১৬১৯ গুণ বেশি দামে নাট-বল্টু কেনার গল্প

শেষ পর্যন্ত কাস্টমসের সচেতনতায় পণ্য খালাস করতে ব্যর্থ হয়ে বলেছে, ‘ভুল হয়েছে, পণ্যগুলো ভুলবশত আমদানি করা হয়েছে। এটা একটি মানবিক ভুল।’

যা হওয়া দরকার ছিল দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়, তা হয়ে গেছে হাসি রসিকতার বিষয়। এটা তাদের বড় রকমের কৃতিত্ব যে শাস্তি বা জবাবদিহির পরিবর্তে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে তারা মশকরায় পরিণত করতে পেরেছেন।

৫৩ বছর বয়সী বাংলাদেশের জন্য এটাও দুঃখের যে নাট-বল্টু-ওয়াশার এখনও বিদেশ থেকে কিনে আনতে হয়। আমরা এগুলো তৈরি করতে পারি না। আর কত দামের জিনিস কত দামে কিনে আনি? এমনই একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে আজকের দ্য ডেইলি স্টারে। সাংবাদিক মোহাম্মদ সুমন প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। বাংলাদেশে দুর্নীতি-অনিয়ম বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডগুলো যে কোন মাত্রায় পৌঁছেছে, এই প্রতিবেদনটি তার অতিক্ষুদ্র একটি নমুনা।

এক কেজি নাট-বল্টুর দাম ২ দশমিক ১৮ ডলার। ভারত থেকে ৬৮ কেজি নাট, বল্টু ও ওয়াশার আমদানি করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবিএল)। এর দাম হওয়ার কথা ছিল ১৪৮ ডলার বা ১৬ হাজার টাকা। সেটা আমরা কিনে এনেছি ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৫ ডলার বা ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা দিয়ে।

পিজিসিবিএলের চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিবিইএ কোম্পানি লিমিটেড ভারতের স্কিপার লিমিটেড থেকে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১ হাজার ৬১৯ গুণ বেশি দামে আমদানি করেছে এগুলো।

এত অধিক মূল্যে নাট-বল্টু আমদানি করায় মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুলেছে। পণ্য ছাড় করানোর জন্য পিজিসিবিএলের অধিক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। তাদের অসংলগ্ন, অসত্য ও পরস্পর বিরোধী বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হয়েছে।

কাস্টমসের চিঠির উত্তরে পিজিসিবিএলের প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাদত হোসেন প্রথমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে যে, পূর্বে যখন এসব পণ্য আমদানি করা হয়েছিল তখন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান পণ্য বেশি পাঠিয়েছিল। এখন কম পাঠিয়ে পূর্বের দামের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে; গড় মূল্য ঠিকই আছে।

এমন ছেলেমানুষি যুক্তি দিয়েছে, কিন্তু এলসি, ইনভয়েসের নথি জমা দিতে পারেনি। পণ্য ছাড় করানোর জন্য বহুবিধ প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করেছে। এমনকি পণ্য খালাস করানোর জন্য একজন সিঅ্যাণ্ডএফ এজেন্টও নিয়োগ দেয়।

শেষ পর্যন্ত কাস্টমসের সচেতনতায় পণ্য খালাস করতে ব্যর্থ হয়ে বলেছে, 'ভুল হয়েছে, পণ্যগুলো ভুলবশত আমদানি করা হয়েছে। এটা একটি মানবিক ভুল।'

তারপর বলেছে, ভারতীয় কোম্পানি ভুল করে দাম বেশি দেখিয়েছে।

পিজিসিবিএল যখন কোনোভাবেই পণ্যের চালান ছাড় করাতে পারেনি, তখন তারা চালানটি পুনরায় ভারতে রপ্তানি করার চেষ্টা চালাতে শুরু করে।

সামগ্রিকভাবে প্রতিবেদনটির তথ্য পর্যালোচনা করলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, পিজিসিবিএল ও চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পারস্পরিক যোগসাজশেই অধিক মূল্যে আমদানির ঘটনাটি ঘটিয়েছে। সেখানে অসৎ উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার।

উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কেনাকাটা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারে সাংবাদিক সুমনের আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, ১৪ হাজার ৫০০ টাকার দুটি পাইপ কাটার কেনা হয়েছিল ৯৩ লাখ টাকায়। ১ লাখ ৮২ হাজার টাকায় দুটি হাতুড়ি কেনা হয়েছিল, যার প্রকৃত মূল্য ছিল ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। সেখানেও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) কর্মকর্তারা হাস্যকর ও রসিকতাপূর্ণ যুক্তি দিয়েছিলেন।

ছয় প্রশ্ন এক উত্তর:

১. ১ হাজার ৬১৯ গুণ বেশি দামে নাট-বল্টু কেনার ঘটনায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পিজিসিবিএলের কারা বা কর্মকর্তাদের কতজন জড়িত, তা কি খুঁজে বের করা হবে?

২. অত্যধিক অধিক মূল্যে কেনা ও ধরা পড়ার পর চাপা দেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন কয়েক রকমের যুক্তিহীন হাস্যকর যুক্তি কেন দিলেন, তা কি জানার চেষ্টা করা হবে?

৩. কেনাকাটার এমন দু-একটি সংবাদ মাঝে মধ্যে প্রকাশিত হয়। অপ্রকাশিত থেকে যায় কত শত হাজার…?

৪. আদৌ কোনো তদন্ত হবে?

৫. মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাইপ কাটার ও হাতুড়ি কেনার ঘটনার কোনো তদন্ত হয়েছে বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাউকে জবাবদিহি বা শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে, এমন কোনো তথ্য জানা যায়নি।

এবং

৬. তারপরও কি আপনি আশা করবেন যে নাট-বল্টু কেনার ঘটনায় তদন্ত হবে, অপরাধী চিহ্নিত হবে, শাস্তি হবে?

 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago