বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ম্যাচ পরিত্যক্ত, সরাসরি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা
আয়ারল্যান্ড ইনিংসের ১৭তম ওভারে নামা বৃষ্টি আর থামল না। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পরিত্যক্ত হয়ে গেল তাদের ও বাংলাদেশের মধ্যকার প্রথম ওয়ানডে। আর এতে সবচেয়ে হতাশ হলো আইরিশরাই। সরাসরি আগামী ২০২৩ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ নষ্ট হয়ে গেল তাদের। স্বাগতিকদের হতাশার দিনে স্বস্তির খবর পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। এই ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় অষ্টম দল হিসেবে সরাসরি বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে গেছে প্রোটিয়াদের।
মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে টস হেরে আগে ব্যাটিং পেয়ে ৯ উইকেটে ২৪৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে আয়ারল্যান্ড ১৬.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৫ রান তোলার পরই নামে বৃষ্টি। বেরসিক বৃষ্টি আর থামেনি। চলতি বছরের শেষদিকে ভারতে হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা পেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচই জিততে হতো আইরিশদের। বৃষ্টি তাদের সেই আশা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে অনেক আগেই।
মাঝারি মানের পুঁজি জড়ো করে বাংলাদেশ। সেটার পেছনে ছোটা আয়ারল্যান্ড যাতে শক্ত ভিত না গড়তে পারে সেটাই তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দলের প্রাথমিক চাহিদা ছিল। সেই লক্ষ্যে উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে টাইগারদের দুই পেসারই শুরুতে দারুণ বল করেন।
আয়ারল্যান্ডের ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই অভিজ্ঞ পল স্টার্লিংকে আউট করেন শরিফুল ইসলাম। এই বাঁহাতি পেসারের লেংথে ডেলিভারিতে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন স্টার্লিং। বল লুফে নিতে কোনো ভুল করেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে স্টার্লিংয়ের রান ১৫।
ঠিক আগের বলেই মাঠের প্রায় একই জায়গা দিয়ে ছক্কা মেরেছিলেন স্টার্লিং। কিন্তু বিপজ্জনক এই ডানহাতি ব্যাটারকে মাথাব্যথার কারণ হতে দেননি শরিফুল। পরের বলেই নেন প্রতিশোধ। এতে দলীয় ২২ রানে প্রথম উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে শিকার ধরেন ছন্দে থাকা হাসান মাহমুদ। এই ডানহাতি পেসারের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে উপড়ে যায় প্রতিপক্ষ অধিনায়ক স্টিফেন ব্যালবার্নির স্টাম্প। ৯ বলে ১ চারে তার রান ৫। স্কোরবোর্ডে ২৭ রান উঠতেই দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে আইরিশদের।
চাপের মুখে তৃতীয় উইকেটে উঠতে শুরু করেছিল স্টিফেন ডোহেনি ও হ্যারি টেক্টরের জুটি। তবে দুজনকেই ইনিংসের ১৪তম ওভারের আউট করতে পারত বাংলাদেশ। যদিও সুবর্ণ সম্ভাবনাগুলো সফলতার মুখ দেখেনি।
বল হাতে নিয়ে দ্বিতীয় বলেই সুযোগ তৈরি করেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তার ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিতে ইনসাইড আউট শট খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ তোলেন টেক্টর। ব্যাটে-বলে সংযোগ হয়নি ঠিকঠাক। তবে এক হাতে চেষ্টা চালিয়েও বল লুফে নিতে পারেননি তাইজুল। ব্যক্তিগত ১০ রানে জীবন পান টেক্টর।
তিন বল পরই আসে ওপেনার ডোহেনিকে রানআউটের সুযোগ। তাইজুলের ডেলিভারি টেক্টর কভারে ঠেলে দিয়েই লাগান দৌড়। ঝুঁকি নিয়ে স্ট্রাইক প্রান্তের দিকে যেতে হয় ডোহেনিকে। তবে মিরাজের থ্রো হয়নি জুতসই। স্টাম্পের অনেক দূর দিয়ে তো যায়ই, উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের নাগালের মধ্যেও ছিল না। ফলে পড়িমরি করে ছুটতে থাকা ডোহেনি বেঁচে যান। ইনিংসের প্রথম ওভারেও তিনি রিভিউ নিয়ে জীবন পান। শূন্য রানে থাকা অবস্থায় পেসার হাসানের বলে তার বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়ার। পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, বাড়তি বাউন্সের কারণে বলে চলে যেত স্টাম্পের উপর দিয়ে।
বাংলাদেশকে অবশ্য বেশিক্ষণ আফসোসে পুড়তে হয়নি। ১৬তম ওভারে ফিরে ভেলকি দেখান তাইজুল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসা ডোহেনিকে ফিরতি ক্যাচে আউট করেন তিনি। এই দফা আর কোনো ভুল করেননি। ৩৯ বলে ১৭ রান আসে ডোহেনির ব্যাট থেকে। তার সঙ্গী তৃতীয় উইকেটে টেক্টরের জুটি ছিল ৬২ বলে ৩৬ রানের।
এরপর হানা দেয় বৃষ্টি। ১৬.৩ ওভারের পর আইরিশদের ইনিংস আর মাঠে গড়ায়নি। ক্রিজে তখন ছিলেন টেক্টর ৩৭ বলে ২১ রান নিয়ে। মাত্রই নামা লরকান টাকারের সংগ্রহ ছিল ৪ বলে ২ রান। বাংলাদেশের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন শরিফুল, হাসান ও তাইজুল।
এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৪৬ রান করতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ। তাদের ইনিংসে ফিফটি ছিল কেবল একটি। একবার জীবন পেয়ে তা করেন ৩৬তম জন্মদিনে খেলতে নামা মুশফিক। ছয়ে নেমে ৭০ বলে ৬ চারে ৬১ রান আসে ছন্দে থাকা অভিজ্ঞ তারকার ব্যাট থেকে। সবশেষ চার ইনিংসে এটি তার তৃতীয় পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। বাকিটিতে করেন ৪৪ রান।
ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে ৬৬ বলে ৪৪ করে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এছাড়া, সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয় ও মিরাজ থিতু হয়ে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ফলে সংগ্রহ বড় হয়নি বাংলাদেশের। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে পেসার জশ লিটল ৩ উইকেট নেন ৬১ রানে। ২টি করে উইকেট পান মার্ক অ্যাডায়ার ও গ্রাহাম হিউম। উইকেটের দেখা পান কার্টিস ক্যাম্ফার আর জর্জ ডকরেলও।
একই ভেন্যুতে দুই দলের তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে আগামী শুক্রবার।
Comments