ার দলকে শেষ পর্যন্ত হতে হয়েছে হতাশ।

Comments