শেষ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহকে দলে নেওয়ায় অবাক হয়েছিলাম: ডমিঙ্গো
প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে হুট করেই টি-টোয়েন্টি সংস্করণ থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিসিবি। তার জায়গায় প্রধান কোচ কাউকে নেওয়া না হলেও শ্রীধরন শ্রীরামকে টেকনিক্যাল পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ডমিঙ্গো। জিম্বাবুয়েতে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে দল নির্বাচনে তার মতামতকেও উপেক্ষা করার কথা জানিয়েছেন তিনি। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাতকারে এই কোচ জানান, খেলোয়াড়দের ভীতির মধ্যে রেখে পারফরম্যান্স আদায় করা কঠিন।
ছুটি কাটিয়ে এসেই শুনলেন আপনি আর টি-টোয়েন্টি দলের সঙ্গে নেই। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার সঙ্গে বিসিবি আলোচনা করলে ভালো হতো কিনা?
ডমিঙ্গো: দেখুন গণমাধ্যমে জানানোর আগে আমার সঙ্গে আলোচনা করলে ভালো হতো। এটা কখনই ভালো নয় (আগে গণমাধ্যমে বলা)। বাংলাদেশের ক্রিকেটে গণমাধ্যমের নজর অনেক কড়া। হ্যাঁ যেটা বললাম আমার সঙ্গে আগে আলোচনা করলে ভালো হতো।
টি-টোয়েন্টি থেকে দূরে থাকায় শান্তিতে থাকার কথা বলছেন। কি ধরনের শান্তি?
ডমিঙ্গো: আমি সংবাদ সম্মেলনে যেটা বলেছি আমার পরিবারকে খুব বেশি সময় দেওয়া হচ্ছিল না। ৩৬৫ দিনের মধ্যে মাত্র ৫ সপ্তাহ বাড়িতে ছিলাম। এই সংস্করণে না থাকার ফলে পরিবারকে আরও সময় দেওয়ার সুযোগ পাব। মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে সতেজ থেকে অন্য সংস্করণগুলোতে কাজ করতে পারব। আমি দুই সংস্করণে কাজ করতে স্বস্তি বোধই করব। এটা আমাকে কিছুটা নিশ্বাস ফেলার জায়গা দিচ্ছে।
বোর্ডের শীর্ষ মহল থেকে প্রায়ই খোলামেলা কথা বলা হয়। সমালোচনা করা হয়। দলের বাইরে থেকে দল নিয়ে এরকম কথা বলার সংস্কৃতি কতটা ক্ষতিকর বলে মনে করছেন?
ডমিঙ্গো: আমি এমন ধরণের কোচ যে দলকে অভ্যন্তরে সমালোচনা করে কিন্তু সবার সামনে দলকে সমর্থন যোগায়। অনেক ধরনের কথা, আলোচনা দলের আশেপাশে হলে এবং গণমাধ্যমে অনেক বেশি সমালোচনা এসব উপেক্ষা করা যেত। টিম ম্যানেজমেন্টের সমালোচনা, বাইরের কথা অনেক সময় দলের উপর প্রবল চাপ তৈরি করে। যখন দল ভালো করে না বোর্ড, টিম ম্যানেজমেন্ট সবারই আরেকটু ভালো আচরণ করা যায়, দলকে সমর্থন যোগানো যায়। যখন দল ভাল করে তখন তো সমস্যা নেই, কিন্তু যখন দল খারাপ করে তখন সমর্থন খুব দরকার হয়।
আপনি এক জায়গায় বলেছেন খেলোয়াড়রা ভয়ভীতি নিয়ে খেলে। এটার প্রভাব দলের পারফরম্যান্স কতটা ছিল?
ডমিঙ্গো: যখন জায়গা হারানোর ভয় থাকে তখন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা যায় না। একজন খেলোয়াড়কে যদি প্রকাশ্যে সমালোচনা করা হয় তখন তার পক্ষে নির্ভার থাকা সম্ভব না। আপনাকে যদি ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হয় বুঝতে হবে সবার সব সময় পারফর্ম করা সম্ভব না, সফল হওয়া সম্ভব না। সারাক্ষণ ভয় নিয়ে থাকা একজন ক্রিকেটারকে ভয়ডরহীন মানসিকতায় রাখা কঠিন।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মাহমুদউল্লাহকে বাধ্যতামূলক বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নাটকীয়ভাবে শেষ ম্যাচে আবার তাকে এনে খেলানো হয়। এই সিদ্ধান্তটা কি ঠিক ছিল?
ডমিঙ্গো: জিম্বাবুয়েতে মাহমুদউল্লাহকে শুরুতে বাদ দেওয়ার পক্ষে আমি ছিলাম না। সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল না। নির্বাচকরা পাঁচজন ওপেনার দলে নিয়েছিল। দলে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ছিল না খুব বেশি। আমি মাহমুদউল্লাহকে দলে নেওয়ার পক্ষে ছিলাম। পরে যখন শেষ ম্যাচে তাকে নেওয়া হলো তখন আবার আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সে যদি ওই ম্যাচটা খেলতে না চাইত তাহলেও তাকে দোষারোপ করা যেত না। এটা ঠিক সিদ্ধান্ত না ভুল সিদ্ধান্ত আমি বলতে চাই না, কিন্তু এটা আদর্শ না।
সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথা হয় বাইরে। তাদের সঙ্গে এখন সম্পর্ক কোন পর্যায়ে?
ডমিঙ্গো: সিনিয়রদের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে বলব আমার দিক থেকে ভালো, এখন আগের চেয়েও ভাল। তাদেরকেও জিজ্ঞেস করতে পারেন। এখানে কিছু (সম্পর্কের) উঠা নামাও ছিল। গত তিন বছরে সিনিয়রদের সঙ্গে যে সম্পর্ক সেটাতে তারা বুঝে আমি কি করতে চেষ্টা করি, কোন পথে হাঁটছি। আমার মনে হয় এখন সম্পর্কটা ভালো জায়গায় আছে।
গত বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর পর হুটহাট অনেক অদল-বদল করা হয়। পরে আবার সেসব সিদ্ধান্তে অনড় থাকা হয়নি। বিশ্বকাপের পরে নেওয়া ভুল পরিকল্পনা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে দলকে?
ডমিঙ্গো: অনেক অদল-বদল হয়েছে কারণ বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্স ভাল ছিল না। বিশেষ করে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পারফরমান্স ভাল ছিল না, কিন্তু বুঝতে হবে দলগুলো ভালো। আর আমরাও সাকিব ও সাইফুদ্দিনকে পাইনি। শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জেতা উচিত ছিল। বিশ্বকাপের সময় ও পরে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটা দলের কাজে লাগেনি। কারণ এখন দলটা থিতু না। দলের খেলোয়াড়দের ভূমিকা পরিষ্কার না। নতুন ওপেনিং ব্যাটসম্যান আসছে, নতুন অধিনায়ক, কিছু ইনজুরি। সব মিলিয়ে একটা ট্রিকি অবস্থা। আশা করি আগামী কয়েক সপ্তাহে তারা সামলে উঠবে।
আর পরিকল্পনার বিষয়ে বলব দুনিয়ার সেরা পরিকল্পনাও কখনো কখনো কাজে নাও লাগতে পারে। দলের যখন ফল পক্ষে আসে না তখন অবশ্যই আপনি পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন
Comments